পুরভোটের এখনও ঢের দেরি। কিন্তু ইতিমধ্যে বাজার গরম করতে নেমে পড়েছেন তৃণমূলের এক কাউন্সিলর।
বর্ধমান ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর খোকন দাস বর্ধমান শহরে পরিচিত মুখ। তাঁর নিজের ওয়ার্ড এ বারে তফসিলি জাতির প্রার্থীর জন্য সংরক্ষিত হয়ে পড়ায় তিনি পড়েছেন বিপাকে। এমতাবস্থায় তিনি নিজেই ঘোষণা করে দিয়েছেন, “আমি পাশের ২৩ নম্বর থেকে ভোটে দাঁড়াবো। ওই ওয়ার্ডেই তো আমার বাড়ি!”
শুধু ঘোষণা করাই নয়, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের উন্নয়নের নানা বিষয় নিয়ে এখন থেকেই মাথা ঘামাতে শুরু করেছেন তিনি। নিজের কৃতিত্বের পরিসংখ্যান তুলে ধরে ২৪ পাতার বইও ছাপিয়েছেন। কাউন্সিলর হিসেবে তিনি কী কী কাজ করেছেন, তারই খতিয়ান রয়েছে সেখানে। একেবারে শেষ পাতায় কমলা ও সবুজের মাঝে সাদা ফুলের ছবি। তার সঙ্গে মানিয়ে সাদা পাঞ্জাবিতে হাতজোড় করে খোকনবাবু। ছবির উপরে লেখা, ‘আসন্ন ত্রিস্তর পঞ্চায়েত, পৌরসভা, লোকসভা, বিধানসভা-সহ প্রতিটি নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দিয়ে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন সার্থক করে তুলুন।’
তৃণমূল নেতাদের অনেকেই কিন্তু এই ঘটনায় বিরক্ত। বর্ধমান পুরসভার বিরোধী দলনেতা সমীর রায় বলেন, “দলের এক শ্রেণির নেতা তলায়-তলায় ঠিক করে ফেলতে চাইছেন, কে কোথায় দাঁড়াবেন। তাই হয়তো খোকনবাবু উৎসাহিত হয়ে পড়ে ২৩ নম্বরে দাঁড়ানোর কথা বলছেন। তবে এতে দলের রাজ্য নেতাদের কোনও অনুমোদন নেই। উনি ভোটের প্রচারের জন্য একটি বই ছাপিয়েছেন বলেও শুনেছি। সেই বই হাতে পেলে দলের রাজ্য নেতাদের কাছে পাঠিয়ে সুবিচার চাইব।” |
দলের অন্যতম জেলা পরিদর্শক অলোক দাস বলেন, “পুরভোট এখনও অনেক দেরি। প্রার্থী নিয়ে দলে কোনও আলোচনাই হয়নি এখনও। এই অবস্থায় কারও এই ধরনের আচরণ বাঞ্ছনীয় নয়। কেন উনি এটা করলেন, খোঁজ নেওয়া হবে।” দলের আর এক রাজ্য নেতার প্রশ্ন, খোকনবাবুকে যে আদৌ টিকিট দেওয়া হবে, সেটা কি তিনি ধরে নিয়েছেন? দলের হয়ে ভোটের প্রচারই যদি চালাতে চান, বইয়ে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি না দিয়ে নিজের ছবি ছাপিয়েছেন কী? আর এক নেতা বলেন, “এই কাজের জন্য খোকনবাবুর কৈফিয়ত তলব করা হবে।”
খোকনবাবু অবশ্য দাবি করছেন, “দলেরই এক নেতা বলেছেন, আমি ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে দাঁড়াব।” তবে কে সেই নেতা, তা তিনি খোলসা করেননি। তিনি দলে যাঁর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত, সেই মন্ত্রী তথা বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় স্পষ্টই বলেন, “পুরভোটে কে কোথায় দাঁড়াবেন, তা এখনও ঠিক হয়নি।” কিন্তু খোকনবাবুর নিজের ছবি ছাপিয়ে দলের হয়ে ভোট চাওয়া বা ২৩ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে মাথা ঘামানোয় তিনি দোষের কিছু দেখছেন না। মন্ত্রী বলেন, “উনি তো নিজের ওয়ার্ডের কাজের পরিসংখ্যানও দিয়েছেন। যে কাজ করতে পারেননি, তার কারণও জানিয়েছেন। এতে দোষ কী?”
ঘটনা হল, যদি শেষমেশ খোকনবাবু ২৩ নম্বরের টিকিট পানও, লড়াইটা সহজ হবে না। ২০০৮ সালে তিনি ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে ৫৩.২৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। ২৪ নম্বর জিতেছিল সিপিএম। ২০১১ সালে পরিবর্তনের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল এগিয়ে যায় সিপিএমের চেয়ে, কিন্তু মাত্র ৩৫ ভোটে। ফলে ওই ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থীর কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়ার সম্ভাবনাই প্রবল। অথচ নিজের ওয়ার্ড হাতছাড়া হওয়ার পরে খোকনবাবুর আর যাওয়ারও জায়গা নেই। সেই কারণেই, যে ওয়ার্ডে তাঁর বাড়ি সেখানে জনসংযোগের কাজ শুরু করেছেন বলে তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর ব্যাখ্যা।
বর্ধমানের পুরপ্রধান তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আইনূল হকের দাবি, “শহরের ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ওই ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের সমস্ত কাজই করেছে পুরসভা। খরচের পরিমাণ প্রায় দু’কোটি টাকা।” তাঁর খোঁচা, “খোকনবাবু নিজের কৃতিত্ব দাবি করে বই ছাপিয়েছেন। ওই বই ছাপানোর টাকা কি উনি নিজে দিয়েছেন?” খোকনবাবুর দাবি, “কুপন ছাপিয়ে মানুষের থেকে চাঁদা তুলে দেড়শো বই ছাপিয়েছি। কিছু বিলিও করেছি। জানাতে চেয়েছি, এত দিনে কী করলাম। আশা করি, ওঁরা আমায় ঠিকই বুঝবেন।” |