সাদা কাগজে লাল কালিতে লেখা ‘সত্যের জয়, মিথ্যার পরাজয়। ওয়েলকাম সিবিআই’।
সোমবার সকালে হাইকোর্ট ধনেখালি-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পরেই হুগলির ধনেখালিতে জয়রামবাটি গ্রামে ওই পোস্টার হাতে বেশ কয়েকবার পাক দিলেন জনা পাঁচেক যুবক। একই পোস্টার হাতে নিয়ে নিজের বাড়িতে ঘুরে বেড়াচ্ছিল বছর দশেকের এক বালক কাজি সাইনুদ্দিন। চার মাস আগে পুলিশি হেফাজতে যার বাবা কাজি নাসিরুদ্দিনের মৃত্যু হয়েছে।
নাসিরুদ্দিনের পরিবার তো বটেই, গ্রামবাসীদেরও বেশির ভাগই চাইছেন, সত্য সামনে আসুক। নাসিরুদ্দিন কি পুলিশ হেফাজতে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন? নাকি তাঁকে পিটিয়ে মারা হয়েছে? যদি পুলিশই পিটিয়ে মেরে থাকে, তার পিছনে এলাকার তৃণমূল বিধায়ক অসীমা পাত্রের হাত ছিল কি? প্রশ্নগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে চার মাস পরেও। অসীমাদেবী অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ আগেই অস্বীকার করেছিলেন। কিন্তু গ্রামবাসী চাইছেন, এ বার একটা হেস্তনেস্ত হয়ে যাক। সিবিআইয়ের তদন্তে সত্য উদ্ঘাটিত হোক। |
সিবিআই তদন্তকে স্বাগত জানিয়ে মিছিল। ধনেখালিতে। নিজস্ব চিত্র
|
গত ১৮ জানুয়ারি রাতে নিজের ছোট ট্রাক নিয়ে বেরিয়েছিলেন বছর ছত্রিশের তৃণমূল কর্মী নাসিরুদ্দিন। মদনমোহনতলায় তাঁর ট্রাক আটকায় পুলিশ। তিনি গাড়ির কাগজপত্র দেখাতে পারেনি এবং এক পুলিশকর্মীকে চড় মেরেছিলেন, এই অভিযোগ তুলে তাঁকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে সেখানেই তিনি মারা যান। পুলিশের দাবি ছিল, নাসিরুদ্দিন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু কয়েক জন প্রত্যক্ষদর্শীর অভিযোগ ছিল, পুলিশ নাসিরুদ্দিনকে ধরে বেধড়ক মারতে-মারতে থানায় নিয়ে যায়। পরে নাসিরুদ্দিনের স্ত্রী মনুজা বিবিও অভিযোগ তোলেন, পুলিশের মারেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর স্বামীর। ঘটনার পিছনে অসীমা পাত্র জড়িত বলেও তিনি দাবি করেন।
সকাল থেকেই নাসিরুদ্দিনের বাড়িতে গ্রামবাসীদের ভিড় বেড়েছে। গাছগাছালিতে ভরা বাড়িটায় স্ত্রী মনুজা বিবি, দুই ছেলে, এক মেয়েকে নিয়ে ছিল তাঁর সংসার। স্বচ্ছল কৃষক ছিলেন তিনি। আলু এবং গাড়ি ভাড়া দেওয়ার ব্যবসাও ছিল। তাঁর এই আকস্মিক মৃত্যু প্রায় কেউই মানতে পারছে না। অসীমা পাত্রের বাড়ি কাছেই। দলীয় রাজনীতিতে দু’জনে যে দুই গোষ্ঠীর, তা জানেন অধিকাংশ গ্রামবাসীই। কিন্তু তাঁরা আর রাজনীতির কচকচি চাইছেন না। শেখ মাজেদ রহমান নামে এক প্রৌঢ় বলেন, “তরতাজা ছেলেটা চলে গেল। মৃত্যুর কারণটা প্রকাশ্যে আসুক।” আজমিরা বিবি নামে এক প্রৌঢ়া বলেন, “নাসিরুদ্দিনের মেয়ে নাসরিন রাস্তাঘাটে ভুল করে অন্য লোককে বাবা ভেবে তার পিছনে ছোটে। তাই দেখে বুকটা কেমন হু-হু করে ওঠে। পুলিশ কি নাসিরুদ্দিনকে সত্যিই পিটিয়ে মেরেছে?”
নাসিরুদ্দিনের কাকা কাজি দাউদ রহমান বলেন, “মনটা ভেঙে গিয়েছে। বাম আমলে নাসুই (নাসিরুদ্দিনের ডাক নাম) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পথ দেখিয়ে গোঘাটের গ্রামে নিয়ে গিয়েছিল। আগের বার পঞ্চায়েত ভোটের আগে এখানে এক তৃণমূল কর্মী খুন হন। এ বার দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে ঘরের ছেলেটাই চলে গেল। আর রাজনীতি ভাল লাগছে না।” মনুজা বিবির অভিযোগ, “স্বামী যে ভাবে রাজনীতিতে উপরে উঠছিল, সেটাই কারও-কারও সহ্য হচ্ছিল না। তাই পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে ওঁকে সরিয়ে দেওয়া হল। এখনও আমাকে প্রায়ই হুমকি শুনতে হচ্ছে। সিবিআই তদন্তে সব সত্যই প্রকাশ পাবে।” |