তৃণমূলের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার জনতার মুখোমুখি হতে চাইছে না, এই প্রচারেরই তীব্রতা প্রতিদিন বাড়াচ্ছে বিরোধীরা। পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের স্থগিতাদেশের আর্জি সোমবার ডিভিশন বেঞ্চে খারিজ হয়ে যাওয়ার পরেও একই সুর বজায় রেখেছেন সিপিএম এবং কংগ্রেস নেতৃত্ব।
বস্তুত, পঞ্চায়েত-জটিলতা নিয়ে মুখ খুলেছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটও। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে দিল্লিতে এ দিন কারাট বলেছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার পঞ্চায়েত ভোট আটকানোর সব রকম চেষ্টা করছে। হাইকোর্টও রাজ্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষেই রায় দিয়েছে। তা সত্ত্বেও তৃণমূল এই রায়ের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়ে ভোটে দেরি করতে চাইছে। ফ্রন্ট ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে প্রচার শুরু করেছে, যাতে নির্বাচন সময়মতো হয়। আমরা চাইব, রাজ্য সরকার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করেই ভোট করুক।”
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুও কলকাতায় বলেন, “বারবার ৩৪ বছরের সঙ্গে এই সরকারের তুলনা হচ্ছে। তা কখনও হয়? আমরা সাত বার পঞ্চায়েত ভোট করেছি। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংঘাত হয়েছিল বলে কখনও কেউ টেরই পায়নি!”
তৃণমূলের নির্বাচনে অনীহার সঙ্গে সারদা-কাণ্ডকে এখন জুড়ে দিয়ে আক্রমণের ধার বাড়াতে চাইছে বিরোধীরা। কারাট যেমন এ দিন বলেন, “তৃণমূল কার্যত সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে যৌথ ব্যবসা চালাচ্ছিল! সারদার বিভিন্ন ব্যবসায় তৃণমূল নেতৃত্ব, দলের সাংসদদের জড়িত থাকার কথা সকলেই জানে। সারদা গোষ্ঠীর সংবাদমাধ্যমে তৃণমূল সাংসদেরা ছিলেন, এটাও অজানা নয়।” সিপিএম নেতৃত্ব বোঝাতে চাইছেন, সারদা-কাণ্ডের জেরে গ্রামবাংলার গরিব মানুষের ক্ষোভ তাদের বিরুদ্ধে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই এখন পঞ্চায়েত ভোট পিছনোর জন্য আরও মরিয়া হয়ে উঠেছে শাসক শিবির।
কারাটের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের প্রথম সারির এক নেতা বলেছেন, “উনি আগে আলিমুদ্দিনে খোঁজ নিন! ৩৪ বছরের বাম জমানায় কাদের সঙ্গে চিট ফান্ড কর্তাদের ওঠাবসা ছিল, জেনে নিন! মৌলালি থেকে মাদার হাউস পর্যন্ত সিপিএমের এতগুলো বাড়ি কৌটো নাড়িয়ে হয়েছে কি না, সেই জবাব আগে দিন!” ভোট পিছনোর অভিযোগ খারিজ করে তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, তাঁরা অনেক আগেই গত বছর নভেম্বরেই ভোট সেরে নিতে চেয়েছিলেন। সেইমতো প্রশাসনিক প্রস্তুতিও জারি ছিল। এখন বিরোধীরা উল্টো কথা বলে হইচই করছে! যদিও বিরোধীদের যুক্তি, পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী বোর্ডের মেয়াদ ফুরনোর আগে নির্বাচন হলেও নতুন বোর্ড দায়িত্ব নিতে পারত না। তাই নির্ধারিত সময়ের আগে নভেম্বরে ভোট করার প্রশ্ন অযৌক্তিক।
পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে টানাপোড়েনের প্রশ্নে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য এ দিন বলেছেন, “রাজ্য সরকার যদি সময়ে ভোট করতে না পারে, তার পরিণাম সামলাতে হবে তাদেরই! এমনকী, সে ক্ষেত্রে সরকার তারা চালাতে পারবে কি না, তা নিয়েও সংশয় আছে! তবে আদালত শেষ পর্যন্ত কী বলে, তা দেখে আমাদের মতামত জানাব।”
কারাট এ দিন দাবি করেছেন, পঞ্চায়েত ভোটের জন্য বামফ্রন্টের শরিকদের মধ্যে আসনবণ্টন নিয়ে আলোচনা চলছে। এমনকী, দলের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফ্রন্টের মধ্যে প্রশ্নের মুখে পড়ে আরএসপি নেতৃত্বও এ দিন জানিয়েছেন, তাঁরা আসলে বামফ্রন্টকে আরও প্রসারিত করার কথা ভাবছেন। সিপিএমকে বাইরে রেখে কিছু করার কথা এখনই ভাবছেন না। বাম শরিকদের নিয়ে যৌথ ভাবেই তৃণমূলের আক্রমণ মোকাবিলা করার কথা বলছেন সিপিএম নেতৃত্বও।
তবে পঞ্চায়েতের আগে সিপিএমকে হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে। সেই উপলক্ষে এ দিন হাওড়ায় সাধারণ সভায় গিয়ে বিমানবাবু বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সুরে পরামর্শ দেন, হারানো জনসমর্থন ফিরে পেতে মানুষের কাছে বিনীত ভাবেই ফিরে যেতে হবে। এ ছাড়া কোনও রাস্তা নেই। দলের অন্দরে তাঁর বক্তব্য, তৃণমূল জমানার ২৩ মাসে যা হয়েছে, লোকে দেখছে। তাতে বামেদের ‘আত্মতুষ্টির কারণ’ নেই। যে মানুষ সরে গিয়েছেন, তাঁদের ফেরানোই বামেদের লক্ষ্য হওয়া উচিত বলে বিমানবাবুর মত।
|