প্রবল গরমে খোলা জানলার ধারে সপরিবার শুয়েছিলেন মমতাজ বিবি। পাশ ফিরতে গেলে টান লাগে চুলে। ঘুমচোখে ঘুরে দেখেন, জানলার গ্রিলের সঙ্গে বাঁধা তাঁর লম্বা চুল। গম্ভীর গলায় ভেসে আসে হুমকি, “নড়াচড়া বন্ধ। চিৎকার করলে ছেলেকে কেটে ফেলব।” জানলার বাইরে থেকে মমতাজের স্বামী জিয়ারুল গাজির মাথা লক্ষ্য করে আগ্নেয়াস্ত্র ধরেছিল আর এক দুষ্কৃতী। সব মিলিয়ে টুঁ শব্দটি করার সুযোগ পাননি কেউ। জিয়ারুলই উঠে দরজা খুলে দেন। লক্ষাধিক টাকা নিয়ে বোমা ফাটিয়ে পালিয়ে যায় ডাকাত দল। সোমবার রাতে দুঃসাহসিক এই ঘটনা ঘটেছে বসিরহাটের পাতিলাচন্দ্র গ্রামে। দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করার আশ্বাস দিয়েছেন বসিরহাট থানার আইসি শুভাশিস বণিক।
যদিও সেই আশ্বাসে বিশেষ ভরসা রাখতে পারছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। সম্প্রতি চুরি-ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনা বেড়েই চলেছে বসিরহাট মহকুমা জুড়ে। গ্রেফতারও হচ্ছে কেউ কেউ। কিন্তু অপরাধমূলক কাজকর্ম থামার লক্ষণ নেই। সোমবার রাতেই মিনাখাঁ থানার বকচোরা গ্রামে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা অফিসের জানলা ভেঙে ঢোকে দুষ্কৃতীরা। তবে ভল্ট ভাঙতে না পারায় টাকা-পয়সা খোওয়া যায়নি।
জিয়ারুলদের অভিজ্ঞতা কেমন?
ওই ব্যক্তি কাজ করেন ঠিকাদারের অধীনে। রাস্তার কাজের জন্য ঠিকাদারের কাছ থেকে বেশ কিছু নগদ টাকা এনেছিলেন। কাজের প্রয়োজনেই স্ত্রীর গয়না বন্ধক রেখেও কিছু টাকা তোলেন। সেই খবর ছিল দুষ্কৃতীদের কাছে। বুঝেশুনে রীতিমতো ছক কষেই হামলা হয়েছে বলে অনুমান জিয়ারুলের।
মমতাজ বলেন, “খোলা জানলার দিকে মাথা করে শোওয়ায় ওদের সুবিধা হয়েছে। আমার চুল গ্রিলের সঙ্গে বেঁধে দিয়েছিল। ছেলের গলায় ভোজালি ঠেকায়। স্বামীকেও খুনের হুমকি দেয়।”
মমতাজরা জানান, দরজা খুলে দেওয়ার পরে ঘরে ঢোকে তিন জন। কয়েক জন ছিল বাইরে। স্বামী-স্ত্রী ও পাঁচ বছরের ছেলের হাত-পা-মুখ বেঁধে মিনিট দশেকের মধ্যেই ‘অপারেশন’ শেষ করে পালায় দুষ্কৃতীরা। যাওয়ার আগে দরজা বাইরে থেকে শিকল তুলে দেয়। নিয়ে যায় মোবাইল ফোনটিও। পালানোর সময়ে ডাকাত দলের ফাটানো বোমার শব্দে প্রতিবেশীরা উঠে পড়েন। তাঁরাই উদ্ধার করেন জিয়ারুলদের। |