সাক্ষাৎকার...
মরিয়া বলেই হিংস্র

ছেলেবেলা থেকে। খুলনা শহরে আমার জন্ম, ১৯৫৫-য়। বড় হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সে শহর যেন বদলে যেতে লাগল। আমার প্রতিদিনের সাথীরা, স্কুলের বন্ধুরা, বল-খেলার সঙ্গীরা আস্তে আস্তে যেন হারিয়ে যেতে লাগল। যে যায় সে যেমন হারায়, যে থেকে যায় সে-ও কিন্তু হারায়। আমরা শুধু চলে-যাওয়া মানুষটার কষ্টের কথাই ভাবি, তার স্মৃতি, তার নস্টালজিয়ার কথা; কিন্তু পড়ে-থাকা মানুষটার কথা ভাবি না, বা তার কষ্টের কথা। আমি একটা পড়ে-থাকা মানুষ, ওই কষ্টটাই আজও আমাকে তাড়িয়ে ফেরে।


পাকিস্তান আমল থেকে শুরু হলেও হিন্দু বাঙালিদের ওপর অবিচার এখনও শেষ হয়নি, নীরব দেশত্যাগ ঘটেই চলেছে। আমার ‘চিত্রানদীর পারে’ ছবির বিষয়টাই এই। পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে নিপীড়িত জাতি হিসেবে বাঙালি মুসলমানেরা লড়াই করেছিল, কিন্তু স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রযন্ত্র হাতে পেয়ে ভুলে গিয়েছে অন্য পীড়িত সম্প্রদায়ের কথা। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রান্তিক মারমা-চাকমাদের প্রতি দীর্ঘকাল ধরে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের যে কী অমানবিক আচরণ... এই নিয়েই আমার ছবি ‘কর্ণফুলির কান্না’। আর ‘স্বপ্নভূমি’ সংখ্যালঘু উর্দুভাষী মুসলিম সম্প্রদায়কে নিয়ে, ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে আসা এই মানুষরা জিন্না’র দ্বিজাতি তত্ত্বের শিকার, দু’-দু’বার দেশ হারিয়েছেন এঁরা, ’৪৭ আর ’৭১-এ, পাকিস্তান বা বাংলাদেশ কেউই এঁদের স্বীকার করে না। নেতৃত্বের দোষে আর নিজেদের কৃতকর্মের জন্যে আজ এঁদের এই অবস্থা। তবু মানুষ হিসেবেই তো এঁদের দেখতে হবে। একজন শিল্পীর কাছে প্রথমে মানুষ, পরে জাতীয়তাবাদ মতাদর্শ রাষ্ট্র ইত্যাদি, রবীন্দ্রনাথ আর লালনের থেকে তো এটাই শিখেছি।
আমার নতুন ছবি যেমন নিম্নবর্গের দরিদ্র মতুয়া সম্প্রদায়ের এক মানুষকে নিয়ে, ঢোল-ঢাক বাজান ‘জীবন ঢুলি’। প্রান্তিক, বর্ণবাদ-বিরোধী, কঠোর পরিশ্রমী এই জনগোষ্ঠী আক্রান্ত হয়েছিল ’৭১-এর গণহত্যায়। এঁদের কোনও রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধিত্ব নেই, জাতীয় স্তরে কেউ এঁদের কথা বলে না।

বাংলাদেশের মানুষের কাছে এ এক বড় অর্জন। প্রথমত, এই আন্দোলনের শরিক যারা, তারা এক রাজাকার-মুক্ত বাংলাদেশ দেখতে চায়, যা সব বাঙালির স্বপ্ন। দ্বিতীয়ত, এরা যথেষ্ট রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দেখাতে পেরেছে। এদের মধ্যে নানা ধরনের আদর্শগত মতভেদ আছে, কিন্তু এরা নিজেদের ভিন্ন মতগুলো মেনে নিয়েই একসঙ্গে কাজ করছে। কোনও সমস্যা হচ্ছে না। বহুত্ববাদের প্রতি এ-রকম শ্রদ্ধা আমাদের দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তেমন দেখতে পাই না। তৃতীয়ত, বহু আত্মবিশ্বাসী তরুণী এই আন্দোলনে অত্যন্ত সপ্রতিভ ভূমিকা গ্রহণ করেছে, এদের অনেকেই নেতৃত্বেও রয়েছে। এই আন্দোলনে শতকরা তিরিশ ভাগই মেয়ে। সর্বোপরি এ আন্দোলন যে ধর্মনিরপেক্ষতার বীজ বুনে দিচ্ছে তা আগামী দিনে দক্ষিণ এশিয়ায় রীতিমতো তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। বাংলাদেশ মৌলবাদীদের খপ্পরে পড়বে, না একটা অসাম্প্রদায়িক সমাজ হিসেবে দাঁড়াবে এটাই এখন দেখবার। সে দিক থেকে শাহবাগের আন্দোলন সফল হওয়াটা অত্যন্ত জরুরি।


তাদের পায়ের তলা থেকে আসলে ক্রমশই মাটি সরে যাচ্ছে। বাংলাদেশ যত গণতান্ত্রিক হবে তত ওদের অসুবিধে। নির্বাচন হলে ওরা ২-৩ শতাংশের বেশি ভোট পায় না, তাই এখন ‘কিলিং অপারেশন’-এ বিশ্বাসী। ওদের সফ্ট টার্গেট সেই সব মানুষ, যাঁরা প্রগতিশীল ও ধর্মনিরপেক্ষ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.