পঞ্চায়েত নির্বাচনে বামেদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের বাড়িতে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার রাতে কোচবিহারের দিনহাটা থানার বুড়িরহাট, বাসন্তীরহাট ও শালমারা এলাকার সিপিএম এবং ফরওয়ার্ড ব্লক কর্মী সমর্থকদের অন্তত ১০টি বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়েছে বলে জেলা বামফ্রন্টের দাবি। বাম কর্মী সমর্থকদের পরিবারের কয়েকজন মহিলাকে শারীরিক নিগ্রহও করা হয় বলে ফব-র এক পঞ্চায়েত সদস্যের স্ত্রী অভিযোগ দায়ের করেছেন। বিষয়টি নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনেও অভিযোগ করা হয়েছে বলে ফব সূত্রে জানানো হয়েছে। সিপিএমের তরফেও ওই এলাকায় দলের কর্মী সমর্থকদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ জানানো হয়েছে। যদিও তৃণমূল ওই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে। কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জয়সওয়াল বলেন, “অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।”
ফব-র অভিযোগ, দিনহাটা ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি খগেশ্বর বর্মন সম্প্রতি সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তারপর থেকেই এলাকায় বাম কর্মী সমর্থকদের ওপরে সন্ত্রাস শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার রাতেও তাঁর নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি ফব-র। সিপিএমও ওই এলাকাতে তৃণমূলের বাইক বাহিনী তাণ্ডব চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে। সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদক তারিণী রায় বলেন, “কোনও বাম দলকে সমর্থন করা যাবে না, দলের হয়ে প্রার্থী হওয়া যাবে না বলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে।” ফব-র রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষের বক্তব্য, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এত দিন যে ভাবে দেখেছি, তাঁর দলের হাতে নেতাজির পার্টি আক্রান্ত! নির্বাচন সংক্রান্ত রায় ঘোষণা হওয়া মাত্র দিনহাটা, মেখলিগঞ্জে তৃণমূলের বাইক বাহিনী ছড়িয়ে পড়েছে। ওরা জানে বাহিনী দিয়ে ভয় না দেখালে ওখানে বামপন্থী শক্তিকে প্রতিহত করা যাবে না। পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে। এই জন্যই কেন্দ্রীয় বাহিনী দরকার।”
ফব-র কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ জানান, মঙ্গলবার পঞ্চায়েত ভোট সংক্রান্ত আদালতের রায় ঘোষণার পর বুড়িরহাট-১ এবং ২, নাজিরহাট-১ এবং ২ অঞ্চলে তাঁদের দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে তৃণমূল। তিনি বলেন, “বাম সমর্থকদের বাড়ির মহিলাদেরও নিগ্রহ করা হয়েছে। সমর্থকদের দু’মাস বাড়ি থেকে বের হওয়া যাবে না বলে শাসানি দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের কাছে পুরো বিষয়টি জানিয়েছি।”
তৃণমূল অবশ্য হামলা বা হুমকির অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছে। দলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “দিনহাটাতেও বামেদের সংগঠন ছেড়ে দলে দলে মানুষ আমাদের দলে আসছেন। সে কারণেই হতাশা থেকে নির্বাচন বিঘ্নিত করতে ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হচ্ছে। মানুষ নির্বাচনেই এর জবাব দেবেন।” যাঁর নেতৃত্বে হামলার অভিযোগ উঠেছে, খগেশ্বরবাবু বলেন, “নিজেরা বাড়ি ভাঙচুর করে তৃণমূলের নামে মিথ্যে মামলা করা হয়েছে। এটাই বামপন্থীদের পুরানো প্রবণতা। আমার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হচ্ছে। তদন্তে সব স্পষ্ট হবে।”
মেখলিগঞ্জের বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী পরেশ অধিকারী জানান, গত ৬ মে তাঁরা পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করে আগাম আর্জি জানিয়েছিলেন শাসক দলের হামলার মুখে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য। তিনি বলেন, “প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন উঠেছে। এই ভাবে চললে নির্বাচন তো প্রহসনে পরিণত হবে।” |