|
|
|
|
অচ্যুতানন্দন প্রশ্নে ফের কমিটি |
নির্বাচনী প্রস্তুতির সময় দ্বন্দ্বেই জেরবার কারাটরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি ও কলকাতা |
লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করতে গিয়ে ঘরের বিবাদ সামলাতেই ব্যতিব্যস্ত প্রকাশ কারাট! কখনও পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে দিল্লির রাজ্য নেতৃত্বের বিবাদ, কখনও কেরলের পিনারাই বিজয়ন বনাম ভি এস অচ্যুতানন্দন দ্বন্দ্ব সামলাতেই কেটে গেল সিপিএমের তিন দিনের পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক।
দিল্লির যোজনা ভবনের সামনে বিক্ষোভ নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিতে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে। এমনকী, দিল্লি রাজ্য নেতৃত্বও এ কে গোপালন ভবনের দিকেই দায় ঠেলে দিয়েছেন। আবার অন্য দিকে, ভি এস-কে কেরলের বিরোধী দলনেতার পদ থেকে সরানোর জন্য বিজয়নের দাবি মেনে না-নিলেও তাঁর তিন ব্যক্তিগত সহকারীর শাস্তির সিদ্ধান্তে সিলমোহর বসিয়েছেন কারাটরা। তবে ভি এস-প্রশ্ন আপাতত ধাপাচাপা দিতে দু’তরফের পরস্পরবিরোধী অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
যোজনা কমিশনের সামনে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ এবং অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে হেনস্থা ঘিরে আগেই আলিমুদ্দিন এবং এ কে গোপালন ভবনের মতবিরোধ হয়েছিল। |
|
যোজনা কমিশনের সামনে অমিত মিত্রকে নিগ্রহ। —ফাইল চিত্র |
বিমান বসু-বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যেরা কারাটের কাছে প্রশ্ন তুলেছিলেন, কেন তাঁদের সঙ্গে আলোচনা না-করেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভের পরিকল্পনা নেওয়া হল? কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে সে সময় অভিযোগের তির ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল দিল্লির রাজ্য সম্পাদক পুষ্পেন্দ্র গ্রেওয়ালের দিকে। বলা হয়েছিল, গ্রেওয়ালেরাই ওই বিক্ষোভের কর্মসূচি নিয়েছিলেন। কিন্তু এ বার কেন্দ্রীয় কমিটিতে পশ্চিমবঙ্গ-সহ অন্যান্য রাজ্যের প্রতিনিধিরাও এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দিকে আঙুল তুলেছেন। আন্দোলনের ওই চেহারা এবং আগুপিছু না ভেবে ওই বিক্ষোভের জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য, ওই ঘটনার পরে পশ্চিমবঙ্গে দলের নেতা-কর্মীদের আক্রান্ত হতে হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, জাতীয় সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে হইচই হওয়ায় গোটা দেশেই বামেদের মুখ পুড়েছে।
মজার কথা হল, কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে দিল্লি রাজ্য কমিটির তরফেও অভিযোগের মুখ ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দিকেই। তারা জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছাত্র সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে কথা বলেই বিক্ষোভের পরিকল্পনা হয়েছিল। তাই তাঁরাও দায় এড়িয়ে যেতে পারেন না। এই মুহূর্তে দিল্লিতে এসএফআইয়ের বিশেষ শক্তি নেই বলে বিক্ষোভ জোরদার করতে দিল্লি নেতৃত্বকে মাঠে নামতে হয়েছিল। তবে এসএফআইয়ের দিকে নতুন করে আর দোষারোপ করেননি কেউ।
এই চাপানউতোরের মধ্যেই কারাটের দরবারে এসে পড়েছে কেরলের সমস্যা! কেরল রাজ্য কমিটি ভি এস-কে বিরোধী দলনেতার পদ থেকে সরানোর সুপারিশ গ্রহণ করে তাতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সিলমোহর দাবি করেছে। কেরলের তিন পলিটব্যুরো সদস্যই এই দাবির পক্ষে। ভি এসের পাল্টা অভিযোগ ছিল, তাঁর তিন ব্যক্তিগত সহকারী কে সুরেশ, বালকৃষ্ণন ও শশীধরনকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসিয়েছেন বিজয়নেরা। দলের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও চিঠিপত্র সংবাদমাধ্যমের কাছে ফাঁস করে দেওয়ার অভিযোগে ওই তিন জনকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছিল রাজ্য কমিটি। যা অনুমোদনের জন্য পড়েছিল কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে। কেন্দ্রীয় কমিটি আবার এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ভার পলিটব্যুরোকেই দিয়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে রবিবার দুপুরে কেন্দ্রীয় কমিটিতে শুধু কেরলের সদস্যদের নিয়ে পৃথক বৈঠকে বসে পলিটব্যুরো। তার পরে আবার পলিটব্যুরোর সদস্যেরা নিজেরা আলোচনায় বসেন। দু’তরফকেই শান্ত রাখতে সিদ্ধান্ত হয়, ভি এস-কে বিরোধী দলনেতার পদ থেকে সরানো হবে না। তবে তাঁর ব্যক্তিগত সহকারীদের শাস্তি বহাল থাকবে।
ভি এস অবশ্য দলের সাধারণ সম্পাদক কারাটকে ফের চিঠি লিখে অভিযোগ করেছেন, রাজ্য নেতৃত্ব প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে কাজ করছে। তাঁর ব্যক্তিগত সহকারীদের বিরুদ্ধে একতরফা সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই তিন জনও আলাদা ভাবে কারাটের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন, আত্মপক্ষ সমর্থনের যথাযথ সুযোগ তাঁদের দেওয়া হয়নি। দিল্লিতে আলাদা ভাবে কারাট ও সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গেও বৈঠক করেছেন ভি এস। বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, টি পি চন্দ্রশেখরনের হত্যার মতো নানা ঘটনায় রাজ্য নেতৃত্বের কার্যকলাপে দলেরই ক্ষতি হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তৈরি একটি কমিটি গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। এর আগে ভি এসের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সাংসদ পি করুণাকরনের নেতৃত্বে কমিশন গঠন হয়েছিল রাজ্যে। সেই কমিশনের রিপোর্ট মেনেই তাঁকে বিরোধী দলনেতার পদ থেকে সরানোর প্রস্তাব নেয় রাজ্য কমিটি। ফের আর একটি কমিটি আসলে গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব ধামাচাপা দেওয়ারই চেষ্টা বলে মনে করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, “লোকসভা ভোটের আগে ভি এসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া মানে কেরলে আবার বিপর্যয় ডেকে আনা! তাই সময় নিতেই হবে।”
তা হলে লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতির কী হবে? পলিটব্যুরো সূত্রের খবর, আপাতত ঠিক হয়েছে, জুন-জুলাই মাসে দিল্লিতে একটি জাতীয় সম্মেলন হবে। অন্য বাম দলগুলির উপস্থিতিতে তৈরি হবে অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচি। তার ভিত্তিতেই অন্যান্য অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি দলগুলির সঙ্গে আলোচনা করে রাজ্যে রাজ্যে আসন সমঝোতায় যাওয়ার চেষ্টা করবে সিপিএম। সম্মেলন হওয়ার কথা অন্য বড় শহরগুলিতেও। |
|
|
|
|
|