শেষ ভাড়ার তালিকা তৈরি হয়েছিল ১৮ বছর আগে। তার পরে সময় পেরিয়েছে, জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, রিকশা চালকেরাও ভাড়া বাড়িয়েছেন ইচ্ছে মতো। আর সেই থেকেই যাত্রীদের সঙ্গে রিকশা চালকদের ঝামেলা কাটোয়ায় নিত্যচিত্র। যাত্রীদের অভিযোগ, কাটোয়ায় রিকশায় চড়লেই অন্তত ২০ টাকা ভাড়া গুনতে হয়। আর রাতের রিকশা তো বেপরোয়া। চালকের ইচ্ছেমতো ভাড়া দিতে হয় যাত্রীদের। আর রাজি না হলেই শুরু হয় অশান্তি, ঝগড়া। রিকশা চালকদের উপর পুরসভা বা প্রশাসনেরও নিয়ন্ত্রণ নেই বলে অভিযোগ যাত্রীদের।
কাটোয়া শহরের প্রবীণ বাসিন্দা অশোক চৌধুরী বলেন, “হরিসভা পাড়ার ভাগীরথী ঘাটে গেলেই বোঝা যায়, রিকশা চালকদের অত্যাচার কতটা!” কাটোয়ার আলমপুর গ্রামের এক দম্পতি জানান, ঘাটে যাওয়ার জন্য রিকশা স্ট্যান্ডে যেতেই ভাড়া নিয়ে বচসা শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়া দিয়েই রিকশা নিতে হয় তাঁদের। ভুক্তভোগী সান্ত্বনা সাহা, রাজীব রায়রাও। তাঁদের অভিযোগ, “যাত্রী তোলার সময় একরকম ভাড়া বলে আর গন্তব্যস্থলে গিয়ে বেশি ভাড়া চায় রিকশা চালকেরা। তারপর অশান্তি এড়িয়ে নিজের সম্মান বাঁচাতে বাধ্য হয়ে সেই ভাড়ায় দিতে হয়।” এমনকী পুরসভায় অভিযোগ জানিয়েও সুরাহা না হওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে বাসিন্দাদের। সমস্যা থেকে রেহাই পেতে তাঁদের দাবি, নতুন করে নির্দিষ্ট ভাড়ার তালিকা তৈরি করুক কাটোয়া পুরসভা। রিকশা ইউনিয়নগুলিও মনে করে, সুনির্দিষ্ট ভাড়া তালিকা হলে চালকদের দৌরাত্ম্য কমবে।
কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ভাড়ার তালিকা তৈরি হল না কেন? পুরসভা সূত্রে খবর, ১৯৯৫ সালে ভাড়া তালিকা প্রকাশ হওয়ার পরেই পুরভবনে হামলা চালিয়েছিল একদল দুষ্কৃতী। পুরকর্তাদের অভিযোগ, ওই ঘটনার পর দুষ্কৃতীদের বদলে উল্টে পুরকর্মীদের বিরুদ্ধেই মামলা করে পুলিশ। পুরসভার এই অভিজ্ঞতায় নতুন ভাড়ার তালিকা করার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবে এ বার সেই বাধা সরিয়ে নতুন করে ভাড়ার তালিকা তৈরিতে উদ্যোগ নিয়েছে কাটোয়া পুরসভা। পুরপ্রধান শুভ্রা রায় বলনে, “প্রশাসন-ইউনিয়ন সবাইকে নিয়ে যাতে সুনির্দিষ্ট ভাড়া তালিকা তৈরি করা যায়, তার চেষ্টা করা হচ্ছে।”
শুধু ভাড়া নয়, শহরের যত্রতত্র রিকশা দাঁড়ানোর ফলেও নাজেহাল হতে হয় বাসিন্দাদের। তৈরি হয় যানজট। প্রতিদিনই পথচারীদের সঙ্গে বচসা লেগে থাকে রিকশা চালকদের। আর তা সামলাতে হিমশিম খেতে হয় পুরসভার ট্রাফিক-কর্মীদের। পুরসভা ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কাটোয়া শহরে প্রায় ২৫০০ রিকশা চলে। তার মধ্যে ৭৫৭টি পুরসভা অনুমোদিত, আশপাশের পঞ্চায়েতগুলির কিছু রিক্সাও রয়েছে। বাদবাকি বেআইনি ভাবে শহরে চলে। পুলিশ জানিয়েছে, এই সব বেআইনি রিকশা চালকদের বেশির ভাগের বাড়ি মুর্শিদাবাদ ও নদিয়ায়। এই রিকশাগুলি আটক করার জন্য মাঝেমধ্যেই অভিযান চালানো হয় বলে দাবি পুলিশের। কিন্তু তাতে কি সমস্যা মেটে? উত্তরটা শহরের বাসিন্দারাই জানেন। |