ধোনির শহরে প্রায় মধ্যরাত। ফিনিশার যে কাকে বলে, দেখল মুম্বই। আরও বেশি করে দেখল কলকাতা। অলৌকিকের স্বপ্ন এখনও টিকে, অন্তত চব্বিশ ঘণ্টা তো বটেই। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে বিরাট কোহলির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স যদি প্রীতি জিন্টার পঞ্জাবকে হারিয়ে দেয়, তা হলে এ বারের মতো নাইটদের ছুটি। কিন্তু অন্য কিছু হলে? কপাল যদি ঠিক থাকে, কে আটকায় শেষ চারের অঙ্ক?
একসঙ্গে না হলেও টুকরো টুকরো ভাবে রাঁচির টিম হোটেলে খোলা ছিল সংশ্লিষ্ট চ্যানেল। যেখানে দেখানো হচ্ছে ওয়াংখেড়ের মুম্বই-হায়দরাবাদ যুদ্ধ। যেখানে ঠিক হয়ে যাবে, ‘থাকব না ডুবব’। টিম হোটেলে প্রতীক্ষার প্রহর শেষ হল মধ্যরাতে। যখন উল্লাসে ফেটে পড়ল নাইট শিবির। বেঁচে থাকা আরও চব্বিশ ঘণ্টার জন্য। মধ্যরাতে যদিও এক নাইট যোদ্ধা বলছিলেন, “খুব উৎসাহিত হওয়ার কারণ নেই। এখনও এমন কিছু হয়নি যাতে প্লে-অফের দরজা খুলতে পারে। আমরা পরের ম্যাচটার দিকে তাকিয়ে।” |
পরের ম্যাচ বলতে বুধবারের পুণে ওয়ারিয়র্স। তার আগে থাকছে বেঙ্গালুরুতে গেইল বনাম মিলার। সেই ম্যাচে জিততে হবে মিলারদের। তবে আবার একটা অক্সিজেন সিলিন্ডার ঢুকে পড়বে নাইট শিবিরে। কিন্তু সোমবারের রাতে নাইটদের হয়ে যে কায়রন পোলার্ড ভেলকি দেখাবেন সেটা এক কথায় অবিশ্বাস্য ছিল। সন্ধে নাগাদ রাঁচির টিম হোটেলে ছিল খালি প্রত্যাশাযদি কিছু হয়! এবং হল।
প্রথমে সচিনের ব্যাটে। পরে পোলার্ডের। কায়রন পোলার্ড যাঁর মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের কাছে ওয়াংখেড়েতে হেরে বড় ধাক্কা খেয়েছিল নাইট রাইডার্সের প্লে-অফ অভিযান, সেই পোলার্ডই এ দিন নাটকীয় ভাবে ভাসিয়ে রাখলেন আইপিএলে নাইটদের নৌকো। সচিনদের যে জয়ের প্রার্থনা নাইট শিবিরে শুরু হয়ে গিয়েছিল রবিবারের ম্যাচ জেতার পর থেকেই।
সকালের ছবিটায় অবশ্য এত টেনশনের গল্প ছিল না। সেখানে গল্ফ, সুইমিং পুলে হাল্কা সেশন এবং আড্ডা। ছুটির মেজাজ। কলকাতায় থাকলে বাইশ গজ থেকে ছুটি পেলেই রায়ান টেন দুশখাতে, ট্রেভর বেলিসরা ছোটেন গল্ফ কোর্সে। পেপসি আইপিএলে তাদের দ্বিতীয় ‘হোম’ রাঁচিতেও নির্ঘণ্ট নড়চড় হল না। দুশখাতে, রায়ান ম্যাকলারেনদের সঙ্গে নিয়ে কেকেআর কোচ প্রায় গোটা সকালটাই গল্ফ কোর্সে। সন্ধেয় আবার স্পনসরদের অনুষ্ঠান। যেখানে একটা বিরাট হলঘর জুড়ে একের পর এক টেবল পাতা। টেবলে শ’য়ে শ’য়ে সোনালি-বেগুনি জার্সি! যা নিয়ে পরে নাইট পেসার ইকবাল আবদুল্লা টুইট করলেন, ‘জার্সিতে সই করে করে এখন হাত ব্যথা করছে!’
নাইট অধিনায়ক নিজেও তখন ক্রিকেট থেকে শতহস্ত দূরে। নাইট ভক্তদের জন্য টুইটার ভিডিও তৈরি করতে ব্যস্ত। সাড়ে তিন মিনিটের যে ভিডিওতে উঠে এসেছে গম্ভীরের জানা-অজানা নানা দিক।
কলকাতার কোন জিনিসটা সবচেয়ে প্রিয়? রসগোল্লা বা মিষ্টি দই নয়। নাইট ক্যাপ্টেনকে সবচেয়ে বেশি টানে কলকাতার জীবনধারা। “এই শহরটা আমার গতিতে চলে! কোনও তাড়াহুড়ো নেই!” আর ভাল লাগে কলকাতার মানুষের আবেগ। তাঁদের মধ্যে কোথাও হয়তো নিজের বল্গাহীন প্যাশনটা খুঁজে পান গম্ভীর।
মাঠে যে রকম, মাঠের বাইরের গম্ভীর মোটেও অত সিরিয়াস নন। ঠাট্টা-ইয়ার্কি ভালবাসেন। বলিউডের কোনও চরিত্র হতে পারলে তাঁর প্রথম পছন্দ সরফরোশ-এর আমির খান। কেন? “আমি সব সময় চেয়ে এসেছি দেশের জন্য কিছু করতে। চেয়েছি সমাজে ভাল ভাল বদল আনতে।” বেঙ্গালুরুতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচে রিকি পন্টিংয়ের শ্লেষ-মেশানো টিটকিরি ভোলেন না। “রিকি বলেছিল, তুমি কী ভাবছ তুমি গোটা ক্রিকেটদুনিয়ায় আগুন লাগিয়ে দিতে পারবে? ঠিক স্লেজিং ছিল না, কিন্তু ওই কথাগুলো আমার ক্রিকেটজীবনই বদলে দিয়েছিল। পরের টেস্টেই আমি ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলাম!”
এই মুহূর্তে যদিও তাঁর ভাবনায় শুধুই কেকেআর। আরও ভাল করে বললে, কেকেআরকে প্লে-অফে টেনে তোলার মরিয়া যুদ্ধ। যে যুদ্ধে তাঁদের পরের প্রতিপক্ষ পুণে ওয়ারিয়র্স এ দিন সন্ধেয় ঢুকে পড়ল রাঁচিতে। পুণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নীল নকশা ছকে ফেলার কাজও চলছে পুরোদমে। রবিবারের আরসিবি ম্যাচের পিচ পাচ্ছে না পুণে। তাদের জন্য তৈরি হচ্ছে আরসিবি ম্যাচের পাশের পিচ। কিউরেটর বাসুদেবের কথায়, যে পিচ টি-টোয়েন্টির আদর্শ উইকেট নয় কেউ বলতে পারবে না।
যুদ্ধক্ষেত্র প্রায় প্রস্তুত। ভয় একটাই লড়াইয়ে নামার আগেই ম্যাচটা না হয়ে দাঁড়ায় স্রেফ নিয়মরক্ষার নিরামিষ সাক্ষাৎ!
|
|
পোলার্ডকে সেলাম। আমি নিশ্চিত গোটা কলকাতা ওর জন্য গলা ফাটিয়েছে।
আমাদের এখনও দৌড়ে রেখে দিল। আমাদের উপর বিশ্বাস রাখুন।
টুইটারে বেঙ্কি মাইসোর (কেকেআর সিইও) |
|
রাঁচিতে হয়তো জুহি
নিজস্ব প্রতিবেদন |
মহেন্দ্র সিংহ ধোনির শহরে কলকাতা নাইট রাইডার্সের ম্যাচ দেখতে আসতে পারেন জুহি চাওলা। নাইট রাইডার্সের অন্যতম মালকিন জেএসসিএ ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কমপ্লেক্সে বুধবার পুণে ওয়ারিয়র্স এবং নাইট রাইডার্সের লড়াই দেখতে হাজির থাকতে পারেন বলে জানানো হয়েছে একটি সূত্রে। রবিবার এই মাঠেই রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুকে পাঁচ উইকেটে হারিয়ে দিয়েছিল নাইটরা। বুধবারের ম্যাচেও মালকিনের সামনে একই ফলের আশায় নাইট রাইডার্স ক্রিকেটাররা। |