সারদা-কাণ্ডে বিড়ম্বনায় পড়েছে তৃণমূল। শাসক দলের নেতা-নেত্রীরা কেন এই ধরনের অর্থলগ্নি সংস্থার সঙ্গে জড়িয়ে আছেন, প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। কোনও অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে উদ্যোক্তাদের পরিচয় ভাল করে জেনে নেওয়ার জন্য মন্ত্রিসভার সদস্যদের পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল এই ধরনের সতর্কতার ক্ষেত্রেও টেনে আনল সেই সিপিএমকে! তাদের সিদ্ধান্ত, সিপিএম ছেড়ে যাঁরা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের ভাবমূর্তি পরিচ্ছন্ন না হলে সভা-মিছিল থেকে দূরে রাখা হবে।
জেলা তৃণমূল পর্যবেক্ষক জ্যোতিপ্রিয়বাবুর বক্তব্য, “সিপিএম ছেড়ে আমাদের দলে ভিড়ে অনেকে ধান্দাবাজি করছে। এ সব বরদাস্ত করা হবে না। সিপিএম ছেড়ে আসা সকলে খারাপ নন, তবে কেউ কেউ দলকে ব্যবহার করছেন। তাঁদের নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে।” কোনও অনুষ্ঠানে মঞ্চে কে বসে আছেন, প্রয়োজনে তা-ও খতিয়ে দেখেতে হবে বলে দলের নেতা-কর্মীদের পরামর্শ দিচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এমন পরামর্শে দলের অন্দরেই প্রশ্ন, শুধু সিপিএম থেকে আসা নেতা-কর্মীরাই কি বিপত্তি বাড়িয়েছেন? সারদা-কাণ্ডে এমন অনেকের নাম জড়িয়েছে, যাঁদের সঙ্গে সিপিএমের কোনও সম্পর্কই নেই। তা হলে বাড়তি সতর্কতা শুধু সিপিএম ছেড়ে-আসা নেতা-কর্মীদের নিয়ে কেন?
দলের নেতাদের একাংশের বক্তব্য, বিধানসভা ভোটের পরে প্রলুব্ধ হয়ে বা আশ্রয় নিতে সিপিএমের নেতা-কর্মীদের অনেকেই তৃণমূল শিবিরে যোগ দিয়েছেন। প্রথম থেকেই তাঁদের বাড়তি গুরুত্বও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জন্মলগ্ন থেকে যাঁরা ঘাসফুল প্রতীকে লড়াই করছেন, তাঁদের এই পরিস্থিতি না-পসন্দ। এমন অনেকে গুরুত্বহীনতার অভিযোগ তুলেছেন। সিপিএম ছেড়ে আসা ‘অপরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি’র নেতাদের পিছনের সারিতে ঠেলে তৃণমূল গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বও সামলাতে চাইছে বলে দলের একাংশের মত।
মধ্যমগ্রামে জেলা তৃণমূল কার্যালয়ে রবিবার এ নিয়ে বৈঠক হয়েছে। সেখানে জ্যোতিপ্রিয় ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র, আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য-সহ জেলার সব স্তরের নেতা-নেত্রীরা। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ১৮ মে থেকে ১ জুন জেলা জুড়ে লগ্নি সংস্থা নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে সভা হবে। লগ্নি সংস্থা নিয়ে বিতর্কে একের পর এক তৃণমূল নেতার নাম যে ভাবে জড়িয়েছে, তাতে দলের নেতা-নেত্রীরা বিব্রত। মুখ্যমন্ত্রী মন্ত্রিসভার সদস্যদের সতর্ক করেছেন, সভা-সমিতিতে যাওয়ার আগে উদ্যোক্তাদের সম্পর্কে খোঁজ-খবর করতে হবে। উত্তর ২৪ পরগনার নেতা-নেত্রীরাও যেন খোঁজ নিয়ে তবেই কোনও অনুষ্ঠানে যোগদান করেন, সে ব্যাপারে নির্দেশ জারি হয়েছে দলের তরফে। জ্যোতিপ্রিয়বাবু জানান, কয়েক মাস দলের নেতা-কর্মী বা নিজের পরিবার ছাড়া অন্য কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানেও তিনি যাবেন না। |