ভাল অভিভাবক হইতে চাইলে প্রথমেই সন্তানের ভাল বন্ধু হইয়া উঠিতে হইবে শিক্ষক হইতে মনোবিদ, সকলেই একমত। সন্তানের উপর কেবল নিজের মত চাপাইলে সে ঠিক ঠিক বিকশিত হইতে পারে না। অতএব সন্তানের মনের ইচ্ছা জানিতে হইবে। কিন্তু মাতা-পিতা-অভিভাবকের গম্ভীর এবং দূরবর্তী সত্তার উপস্থিতি সন্তানকে মন খুলিয়া আলোচনার জন্য প্রস্তুত করিবে না। সন্তানের ইচ্ছা জানিবার জন্য তাহার বন্ধু হওয়া আবশ্যক। কী করিয়া সন্তানের সহিত বন্ধুত্ব করিতে হয়? সন্তানের সহিত তাহার পছন্দের সিনেমা বা সিরিয়াল দেখিয়া? কম্পিউটার গেম খেলিয়া? তাহার পছন্দমত খরিদ্দারি করিয়া? অভিভাবকরা অনেকেই যারপরনাই চিন্তিত।
এখন একটি সহজ উপায় হইয়াছে। ফেসবুক নামক সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটে মাতা-পিতা বন্ধু হইতে পারেন সন্তানের। মাতৃদিবসের প্রাক্কালে ফেসবুকে সন্তানের সহিত মায়ের বন্ধুত্ব পাতানোর হিড়িক পড়িয়া গিয়াছে। স্বাভাবিক। ফেসবুক বা অন্য অনুরূপ সাইটে বন্ধুত্ব করিলে অভিভাবকেরা সন্তানের মতিগতি ও মনের ভাবগতিক সম্পর্কে জানিতে পারিবেন। কিন্তু সন্তানরা কি ফেসবুকে মাতা-পিতাকে বন্ধু করিতে আগ্রহী? সম্প্রতি নিউ ইয়র্কের হোসে নোলার বহু দিনের টালবাহানার পর ফেসবুকে তার মায়ের ‘বন্ধুত্ব’ মঞ্জুর করিয়াছে। তাহার মা ক্রমাগত চেষ্টা চালাইতেছিলেন ছেলের বন্ধু হইবার। কিন্তু ছেলে চাহিতেছিল না। না চাহিবার কারণ, মা যদি কোনও অপ্রীতিকর বা আপত্তিজনক মন্তব্য করেন, তাহা হইলে সে বন্ধুদের নিকট লজ্জিত হইবে। অবশেষে তাহার মায়ের সঙ্গে এই চুক্তি হইয়াছে যে তিনি এই রূপ কোনও মন্তব্য করিবেন না। এই শর্তে মা ছেলের বন্ধু হইয়াছেন। এমন শর্ত আরোপকে অহেতুক বলা চলে না। অনেক সন্তান ঠেকিয়া শিখিয়াছে। দেখা গিয়াছে, বহু সন্তান তাহাদের মা-বাবার বন্ধুত্ব মঞ্জুর করিবার পর অনেক রকম কথাবার্তা, অনেক ছবি ফেসবুক থেকে সরাইয়া লইতেছে। সতর্ক ভাবে মন্তব্য করিতেছে। অনেকে নিজস্ব মনোভাব আদানপ্রদানের জন্য অন্যান্য সাইট ব্যবহার করিতেছে। অর্থাৎ, তাহারা মা-বাবার সহিত একটি নির্দিষ্ট গণ্ডি রাখিয়া বন্ধুত্ব করিতেছে।
উহা আসলে অভিভাবকত্বের গণ্ডি। মা-বাবারা সেই গণ্ডি পার হইয়া সন্তানদের নিকট পৌঁছাইতে পারিতেছেন না। অভিভাবকদের আত্মসমীক্ষা জরুরি। অনেক সময়েই হয়তো তাঁহারা সন্তানদের বন্ধু হইতে চাহেন তাহাদের মতিগতির ওপর নজর রাখিবার জন্য। সন্তানদের ‘বেচাল’ হইতে দেখিলে তৎক্ষণাৎ বন্ধুর আবরণ ছাড়িয়া অভিভাবকের সত্তা গ্রহণ করেন। এমন হইলে সন্তান বন্ধুত্বের উন্মুক্ত বাতাবরণ পায় না। তাই তাহারা নিজেদের বৃত্ত অন্য ভাবে প্রস্তুত করে। অভিভাবকরা তাহাতে ক্ষুণ্ণ হন। তাঁহারা মনে করেন, সন্তানের ভাল করিবার জন্যই সমস্ত করিতেছেন। আর সন্তান ভাবে, পিতা-মাতা অহেতুক খবরদারি করিতেছেন। দুই পক্ষই অংশত ঠিক। কিন্তু এই দুইয়ের ভারসাম্য? আপাতত মনে হয়, দূর অস্ত্। |