মাদক পাচারের অভিযোগে ছেলেরা জেল খাটছে। তবে ছেলেদের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ সত্য নয়। পুলিশ তাদের ফাঁসিয়ে দিয়েছে এই অভিযোগ জানিয়ে পুলিশের দারস্থ হয়েছিলেন মা। বেগতিক দেখে স্থানীয় পুলিশ এ বার ওই মহিলার উপরে মামলা প্রত্যাহারের জন্য ক্রমান্বয়ে চাপ দিচ্ছে বলে অভিযোগ। পুলিশের ভয়ে সপরিবারে বাড়ি ছাড়া লালগোলা থানার নলডহরি গ্রামের লালন বিবি।
হেরোইন পাচারের অভিযোগ ধৃত বড় ছেলে মাসাদুল হক রিঙ্কু গত বছরের ৯ অগস্ট থেকে জেলবন্দি। মেজো মানোয়ার হোসেনও একই অভিযোগে গত ২ এপ্রিল থেকে জেল হেফাজতে। লালন বিবির অভিযোগ, “গত ৩০ মার্চ বিকাল ৫টায় লালগোলার ডাকবাংলা বাজারের কাপড়ের দোকান থেকে মানোয়ারকে ও ওই দিন রাতে ১০টা নাগাদ নলডহরি গ্রামের বাড়ি থেকে আমার বিধবা ননদ পারুল বেওয়াকে পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। কিন্তু আদালতে হাজির না করে ৩ দিন ধরে ওদের থানার লকআপে আটকে রাখা হয়।”
অভিযোগ জানিয়ে ১ এপ্রিল আদালতে আবেদন করার পর রাতে ননদকে ছেড়ে দেওয়া হলেও পর দিন মানোয়ারকে পুলিশ আদালতে হাজির করে বলে জানান তিনি। লালন বিবির অভিযোগ, “তারপর থেকে মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিতে থাকে পুলিশ। এমনকী বাড়ির বাকিদেরও গ্রেফতারের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
রাজ্য মানবাধিকার কমিশন থেকে মুর্শিদাবাদ জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার-সহ বিভিন্ন সরকারি দফতরে লিখিত অভিযোগ করে বিচার চেয়েছেন লালন বিবি। অভিযোগের তদন্ত করে রিপোর্ট পাঠানোর জন্য পুলিশ সুপারকে লিখিত ভাবে জানিয়েও দিয়েছেন মুর্শিদাবাদ জেলাশাসক রাজীব কুমার। আর তাই পুলিশি হুমকি বেড়েছে বলে দাবি পারুল বেওয়ার। তিনি বলেন, “বিনা দোষে আমাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে থানার লক আপে আটকে রাখার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। বিনা বিচারে থানার লকআপে আটকে রাখা হয়নি বলে লেখা কাগজে সই করতে হবে বলে পুলিশ লোক মারফৎ আমাকে হুমকি দিচ্ছে। মাস দেড়েক থেকে আমরা আত্মগোপন করে রয়েছি।”
লালগোলা থানার অভিযুক্ত ওসি দেবাশিস সরকার বলেন, “মাসাদুল হককে গত ৯ অগস্ট ৩০০ গ্রাম হেরাইন সহ এবং মানোয়ার হোসেনকে ১ এপ্রিল ৫০০ গ্রাম হেরোইন-সহ গ্রেফাতার করা হয়েছে। আর তাতেই পুলিশের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেছে তাদের পরিবার।” মুর্শিদাবাদ জেলার পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “হেরোইন পাচারের অভিযোগে কাউকে গ্রেফতার করার আগে নিশ্চিত হওয়ার জন্য সব থানার ওসি ও পুলিশ অফিসারদের নির্দেশ দেওয়া আছে। ফলে নলডহরি গ্রামের ঘটনাটি কোনও রকম সাজানো বিষয় হতে পারে না। তবে পুলিশি হুমকিতে বাড়িতে থাকতে না পারার ঘটনাটি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ছেলে ও ননদকে পুলিশ ৩০ মার্চ ধরে নিয়ে গিয়েছে বলে আদালতে ১ এপ্রিল সকাল ১০টা ১০ মিনিটে লালন বিবি তাঁর আবেদনপত্র লালবাগের এ সি জে এম এজলাসে জমা দিয়েছেন। এ কথা জানিয়ে তাঁর আইনজীবী সফিকুল ইসলাম বলেন, “এ সি জে ওই বিষয়ে লালন বিবির শুনানি শেষ করেন ওই দিন সকাল ১০ টা ৫০ মিনিটের মধ্যে। তারপর বিচারক ওই বিষয়ে লালগোলার ওসিকে আদালতে রিপোর্ট জমা দিতে বলেন। গত ৮ মে আদালতে জমা দেওয়া রিপোর্টে ওসি লিখেছেন, মানোয়ার হোসেনকে পুলিশ ১ এপ্রিল সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে গ্রেফতার করেছে। অথচ তার ৪৫ মিনিট আগে, অর্থাৎ সকাল ১০ টা ১০ মিনিটে ছেল ও ননদকে পুলিশ তুল নিয়েছে বলে আদালতে কি ভাবে আবেদনপত্র জমা দেন লালল বিবি? আর তার শুনানিও কি ভাবে শেষ হয়ে যায় পুলিশের দেওয়া গ্রেফতারের সময়ের ৫ মিনিট আগেই? আসলে মিথ্যা ঢাকতে গিয়ে পুলিশ ওই অবাস্তব কাণ্ড ঘটিয়েছে। তার ফলেই পুলিশের মিথ্যা বক্তব্য বেআব্রু হয়ে পড়ছে।” |