পঞ্চায়েত সমিতির অতিথিশালায় থেকে তার ভাড়া না মিটিয়েও নির্দিষ্ট সরকারি খাত থেকে টাকা তোলার অভিযোগ উঠল রামপুরহাট ১ ব্লকের বিডিও আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে। অভিযোগ পেয়ে জেলাশাসককে ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্য সরকারের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের বিশেষ সচিব দিলীপ পাল। এ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত বিডিও বলেন, “ওই ঘরের ভাড়া দেওয়া হয়নি। তাড়াতাড়ি দিয়ে দেব।” জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, জেলাশাসকের থেকে নির্দেশ পেয়ে জেলাপরিষদের এগজিকিউটিভ অফিসার রামপুরহাটের মহকুমাশাসকের কাছে এ নিয়ে দ্রত একটি রিপোর্ট চেয়েছেন। যদিও রামপুরহাটের মহকুমাশাসক রত্নেশ্বর রায়-এর দাবি, “এখনও কোনও নির্দেশ আমার কাছে এসে পৌঁছয়নি। কী হয়েছে খোঁজ নিয়ে দেখব।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ২০১২ সালে রামপুরহাট থানার কুমড্ডা গ্রামের সাবের আলি তথ্য জানার অধিকার আইনে মহকুমাশাসক ও রামপুরহাট ১ ব্লকের যুগ্ম বিডিও-র কাছে তিনটি বিষয়ে জানতে চান। তাঁর অন্যতম জিজ্ঞাসা ছিল, রামপুরহাট ১ ব্লকের বিডিও বেতন ও ঘরভাড়া বাবদ রাজ্য সরকারের কাছ থেকে কত টাকা নেন এবং পঞ্চায়েত সমিতিকে সেই ঘরটির জন্য কত টাকা ভাড়া দেন। সাবের আলির দাবি, এ ব্যাপারে পরে তাঁকে জবাব দেন রামপুরহাট ১ ব্লকের যুগ্ম বিডিও মলয়কুমার ঘোষ। তিনি সাবেরকে জানিয়েছিলেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী অর্থ বিভাগের পিবি-৪এ (১৫,৬০০-৪২,০০০) নম্বর স্কেল অনুযায়ী বিডিও ঘরভাড়া-সহ বেতন পান। ওই ব্লকে বিডিও-র জন্য নির্দিষ্ট কোনও বাসস্থান না থাকায় এবং অন্য কোনও সরকারি বাসস্থান বরাদ্দ না থাকায়, আব্দুল মান্নান সাময়িক ভাবে পঞ্চায়েত সমিতির মৌখিক সম্মতি নিয়ে অতিথিশালায় বাস করেন। এ বিষয়ে অবশ্য পঞ্চায়েত সমিতিতে কোনও ‘রেজোলিউশন’ করা হয়নি বলে যুগ্ম বিডিও সাবেরকে জানান।
বৃৃহস্পতিবার সাবের বলেন, “ওই বিডিও পঞ্চায়েত সমিতিকে কোনও ঘরভাড়া দেননি, আবার সরকারের থেকে ওই খাতে টাকাও নিয়ে গিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে পুরো বিষয়টি নিয়ে ঘটনার ভিজিল্যান্স তদন্ত দাবি করে জেলাশাসককে চিঠি দিই। তার প্রতিলিপি পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরেও পাঠাই।” তাঁর আরও অভিযোগ, “নিজে থাকবেন বলে আব্দুল মান্নান পঞ্চায়েত সমিতির অতিথিশালাটিকে সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে ‘রি-মডেলিং’ করে সংস্কারও করেন।” এ বিষয়ে আব্দুলবাবুর অবশ্য যুক্তি, “ঘরটি বসবাস করার মতো অবস্থায় ছিল না। তাই কিছুটা সংস্কার করেছিলাম মাত্র। তবে যা করেছি পঞ্চায়েত সমিতির মৌখিক সম্মতিতেই করেছি।”
রামপুরহাট ১ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মহম্মদ নাজিমুদ্দিন বলেন, “বিডিও সাহেব আমার কাছে একবার জানতে চেয়েছিলেন, ঘরভাড়া বাবদ পঞ্চায়েত সমিতিকে কত দিতে হবে। তবে আমরা সে নিয়ে কোনও কিছু ঠিক করে তাঁকে বলতেও পারিনি।” রামপুরহাট ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সিপিএমের রুমকি চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বিডিও সাহেব থাকবেন, সেই কথা ভেবেই ওই অতিথিশালা দিতে আপত্তি করিনি। সাধারণসভায় কোনও আলোচনা দরকার বলেও মনে হয়নি।”
|
পঞ্চায়েতের মদতে ইন্দিরা আবাস যোজনায় বাড়ি না বানিয়েই টাকা তুলে নিয়েছেন বেশ কয়েকজন প্রাপক। দুবরাজপুরের বিডিও-র কাছে লক্ষ্মীনারায়ণপুর পঞ্চায়েত এলাকার কিছু বাসিন্দা এমনটাই অভিযোগ করেছেন। মোতাহার হোসেন, কেহেরুন বিবি, তাজ খানদের অভিযোগ, “ওই পঞ্চায়েত এলাকার ঘাট গোপালপুর ও লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকার ইন্দিরা আবাস প্রাপক লাল মহম্মদ, ভূবন বাগদি, কালোসোনা বাউড়ি-র মতো বেশ কয়েকজন ঘর না বানিয়েই প্রথম কিস্তির টাকা পেয়েছেন, কেউ বা দ্বিতীয় কিস্তির টাকা তুলেছেন নিয়েছেন।” যদিও স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান মহম্মদ ইসমাইল বলেন, “এমনটা হওয়ার কথা নয়।” অভিযোগ মানেননি প্রাপকেরাও। বিডিও কুণাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |