বৈশাখী ঝড়ে উপড়ে পড়েছিল বহু গাছ। বন্ধ হয়েছিল রাস্তা। কিন্তু সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে শহরবাসীর চোখ কপালে। দেখা যায়, আগের দিনের প্রলেয় চিহ্ন বিশেষ নেই। পথ দিব্যি সাফসুতরো। গাছপালা আর পড়ে নেই। অথচ, পুরসভা রাস্তা থেকে গাছ সরানোর কাজে হাতই লাগায়নি।
দুর্গাপুর ইস্পাত টাউনশিপে গাছ কেটে পাচারের চক্র বেশ সক্রিয়, এমন অভিযোগ আগেও উঠেছে। এই ঘটনার পরে নড়েচড়ে বসেছে পুরসভা। নানা সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে বৃক্ষরোপণের কর্মসূচি নিয়েছে দুর্গাপুর পুরসভা। শহর জুড়ে গাছ লাগানো হচ্ছে। রবিবার বিকেল থেকে যে প্রবড় ঝড় বয়ে যায়, তাতে উপড়ে পড়ে অসংখ্য গাছ। আড়াআড়ি গাছ পড়ে অনেক রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। পুরোপুরি না ভাঙলেও নুইয়ে পড়ে বহু গাছ। সোমবার সকালে দেখা যায়, পড়ে যাওয়া সব গাছ লোপাট। রেহাই পায়নি নুইয়ে পড়া গাছও। গোড়া থেকে কেটে গুঁড়ি, ডালপালা নিয়ে চম্পট দিয়েছে চোরেরা। কেউ কিছু বোঝার আগেই রাতের অন্ধকারে উধাও কয়েকশো গাছ। পুরসভার হিসেব অনুযায়ী, কয়েক কোটি টাকা মূল্যের গাছ চুরি গিয়েছে। দুর্গাপুরের মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায় বলেন, “কিছু বোঝার আগেই দুষ্কৃতীরা গাছগুলি সরিয়ে ফেলেছে। ভবিষ্যতে সতর্ক থাকতে হবে।” |
পড়ে রয়েছে কাটা গাছ। —নিজস্ব চিত্র। |
গত কয়েক বছর ধরে দুর্গাপুর ইস্পাত টাউনশিপ জুড়ে বেআইনি ভাবে গাছ কেটে পাচারের একটি চক্র দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ। বহু পুরনো শাল-সেগুন গাছ তো ছিলই, কারখানার কর্মীরাও নিজেদের আবাসন চত্বর বা আশপাশে অনেক নতুন গাছ লাগিয়েছিলেন। টাউনশিপের বাসিন্দাদের অভিযোগ, গাছের চোরাচালান চক্র দিনের পর দিন সে সব গাছ কেটে ফাঁকা করে দিচ্ছে। পুরো গাছ এক সঙ্গে পাচার করতে না পারলে ধাপে ধাপে ডাল কেটে, পরে গুঁড়ি সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, ঝড়ের পরে রবিবার সেই চক্রই সক্রিয় হয়ে রাতের অন্ধকারে অসংখ্য গাছ কেটে নিয়ে পালায়। শহরের বি-জোনের বাসিন্দা রণদীপ বসু বলেন, “দূষণনগরী হিসেবে পরিচিত আমাদের শহর। সেখানে এ ভাবে এক রাতে এত গাছ কমে গেল। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হল, প্রচুর ক্ষতি হল।” একই অভিযোগ তুলেছেন দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক তথা ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যসোসিয়েশনের রাজ্য সহ-সভাপতি মিহির নন্দীও। তাঁর কথায়, “দূষণ থেকে বাঁচার বড় উপায় গাছ লাগানো। সেখানে এ ভাবে বৃক্ষনিধন খুবই উদ্বেগের।”
বন দফতর জানিয়েছে, অনুমতি ছাড়া গাছ বা গাছের ডালপালা কাটা যায় না। তবে শহরজুড়ে নজরদারি চালানোর পরিকাঠামো বন দফতরের নেই। গাছ কাটার পরে খবর আসে। তত ক্ষণে দুষ্কৃতীরা উধাও হয়ে যায়। হাতেনাতে ধরা না গেলে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। এই সমস্ত কাঠ সরাসরি চলে যায় বেআইনি করাতকলে। তাই অবৈধ করাতকল বন্ধ করে কাঠ মাফিয়াদের নিয়ন্ত্রণ করতে চায় বন দফতর। দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “ইতিমধ্যেই আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে প্রায় শ’খানেক অবৈধ করাতকল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলির বিরুদ্ধেও শীঘ্র ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
|
সাঁইথিয়া-অন্ডাল রেললাইনে পরিহারপুরের কাছে মঙ্গলবার ট্রেনের ধাক্কায় সাতটি গরুর মৃত্যু হয়েছে। |