সম্পাদকীয় ১...
আগুন লইয়া খেলা
সারদা গোষ্ঠীর ন্যায় ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থা কেন পশ্চিমবঙ্গে এমন ব্যাপক এবং গভীর বিস্তৃতি পাইল, এত দিনে তাহার কারণগুলি স্পষ্ট। এই রাজ্যে মানুষ তাহাদের সামান্য রোজগারেরও একটি অংশ সঞ্চয় করিতে ইচ্ছুক, কিন্তু সেই টাকা রাখিবার উপযুক্ত পাত্রের অভাব। ব্যাঙ্কগুলি গ্রামাঞ্চলে বাণিজ্য বিস্তারে আগ্রহী নহে। যে ব্যাঙ্কগুলি এখনও আছে, সেখানেও নিয়মকানুনের দাপটে প্রায়-নিরক্ষর মানুষরা ত্রস্ত। কেন্দ্রীয় সরকার ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পে উত্‌সাহ হারাইয়া ফেলিয়াছে। ফলে, মানুষের নিকট বিকল্প বলিতে ছিল সারদার ন্যায় জালিয়াত সংস্থাগুলিই। তাহাতে যে বিপদ অনিবার্য ছিল, তাহাই ঘটিয়াছে। এই বিপদের পুনরাবৃত্তি কী উপায়ে আটকানো সম্ভব? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলিলেন, রাজ্য সরকারই এই বার ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্প আরম্ভ করিবে। তাঁহার এই ঘোষণার অর্থনৈতিক ভিত্তি কী, মুখ্যমন্ত্রী স্বভাবতই জানান নাই। অনুমান, তিনি নিজেও এখনও জানেন না। তবে, তাঁহার প্রস্তাবটি সম্পূর্ণ অবাস্তব নহে। পশ্চিমবঙ্গে ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের ভাণ্ডারটি ক্ষুদ্র নহে। সেই টাকা কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষুদ্র সঞ্চয় তহবিলে না ঢালিয়া নিজের হাতে রাখিবার চেষ্টা তিনি করিতেই পারেন। কিন্তু তাহাতে কেন্দ্রীয় তহবিল হইতে সহজ শর্তে ঋণ করিবার পথটি বন্ধ হইয়া যাইবে। সেই ঝুঁকি লইতে তিনি প্রস্তুত কি?
কিন্তু তাহা পরের কথা। মূল প্রশ্ন হইল, যেখানে কেন্দ্রীয় সরকার ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পকে আকর্ষক রাখিতে পারিতেছে না, সেখানে রাজ্য সরকার তাহা কী উপায়ে পারিবে? কেন্দ্রীয় ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পগুলির অবস্থা চিরকাল এমন ছিল না। এক সময় তাহাতেও বাত্‌সরিক ১২ শতাংশ হারে সুদ পাওয়া গিয়াছে। আজ সেই সুদের হার এমন তলানিতে আসিয়া ঠেকিয়াছে একটিই কারণে ভারতীয় অর্থনীতির স্বাস্থ্যভঙ্গ হইয়াছে। এমন নহে যে কেন্দ্রীয় সরকারের আর ক্ষুদ্র সঞ্চয়জাত তহবিলের প্রয়োজন নাই। কেন্দ্রীয় সরকার এখনও সঞ্চয়ের হার বাড়াইতে ব্যাকুল। কিন্তু আজ আর বিনিয়োগের সেই লাভযোগ্যতা নাই যাহাতে পূর্বের সুদের হার ধরিয়া রাখা যায়। কেন্দ্রীয় সরকার তাহার যাবতীয় আর্থিক শক্তি সত্ত্বেও যে কাজ করিতে ব্যর্থ হইল, পশ্চিমবঙ্গের শূন্য রাজকোষের ভরসায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাহা কী উপায়ে সম্ভব করিবেন? রাজ্য সরকার কোথায়, কী ভাবে অর্থ বিনিয়োগ করিবে, যাহাতে মুখ্যমন্ত্রী তাঁহার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করিয়া আকর্ষক সুদ দিতে পারেন? এই প্রশ্নগুলির উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত তাঁহার সিদ্ধান্তকে হঠকারী বলা ভিন্ন উপায় নাই। তাঁহাকে স্মরণ করাইয়া দেওয়া যাক, বিষয়টি ছেলেখেলা নহে। অর্থনীতির যুক্তি ভুলিয়া রাজনীতিতে মন ঢালিয়া দিলে কিন্তু আরও বড় বিপদ তাঁহার অপেক্ষায় থাকিবে।
তাঁহার দুই বত্‌সরের প্রশাসক-জীবন দেখিলে আশঙ্কা হয়, এই সিদ্ধান্তটিও নিতান্তই রাজনীতিতাড়িত। তিনি গোড়াতেই বলিয়া রাখিয়াছেন, প্রয়োজনে ভর্তুকি দেওয়া হইবে। সেই টাকা কে জোগাইবে, তাহা অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী বলেন নাই। যে চিন্তার গোড়াতেই ভর্তুকির গোঁজামিল থাকে, তাহার সম্বন্ধে সাবধান হওয়া বিধেয়। দ্বিতীয় প্রশ্ন, ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি যে টাকা তুলিবেন, তাহা লইয়া করিবেন কী? আশঙ্কা হয়, আর পাঁচটি খাতের টাকা তিনি যে ভাবে ব্যয় করিয়া অভ্যস্ত, এই ক্ষেত্রেও তাহার ব্যতিক্রম হইবে না। অর্থাত্‌, টাকা জনমোহনে, পাঠান্তরে ক্লাবে-ক্লাবে, যাইবে। ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থাগুলি ডুবিয়াছে, কারণ তাহারা যে টাকা সংগ্রহ করিয়াছিল, তাহার কোনও উত্‌পাদনশীল বিনিয়োগ হয় নাই। ফলে, সেই টাকা উদ্বৃত্ত মূল্য উত্‌পাদন করে নাই। মুখ্যমন্ত্রী যদি তাঁহার প্রকল্পের টাকা বিলি করিয়া বেড়ান, তাহা সুদীপ্ত সেনের কীর্তি অপেক্ষা কিছুমাত্র পৃথক হইবে না। স্বভাবতই ফলও অভিন্ন হইবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্যমন্ত্রিত্বের দুই বত্‌সর এই আশঙ্কাগুলির জন্ম দিয়াছে। আশঙ্কাগুলিকে মিথ্যা প্রমাণ করিবার দায়িত্বও তাঁহার। ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পের প্রেক্ষিতে তাঁহার কাজটি দ্বিগুণ কঠিন। কারণ, এই পথে হাঁটা আসলে আগুন লইয়া খেলা। তিনি ব্যর্থ হইলে শুধু তাঁহার হাতই পুড়িবে না, রাজ্যের কপালও পুড়িবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.