হাতির উপদ্রবে জীবন জেরবার
স্কুলে যেতেও ভয় করে, কমিশনকে চিঠি শিল্পীর
হাতির উৎপাতে তাদের জীবন বিপন্ন জানিয়ে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনকে চিঠি লিখেছে শিল্পী কর্মকার। বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড় থানার গদারডিহি গ্রামের কর্মকার পাড়ার বাসিন্দা শিল্পীর কথায়, “কমিশনকে অনুরোধ করেছি, তারা যেন আমাদের এই সমস্যার কথা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরে।”
বড়জোড়া ব্লকের এই অঞ্চলটিতে অবশ্য দাঁতালের উপদ্রব দীর্ঘদিনের। বন দফতরের বড়জোড়া রেঞ্জের সরাগড়ার জঙ্গল থেকে হাতির দল বেরিয়ে গদারডিহি, সংগ্রামপুর, হরেকৃষ্ণপুর, ঝরিয়া, লক্ষীনারায়ণপুরের মতো গ্রামগুলিতে বছরের বিভিন্ন সময় তাণ্ডব চালায়। ফসল ও ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি যেমন হয়, তেমনই হাতির হানায় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে একাধিকবার। সমস্যা সমাধানের দাবিতে বন দফতর ও জেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি এবং রাজনৈতিক নেতাদের কাছে বহুবার ছুটে গিয়েছেন গ্রামবাসীরা। কাজের কাজ কিছু হয়নি।
বনদফতর সূত্রের খবর, সরাগড়ার জঙ্গলে গোটা বারো স্থানীয় (রেসিডেন্ট) হাতি রয়েছে। এই হাতিগুলিই মাঝে মাঝে বিচ্ছিন্ন হয়ে সরাগড়ার জঙ্গল থেকে গ্রামে ঢুকে পড়ে উৎপাত চালায়। দধিমুখা উচ্চবিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী শিল্পীকে ওই জঙ্গল লাগোয়া মেঠো রাস্তা ধরেই স্কুলে বা টিউশন পড়তে যেতে হয়। ওই রাস্তাতেই বেশি উপদ্রব হাতির দলের। স্কুল গ্রাম থেকে কিছুটা দূরেও। যাতায়াতের পথে দাঁতালের সামনে পড়ার ভয়ানক অভিজ্ঞতা তারও হয়েছে। শিল্পীর কথায়, “প্রায় দিনই ওই রাস্তায় হাতি বেরোচ্ছে। যার ফলে ওই রাস্তা দিয়ে যেতে খুব ভয় লাগে। এই সমস্যার জন্য মাঝে মাঝে স্কুল ও টিউশন যাওয়া পর্যন্ত বন্ধ করতে হচ্ছে।” সমস্যাটি শুধু তার একার নয় জানিয়ে সে বলে, “আমার অন্য সহপাঠীদেরও আমার মতোই অবস্থা। তাই সবারই পড়াশোনায় এর ছাপ পড়ছে। এর থেকে মুক্তি পেতেই মানবাধিকার কমিশনে চিঠি লিখেছি।” চিঠিতে সে লিখেছে, ‘হাতিগুলো গ্রামের ভিতরে যখন তখন ঢুকে পড়ে...দিনরাত মনের মধ্যে একটা আতঙ্ক নিয়ে বেঁচে আছি।’
যখন তখন হাতিদের আনাগোনা। সেই ঝুঁকি নিয়েই
এই পথে শিল্পীর নিত্য যাতায়াত স্কুলে। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।
শিল্পীর সহপাঠী সুদীপ্তা দে, প্রসাদ পাল, সুদীপ কর্মকাররা বলল, “আমরা সব সময় ভয়ে ভয়ে ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করি। এমনিতেই রাস্তাটা ফাঁকা থাকে। তাই আমরা অপেক্ষা করে থাকি, সঙ্গী পাওয়ার জন্য। একজোট হয়ে যাতায়াত করলে তা-ও কিছুটা ভয় কমে। কিন্তু, সে তো আর রোজ হওয়ার নয়! ফলে আতঙ্ক থেকেই যায়।” শিল্পী বা তার সহপাঠীদের আশা, মুখ্যমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করলে হাতি-সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়ার কোনও না কোনও উপায় নিশ্চই বেরোবে।
শুধু রাস্তাতেই হাতির উপদ্রব থেমে থাকে না, তারা কখনও দিনেদুপুরে কখনও বা রাতে ঢুকে পড়ে গ্রামের অন্দরেও। শিল্পী বলে চলে, “কয়েক মাস আগের ঘটনা। মাঝরাতে দুটো এই বড় দাঁতাল গ্রামে ঢুকে গ্রামবাসীদের ঘুম ছুটিয়ে দিয়েছিল। গ্রামের মুদির দোকান আর কয়েকটা ঘরবাড়িতে হামলা চালায় হাতিরা। পরে গ্রামবাসীরাই মশাল জ্বালিয়ে কোনও মতে হাতি দুটো গ্রাম থেকে তাড়ান।”
সোমবার গদারডিহি গ্রামের ওই মুদির দোকানটিতে গিয়ে দেখা গেল, হাতির আক্রমণ ঠেকাতে দোকানের লোহার দরজায় ধারালো পেরেক পোঁতা হয়েছে। দোকান মালিক অরুণ কর্মকার বললেন, “হাতিগুলো দোকানের দরজা ভেঙে দোকান থেকে চালের বস্তা বের করে নিয়ে গিয়েছিল। অনেক ক্ষতি হয়েছিল আমার। ওই ঘটনার পর থেকেই দরজায় পেরেক দিয়েছি।” তবে এতেও কতটা কাজ হবে, তা নিয়ে অবশ্য তিনি সংশয়ে।
শিল্পীর বাবা উজ্বল কর্মকার পেশায় একটি গ্রিলের দোকানের কর্মী। গ্রামে হাতির তাণ্ডবের কয়েকটি অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “কয়েক মাস আগেই গ্রামের কেওড়াপাড়া ফুটবল মাঠে এক ব্যক্তিকে পিষে মারল একটা দাঁতাল। আমাদের বাড়ির পিছনে একটা বাঁশ বন রয়েছে। সেখানেও একবার মাঝরাতে হানা দিয়েছিল হাতি। আর একবার মোটরবাইকে স্ত্রীকে নিয়ে বেরিয়েছিলাম। জঙ্গল রাস্তায় এক দাঁতালের মুখোমুখি পড়ে যাই। কোনও মতে পালিয়ে সে যাত্রা বেঁচেছিলাম।” এই অবস্থায় মেয়ে বাড়ির বাইরে বেরোলে তাই বাবা-মায়ের উদ্বেগের সীমা থাকে না।
তাঁর আক্ষেপ, বড়জোড়া বিধায়ককে জঙ্গল লাগোয়া ওই রাস্তায় আলোর বন্দোবস্ত করার আর্জি জানিয়েছিলেন। তিনি আশ্বাসও দিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুই হল না। ওই রাস্তায় অবিলম্বে আলো লাগানোর দাবি জানিয়েছেন গ্রামবাসীদের একটা বড় অংশ। তাঁদের বক্তব্য, আলো দিলে রাস্তার উপরে হাতি থাকলে রাতেও দূর থেকে দেখে অন্তত সতর্ক হওয়ার সুযোগ থাকবে। এখন তো সন্ধ্যা নামলেই রাস্তায় ঘুটঘুটে অন্ধকার। বিধায়ক আশুতোষ মুখোপাধ্যায়কে বারবার ফোন করা সত্ত্বেও যোগাযোগ করা যায়নি।
বিভাগীয় বনাধিকারিক (বাঁকুড়ার উত্তর) সুদীপ দাস বলেন, “জঙ্গলে পর্যাপ্ত খাবার না পাওয়ার জন্যই হাতিরা লোকালয়ে খাবারের সন্ধানে আসে। তবে, আমরা যখনই গ্রামে হাতির আক্রমণের খবর পাই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিই।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.