দিল্লিতে নালিশ, রাজ্যে উষ্মা
বাম-তৃণমূল ঝগড়ায় এ বার রবীন্দ্রনাথও
মন দিনে কি বলা যায়?
বাগযুদ্ধ এই প্রশ্ন ঘিরেই। এক দল বলছেন, আজ পঁচিশে বৈশাখ। আজ সঙ্কীর্ণ রাজনীতি করার দিন নয়। অন্য দল বলছেন, আজই তো বলতে হবে, চিত্ত যেথা ভয় শূন্য, উচ্চ যেথা শির।
দ্বিতীয় দল তাই দিল্লিতে দরবার করতে গিয়েছেন সিবিআই তদন্ত নিয়ে। আর প্রথম দল বলছেন, আজ শুভ দিনে এই নিয়ে মুখ খুলব না। জবাব দেব আগামিকাল।
দিন মাহাত্ম্যে এই ভাবে সারদা কাণ্ড নিয়ে সিবিআই তদন্ত এবং তাকে ঘিরে বাম-তৃণমূল কাজিয়ার মধ্যে ঢুকে পড়লেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রবি-অনুরাগিনী। তাঁর জমানায় তাই ট্র্যাফিক সিগন্যালে দু’দণ্ড দাঁড়ালে রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনা যায়। পঁচিশে বৈশাখে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন তিনি। এর পাশাপাশি তৃণমূল বরাবর অভিযোগ করে এসেছে, বামফ্রন্ট সরকারের আমলে বাংলার মনীষীদের যথেষ্ট সম্মান জানানো হয়নি।
এই অভিযোগের জন্যই হোক বা অন্য কোনও কারণে, এ বছরই প্রথম বারের জন্য আনুষ্ঠানিক ভাবে রবীন্দ্রনাথের মূর্তিতে মালা দিয়েছে বামফ্রন্ট। বিশ্বে স্বীকৃতির একশো বছর (১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার পান রবীন্দ্রনাথ) পরে এল বাম স্বীকৃতি।
একই সঙ্গে সারদা কাণ্ড নিয়ে আদালতের নজরদারিতে সিবিআই তদন্তের দাবি নিয়েও বাম প্রতিনিধি দল যান রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে দরবার করতে।
আর তাতেই চটেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় তো বটেই, রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনও এই ঘটনাকে সঙ্কীর্ণ রাজনীতি বলে সমালোচনা করেছেন। কিন্তু কেন সঙ্কীর্ণ রাজনীতি? আজ যে পঁচিশে বৈশাখ।
অবশেষে বাম মালা। এক শতাব্দী অপেক্ষার পর। বৃহস্পতিবার জোড়াসাঁকোয় ফরওয়ার্ড ব্লকের
অশোক ঘোষ, সিপিএমের অনাদি সাহু এবং আরএসপি-র ক্ষিতি গোস্বামী। —নিজস্ব চিত্র।
পার্থবাবু বলেছেন, “আজ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শুভ জন্মদিন। এমন দিনে সিপিএম দিল্লিতে সঙ্কীর্ণ রাজনীতি করছে। আমরা তাদের ধিক্কার জানাই।” তার পরেই তিনি বলেন, “যে সিপিএম সহজ পাঠ সরিয়ে দিয়েছে, যে সিপিএমের আমলে নোবেল পুরস্কার চুরি হয়েছে, যে সিপিএম নজরুল-রবীন্দ্রনাথকে কোনও সম্মান দেয়নি, সেই সিপিএমই আজ রবীন্দ্রজয়ন্তীর দিন রাজনীতি করছে!” একই সুরে ডেরেকও বলেছেন, “আজকের মতো শুভ দিনে সঙ্কীর্ণ রাজনীতি করতে চাই না। সঙ্কীর্ণ রাজনীতির নামই হল সিপিএম।” তা হলে কি সিপিএমের অভিযোগ নিয়ে কিছু বলবেন না? পার্থর জবাব, “যা বলার কাল বলব।”
দিল্লির এ কে গোপালন ভবনে যখন রাজ্যের বাম নেতাদের নিয়ে সীতারাম ইয়েচুরি (যিনি পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যসভার সাংসদ) সাংবাদিক বৈঠকে বসেন, তত ক্ষণে তাঁদের কানেও পৌঁছেছে পার্থ-ডেরেকের প্রতিক্রিয়া। রবীন্দ্রনাথকে উদ্ধৃত করেই তৃণমূলকে আক্রমণ করেন তাঁরা। ইয়েচুরি বলেন, “আজ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন। তিনি বলেছিলেন, চিত্ত যেথা ভয় শূন্য, উচ্চ যেথা শির। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বেআইনি লগ্নি সংস্থার মালিকদের আঁতাঁত লজ্জায় আমাদের মাথা হেঁট করে দিয়েছে। তাই আজকের দিনেই আমাদের কেন্দ্রের কাছে সিবিআই তদন্তের দাবি জানাতে হচ্ছে।”
ইয়েচুরির পরে সিপিআই সাংসদ প্রবোধ পণ্ডা। তৃণমূল সম্পর্কে রাজ্যের মানুষের মনোভাব বোঝাতে গিয়ে যিনি আবৃত্তি করেন, “যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো, তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?” ফরওয়ার্ড ব্লক সাংসদ বরুণ মুখোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলেন, “যাঁরা আজ রবীন্দ্রজয়ন্তী উদযাপন করছেন, তাঁদের কি সেই অধিকার রয়েছে? রবীন্দ্রনাথ তো বলেছিলেন, মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক, আমি তোমাদেরই লোক। তৃণমূল নেতারা কি তা বলতে পারেন?”
তৃণমূল নেতাদের কটাক্ষ, কার কত ভাল রবীন্দ্রনাথের কবিতা মুখস্থ রয়েছে, তার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন বাম নেতারা। তা করতে গিয়ে এ কে গোপালন ভবনের সাংবাদিক সম্মেলনেই ছোটখাটো রবীন্দ্রজয়ন্তী সেরে ফেলেছেন তাঁরা।
জবাবে সিপিএম নেতারা বলছেন, এ সব বলে তৃণমূল গোটা বিষয়টি লঘু করতে চাইছে। কিন্তু সারদা-কাণ্ডের মতো এত বড় আর্থিক জালিয়াতি আগে হয়নি। আর তাই তাঁরা গিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে আদালতের নজরদারিতে সিবিআই তদন্তের দাবি নিয়ে। বামেরা জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে আজ প্রধানমন্ত্রী তো বটেই, অর্থমন্ত্রীও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সূর্যকান্ত মিশ্র অভিযোগ করেন, “তৃণমূলের সাংসদ-নেতাদের সঙ্গে সারদা গোষ্ঠীর আঁতাঁতের যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। নতুন আইন হওয়ার আগেই রাজ্য সরকার ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু তারা কোনও ব্যবস্থাই নিচ্ছে না।” রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তর বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, গোটা বিষয়টির তদন্তে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এই টাস্ক ফোর্সের উপস্থিতি তেমন ভাবে চোখে পড়ছে না। তাঁর মতে, এই টাস্ক ফোর্সকে আরও সক্রিয় হতে হবে। আমানতকারীদের অর্থ ফিরিয়ে দেওয়া, তাদের জন্য ঋণের ব্যবস্থা করা এবং সারদা গোষ্ঠীর সংবাদমাধ্যম সংস্থাগুলি নতুন করে চালু করার বিষয়েও কেন্দ্রের হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানান বামেরা। একই সঙ্গে জানিয়ে দেন, সুদীপ্ত গুপ্তর মৃত্যুই হোক বা সারদা কাণ্ড, রাজ্যের তদন্তে বিশ্বাস নেই তাঁদের।
কিন্তু যে সিবিআইকে গত কাল খাঁচার তোতা বলেছে সুপ্রিম কোর্ট, তাকে ভরসা করছেন কী করে? জবাবে ইয়েচুরি বলেন, “সিবিআই ছাড়া আর তো কেউ নেই। আমরা তাই আদালতের নজরদারিতে সিবিআই তদন্তের কথা বলছি। তার সঙ্গে সেবি ও অন্যান্য সংস্থাও অংশ নিক।” যে হেতু সারদা গোষ্ঠীর জাল অন্য রাজ্যেও ছড়িয়েছে, অসম-ত্রিপুরায় সিবিআই তদন্ত হচ্ছে, সেখানে পশ্চিমবঙ্গেও সিবিআই ছাড়া আর কোনও বিকল্প নেই।
তোতা নিয়ে শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ উল্লেখ করে কালই ফেসবুকে জনমত যাচাইয়ে নেমেছিলেন মমতা। আজ অবশ্য কাজিয়ার কেন্দ্রে চলে এসেছেন রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.