|
|
|
|
পদত্যাগের ইচ্ছাপ্রকাশ নেতার |
কেশপুরে চাকরির নামে টাকা চাওয়ায় অভিযুক্ত শাসক দল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কেশপুর |
পদটি স্থায়ী নয়। বছরে বড়জোর ১৫-২০ দিন কাজ মিলবে। বেতনও সামান্য, দিনে ১৪১ টাকা। সিভিক পুলিশের এই চাকরির জন্যও স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের ৩০-৫০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে বলে অভিযোগ উঠল কেশপুরে। টাকা ফেরত চেয়ে কিছু যুবক স্থানীয় নেতাদের কাছে দরবার শুরু করায় তৃণমূল নেতৃত্বের অস্বস্তিও বেড়েছে। তাঁদের মধ্যে চাকরি পাওয়া এবং না পাওয়াদু’দলই আছেন।
এই পরিস্থিতিতে পদত্যাগের ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন তৃণমূলের কেশপুর ব্লক সভাপতি তপন চক্রবর্তী। তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নামে টাকা চাওয়ার অভিযোগগুলি জমা পড়েছে তাঁর কাছেই।
দলের শীর্ষ নেতা মুকুল রায়, সুব্রত বক্সী, শুভেন্দু অধিকারী এবং তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়কে পাঠানো চিঠিতে তপনবাবু লিখেছেন, ‘কিছু অঞ্চল সভাপতি সরাসরি দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। এতে সংগঠনের প্রচণ্ড ক্ষতি হচ্ছে। এঁদের বিরুদ্ধে জোরালো ব্যবস্থা না নিলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এঁদের অবিলম্বে দল থেকে বহিষ্কার করা প্রয়োজন। নচেত আমি পদত্যাগ করতে চাই।’ সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে অবশ্য তপনবাবু বলেন, “যা জানানোর, দলকে জানিয়েছি।” |
|
সাংসদ তথা যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি শুভেন্দু অধিকারী বিষয়টি জানেন না বলে দাবি করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “যদি ওই ব্লক সভাপতির কিছু বলার থাকে উনি জেলা সভাপতিকে জানাবেন।” তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীও বলেন, “দলের একটা নিয়ম আছে। জেলা সভাপতি বিষয়টি আমাকে জানাবেন। পরে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” তৃণমূল জেলা সভাপতি দীনেন রায় যদিও বলেন, “বিষয়টি জানি না।”
ইতিমধ্যে জেলার ডেবরা, সবং ও লালগড় থেকে দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে তোলাবাজি, স্বজনপোষণ দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে তৃণমূলেরই একাংশ। অভিযোগ গিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও। এ বার কেশপুরেও একই রকম ঘটনা ঘটায় স্পষ্টতই অস্বস্তিতে জেলা তৃণমূল। পরিস্থিতি সামলাতে দলের তরফে কেশপুরে লিফলেট বিলি শুরু হয়েছে।
জেলা তৃণমূল সভাপতি দীনেন রায় এবং কেশপুর ব্লক সভাপতি তপন চক্রবর্তীর সই করা লিফলেটে অবশ্য লেখা হয়েছে, ‘সিপিএমের কিছু মানুষ তৃণমূল দলকে কলঙ্কিত করতে তৃণমূলের ভেতরে ও প্রশাসনের মধ্যে ঢুকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা-পয়সা আদায়ের খেলায় মেতে উঠেছে। কেউ কিছু পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে টাকা চাইলে তার বিরুদ্ধে গর্জে উঠুন। উপযুক্ত প্রমাণ-সহ থানায় অভিযোগ করুন।’ কেশপুরের সিপিএম বিধায়ক রামেশ্বর দলুইয়ের প্রতিক্রিয়া, “এর আগে রেলে চাকরির নামেও টাকা তুলেছে তৃণমূলের লোকজন। মানুষ এখন সব বুঝছেন। তাই সব সামনে আসছে।”
তৃণমূল ব্লক সভাপতির কাছে করা অভিযোগে রাজগ্রামের শিশির মণ্ডল, বেগুনবাড়ির রাজকুমার দলুইরা দাবি করেছেন, সিভিক পুলিশের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে তৃণমূলের শিরসা অঞ্চল সভাপতি রাম সানি টাকা নিয়েছেন। রাজকুমার ৫ হাজার টাকা, অন্যেরা ৩০ হাজার টাকা করে দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন এবং সকলেই টাকা ফেরত চেয়েছেন। মঙ্গলবার বহু চেষ্টা করেও রামবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। মোবাইল বেজে গেলেও ধরেননি তিনি।
সিভিক পুলিশে চাকরি পেয়েছেন এমন কিছু যুবকও এখন ব্লক সভাপতির কাছে টাকা ফেরত পাওয়ার ব্যবস্থা করতে আর্জি জানিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, “দল যেখানে লিফলেট দিয়ে জানাচ্ছে, টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়ার কোনও ব্যাপার নেই, তাহলে আমরা কেন টাকা দিলাম?” |
|
|
|
|
|