|
|
|
|
হুল্লোড় |
চমকে দেওয়ার মতো ছবি |
সিনেমার ১০০ বছরের ট্রিবিউট দিতে গিয়ে বলিউড নিজেকেই সব চেয়ে বেশি ভাঙল!
ম্যান অব দ্য ম্যাচ কর্ণ জোহর আর দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়। লিখছেন জাগরী বন্দ্যোপাধ্যায় |
‘নায়ক’ ছবির শঙ্করদাকে মনে পড়ে? সিনেমা ব্যাপারটাকে একেবারে আমল দিতেন না ভদ্রলোক। বলতেন, স্টেজের সামনে কালো কালো মাথাগুলো দেখতে না পেলে অভিনয়ের থ্রিলটাই হারিয়ে যায়!
শঙ্করদা ওয়াজ রং।
পর্দার ও-পারেও যে কালো কালো মাথাগুলো মন্ত্রমুগ্ধ বসে থাকে, তাদের কথা তিনি ভাবেননি।
১০০ বছর পূর্ণ করে বলিউড এই কালো মাথাগুলোর কাছে এসে বসল। ১০০ বচ্ছর ধরে মাঠে তাঁবু খাটিয়ে, পর্দা টাঙিয়ে, সিনেমা হলের ছারপোকা-ধরা কাঠের চেয়ার ভরিয়ে ওই কালো মাথাগুলোই বলিউডকে ‘মুভি-মাদারি’ বানিয়েছে। আধুনিক রামায়ণ-মহাভারতের জায়গায় বসিয়েছে। সুখ-দুঃখ-বঞ্চনা-পরাজয়-পেয়ার-মহব্বতের মুহূর্তে নিজেদের কখনও দিলীপকুমার, কখনও অমিতাভ বচ্চন, কখনও মাধুরী দীক্ষিত ভেবেছে। লার্জার দ্যান লাইফ হিরো যদিও এখন মোবাইলের স্ক্রিনে এঁটে যান, তবু এই কালো মাথারা আছে। আছেই।
শতবর্ষ নিয়ে অবশ্য বিতর্ক কম নয়। ফালকে যদি ভারতীয় সিনেমার জনক হন, তা হলে হীরালাল সেন বা ‘পুণ্ডলীকে’র নির্মাতা দাদাসাহেব তরনে-র জায়গা কোথায়? ভারতীয় সিনেমার শতবর্ষ আর হিন্দি সিনেমার শতবর্ষ কি এক? যাকগে, সে সব পণ্ডিতেরা ভাববেন! আমার কালো মাথায় যেটা ধরা পড়ছে, সেটা হল নিজের বিভিন্ন পর্বকে ফিরে দেখা, নিজেকে নিয়ে মজা করা এখন বলিউডের কাছে জলভাত। ‘বম্বে টকিজ’ হয়ে উঠতেই পারত আর একটা জাঁকালো ‘ওম শান্তি ওম’! ‘বম্বে টকিজ’ সে রাস্তায় গেল না। এ ছবিতে স্টার হিসেবে প্রজেক্ট করা হল চার জন পরিচালককে। তাঁরা বেছে নিলেন বলিউডের চারটি হলমার্ক নাচ, গান, অভিনয় আর নক্ষত্র।
ভুল বললাম। ‘বম্বে টকিজ’-এর থিম তো নাচ-গান-সংলাপ নয়। ওই কালো মাথাদের জীবনে কী অমোঘ ভাবে জড়িয়ে আছে নাচ-গান-নক্ষত্ররা থিম তো সেটাই। সিনেমা ইন আওয়ার লাইভস! মঞ্চে কার্টেন-কল থাকে। দর্শকের কাছে প্রণত হওয়ার সুযোগ থাকে। সিনেমায় তো থাকে না! বলিউডের দর্শকের জন্য ১০০ বছর ধরে জমানো ট্রিবিউটের নামই, ‘বম্বে টকিজ’।
আর কী আশ্চর্য! বলিউডের দর্শককে ট্রিবিউট দিতে গিয়েই বলিউড নিজেকে সব চেয়ে বেশি ভাঙল! নইলে এই কর্ণ জোহরকে কস্মিন কালে দেখতে পেতেন কি?
কর্ণের ছবিতে ভিখিরি মেয়ে!! কর্ণের নায়কের ঘরে ধুলো-জমা তোষক!! রণদীপ-সাকিবের ভয়ঙ্কর প্যাশনেট চুম্বন!! কে-জো, এটা আপনি? ২৫ মিনিটে গল্প শেষ করলেন? হ্যাঁ, গল্পটা হয়তো প্রেডিক্টেবল। কিন্তু গল্প বলাটা? মানছি, রানি-রণদীপ-সাকিব খুবই ভাল অভিনয় করেছেন। কিন্তু গল্পটাকে অলৌকিক উচ্চতা দিল তো ওই বাচ্চা মেয়েটা, আর তার মুখে মদনমোহন-লতা জুটির অবিনশ্বর দু’টো গান। কর্ণ, আপনি সত্যি ম্যাজিক দেখালেন! |
|
বম্বে টকিজ
অমিতাভ, রানি, নওয়াজউদ্দিন, ক্যাটরিনা |
ওই ম্যাজিকের টানেই তো ছোট্ট ভিকি (নমন জৈন) ‘শীলা’ হতে চায়। শীলা মানে ‘শীলা কি জওয়ানি’ মানে ক্যাটরিনা কইফ! দিদির জামা আর মায়ের লিপস্টিক সম্বল করে সে ঘরের মধ্যে আপন মনে নাচে! ফুটবলের মাঠ থেকে বারবার তার চোখ চলে যায় মেয়েদের কত্থক ক্লাসে। জোয়া আখতার খুব স্পর্শকাতর জায়গায় হাত রেখেছেন। গল্পের শেষটা একটু সিম্পলিস্টিক! কিন্তু ভাই-বোনের সম্পর্কটা চমৎকার ফোটে দুই খুদের অভিনয়ে।
তবে হ্যা।ঁ নায়ক-নায়িকার প্রতি ভক্তি-ভালবাসা যাই বলুন, সেখানে বাচ্চা-বুড়ো ভেদ নেই। বিজয়ের বাবার কথাই ধরুন!
বাবারও বাবা থাকে। বিজয়ের ঠাকুর্দা দিলীপকুমারের ভাবশিষ্য ছিলেন। ডাক্তার যখন জবাব দিল, ঠাকুর্দা বিজয়ের বাবাকে বললেন এক শিশি গুড় নিয়ে দিলীপসাবের কাছে যেতে। দিলীপসাব যেন আঙুল চুবিয়ে সেই গুড় মুখে দেন! বিজয়ের বাবা তা-ই করলেন। বিজয়ের ঠাকুর্দা সেই গুড় খেয়ে ছ’বছর জিন্দা ছিলেন। রুগ্ণ বাবার মুখে সেই ঘটনা শুনে বিজয়ের (বিনীত কুমার) চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগল। বাবা বললেন, “বেটা, অমিতাভ বচ্চন যদি তোমার মায়ের তৈরি একটা মোরব্বা আধখানা খেয়ে ফেরত দেন, সেই মোরব্বা চিবিয়ে আমার রোগও আলবাত সারবে!”
অনুরাগ কাশ্যপের গল্প। প্রয়াগ-ক্ষেত্র ইলাহাবাদ! দেবদেবী-সাধুসন্ত অধ্যুষিত সেই ভূখণ্ডের ভূমিপুত্র অমিতাভ বচ্চন, দেবত্বে কার চেয়ে কম? অমিতাভ পর্দায় এলেনও দেবতার মতোই। অনুরাগোচিত মরবিডিটি বা ভায়োলেন্স মোটেই নেই এ ছবিতে। কিন্তু অ্যাবসার্ড কমেডির খোলতাই হতে যে চোখা টাইমিং লাগে, সেটা পেলাম না। তালগুলো যেন ঠিক সমে পড়ল না। গান দু’টোও বাড়তি কিছু যোগ করল না।
চার জনের খেলায় ক্লিয়ার উইনার অতএব দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়। সেরা অভিনেতা, নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি। একদম আন্তর্জাতিক মাপের কাজ করেছেন দু’জনে। ‘পটলবাবু ফিল্মস্টার’-এর সঙ্গে ‘টেরোড্যাকটিলের ডিম’-এর ছোঁয়া যে এই ভাবে মিশতে পারে, ভাবা যায়নি। সত্যজিৎ রায় দেখলে আনন্দ পেতেন কী অবলীলায় দিবাকর তৈরি করেন একের পর এক বিশুদ্ধ সিনেম্যাটিক সব মুহূর্ত!
বারান্দায় শুয়ে নওয়াজউদ্দিন রেলিংয়ের ফাঁক দিয়ে ফ্লাইওভারের আলোয় তাঁর মুখে ছায়ার নকশা। মেক আপ সমেত ডাস্টবিনে ঠাঁই নিচ্ছেন প্রয়াত নাট্যগুরু (সদাশিব অম্রপুরকর)! দৌড়ে বাড়ি আসছেন নওয়াজউদ্দিন, ঢাকঢোল-তাসাপার্টি কান ঝালাপালা করে দিচ্ছে। সব ক’টা ঢাকঢোল মনের মধ্যেও বাজছে যে! বাড়ি ঢোকার মুহূর্তটা নীরব। বারান্দায় হেঁটে বেড়াচ্ছে পোষা এমু। একটু পরেই শুরু হবে ‘তবু মনে রেখো’র গুমরোনো সুর নওয়াজউদ্দিন গল্প বলে চলবেন মেয়েকে। শব্দহীন সেই কাহিনি কথনের মধ্য দিয়ে, মা-মেয়ের জ্বলজ্বলে চোখের সামনে অতি সাধারণ চেহারার বেকার মানুষটা মহীরুহ হয়ে উঠতে থাকবেন ক্রমশ...
লেখাটা এখানেই শেষ করতে চাইছিলাম। পারলাম না। কারণ, ছবিটা এখানে শেষ হয়নি। এবং ছবির বিন্যাসটাও এ রকম নয়। প্রথমার্ধে কর্ণ আর দিবাকর। দ্বিতীয়ার্ধে জোয়া আর অনুরাগ। ফলে দ্বিতীয়ার্ধ তুলনায় দুর্বল। তা-ও মানা যেত, যদি না অতিশয় মোটা দাগের এবং ভয়াবহ রকম আনইম্যাজিনেটিভ নাচাগানাটা সব শেষে দেখানো হত! একান্তই যদি এটা নিয়েও মাথা খাটাতে চান, তা হলে দু’টো ক্লু। সলমন-সঞ্জয়-ঐশ্বর্যা-কাজল-অজয়রা নেই কেন? ভিলেনরা বাদ কেন? ভাবতে থাকুন। তবে এই প্রথম শাহরুখ-আমির এক ফ্রেমে, খেয়াল করেছেন তো? |
|
শহরের আনাচে কানাচে |
|
|
সম্প্রতি কলকাতায় বিমান উড়ান নিয়ে একটি অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হয়ে এসেছিলেন রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়।
(বাঁ দিকে) সঙ্গে ছিল তাঁর ছেলে প্রনীল। (ডান দিকে) কচিকাঁচাদের অটোগ্রাফ দিচ্ছেন রচনা। |
|
|
|
|
|
|