মালদহের গম্ভীরা গানকে হাতিয়ার করে গ্রামের মানুষের কাছে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের প্রচার শুরু করেছিল জেলা প্রশাসন। তাতে খুব ভাল সাড়া মেলায় জেলা প্রশাসন ১৪৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতে গম্ভীরা গানের মাধ্যমে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প ছাড়াও সমস্ত সরকারি প্রকল্পের কথা তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এদিকে হারাতে বসা এই লোক সংস্কৃতির ব্যবহার খুশির হাওয়া গম্ভীরা দলগুলির মধ্যে। জেলার সবচেয়ে প্রাচীণ গম্ভীরা দল কুতুবপুর গম্ভীরা’র কর্ণধার প্রশান্ত শেঠের কথায়, “সরকারি প্রকল্পের সচেতনার জন্য গম্ভীরাকে ব্যবহার করায় দুটি লাভ হবে। মানুষের মধ্যে গান থাকছে। শিল্পীরা বেঁচে যাবেন।
জেলাশাসক গোদালা কিরণ কুমার বলেন, “এত দিন গ্রামে গ্রামে মিটিং করে আমরা যা করতে পারিনি, গম্ভীরা গান তা করে দেখাচ্ছে। গানের মাধ্যমে এত সহজে ১০০ দিনের কাজসহ সরকারি প্রকল্পের সুবিধা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যাবে, ভাবতে পারিনি।” অন্য সরকারি প্রকল্পে প্রচার বা শিবিরে এই গান ব্যবহার করা হবে বলে জেলাশাসক জানিয়েছেন। |
গম্ভীরা গান এখনও কতটা জনপ্রিয় তা টের পেয়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। ৮ মে হবিবপুরে প্রশাসনের উদ্যোগে সরকারি প্রকল্পের সচেতনা শিবির হয়। সেখানে জেলাশাসক, জেলা পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে রাজ্যের দুই মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র এবং কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী হাজির ছিলেন। প্রথমে লোকসমাগম দেখে হতাশ হয়ে পড়েন প্রশাসনের কর্তারা। কিন্তু গম্ভীরা গানের বাজনা শুরু হতেই গ্রামের মানুষে হুড়মুড় করে জড়ো যান শিবিরে। নিমিষের মধ্যে গোটা এলাকা ভিড়ে ভরে যায়। তার পরেই ঠিক হয়, সম্ভব হলে সরকারি প্রকল্পের প্রচারে প্রায় সর্বত্র গম্ভীরার ব্যবহার হবে।
মালদহে খাতায়কলমে ১৫টি গম্ভীরা দল রয়েছে। বৈশাখে পাড়ায় পাড়ায় গম্ভীরা গান হত। এক সময় গম্ভীরার প্রবাদপুরুষ মটরবাবু ও নিরুবাবুর গান শুনতে সারা বছর মানুষ অপেক্ষা করে থাকতেন। পরবর্তীকালে গোবিন্দ শেঠ ও গোপীনাথ শেঠ, দুই ভাইয়ের গম্ভীরা দল কুতুবপুর জনপ্রিয় হয়ে উঠে। এখন সে দলকে ধরে রেখেছেন প্রশান্ত শেঠ।
শিল্পীরা জানান, খুব কম বরাতে গম্ভীরা দলকে টিকিয়ে রাখা খুবই কঠিন ছিল। শিল্পীদের মধ্যে কেউ কাঠ মিস্ত্রি, কেউ মাছ বিক্রেতা কেউ বা চাষি। কুতুবপুর গম্ভীরা দলের প্রধান প্রশান্ত শেঠ ব্যাঙ্কের ডেইলি টাকা সংগ্রাহক। পেটের টান, গম্ভীরা সংস্কৃতিকে বাঁচাতে সরকারি প্রকল্পের শিবিরে ছুটে গেলেও গম্ভীরা গানের আসল বৈচিত্র্য হারিয়ে যাওয়ার আক্ষেপ আছে শিল্পীর মনে।
শিল্পী প্রশান্ত শেঠ বলেন, “গম্ভীরা গান মানেই শুরুতেই শিবের বন্দনা। শিবকে ডেকে দুর্দশা বলা, বেকার সমস্যা থেকে শুরু করে হাসপাতালের অব্যবস্থা, শিক্ষায় অরাজকতা, সমাজে সমস্ত ক্ষেত্রে নানা দুর্নীতির কথা হাসির মাধ্যমে তুলে ধরা হয়।” তিনি জানান, গম্ভীরায় প্রশংসা আর সমালোচনা হয়। এখন তা কম হওয়ায় গম্ভীরার আকর্ষণ কমছে। তবে প্রশাসন এগিয়ে আসায় কিছুটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে। |