গাজন উৎসবে তাঁরাও আসেন। আগুন নিয়ে সন্ন্যাসীদের (ভক্তা) শারীরিক কলাকৌশল দেখে অন্যদের মতো তাঁরাও অবাক হন। এ বার তাই বিষ্ণুপুরের গোপালগঞ্জ শ্রীশ্রী বুড়াশিব ঠাকুর জীউয়ের শতবর্ষ আবাল গাজন উৎসবে ১ লক্ষ টাকা তুলে দিলেন পড়শি গ্রামের ওই মুসলিম বাসিন্দারা। নিজেদের কষ্টের রোজগারে কেনা ধুতি, শাড়ি, গামছা তাঁরা তুলে দিলেন প্রায় ২৫০ জন পুরুষ ও মহিলা সন্ন্যাসীর হাতে। রবিবার সম্প্রীতির সুরে বাঁধা পড়ল মন্দির নগরী বিষ্ণুপুর। |
গত রবিবার ওই গাজন উৎসব শুরু হয়েছে। ১০০ বছরে পদার্পণ করায় এ বার এই গাজন উৎসবের জাঁকজমকও বেশি। সারা শহর আলোয় সাজানো হয়েছে। বাজনাও আয়োজন করা হয়েছে। রবিবার বিষ্ণুপুর শহর লাগোয়া দ্বারিকা ও শ্যামসুন্দরপুরের মুসলিম সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা এসে উৎসব কমিটির কর্মকর্তাদের হাতে ১ লক্ষ টাকা তুলে দেন। গাজনের জন্য সন্ন্যাস নেওয়া ভক্তেরা এ দিন নতুন পোশাক পড়েন। দ্বারিকা গ্রামের রজব শেখ, শ্যামসুন্দরপুরের জয়নাল আবেদিন খাঁ-র হাত থেকে ধুতি, গামছা নিয়ে পরলেন সুকান্ত করঙ্গা, শুকদেব কর্মকার, তাপস পাল, নির্মল লোহাররা। শাড়ি ও গামছা পেলেন পায়েল বাগদি, সঞ্জু বাউরি ও দীপা বাউরিরা। তাঁরা বলেন, “আমাদেরও কষ্টের রোজগারেই পোশাক কিনতে হত। ওঁদের ধর্ম আলাদা হলেও মনে হল আমাদেরই আত্মীয়।” খুশি মঈনুদ্দিন শেখ, নাজির শেখরাও। তাঁরা জানান, ওই দু’টি গ্রামে হাজার দেড়েক মুসলিমের বাস। কয়েকজন দ্বারিকা শিল্পাঞ্চলে কাজ করেন। অনেকে চাষাবাদ করেন। তাঁরা বলেন, “ধর্মীয় উৎসবে কোনও ভেদাভেদ আমরা মানি না। যখন শুনলাম গাজন উৎসব এ বার ১০০ বছরে পড়ছে, তখনই গ্রামের সবাই মিলে ঠিক করি সাধ্যমতো চাঁদা তুলে সাহায্য করব।”
শতবর্ষ আবাল গাজন উৎসব কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সৌমিত্র সেন, উদয় ভকত বলেন, “স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ওঁরা এগিয়ে আসায় আমরা খুশি। এভাবেই এই উৎসব সকলের মিলন মঞ্চ হয়ে উঠুক।” |