পঞ্চাশ শতাংশ ছাড়ে এক সময় বিক্রি করতে হত রবীন্দ্রনাথের বই। আর তার বিজ্ঞাপন দেখে এক কবি ব্যঙ্গও করেছিলেন, ‘আমি একটা উচ্চ কবি, এমন ধারা উচ্চ...পাবে গুরুদাসের নিকট ওজন দরে সস্তা...’। গুরুদাস মানে ‘গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় অ্যান্ড সন্স’। ১৮৮৪-তে গুরুদাস চট্টোপাধ্যায়কে ২,৩০৯ টাকায় কয়েকটি বইয়ের কপিরাইট বিক্রি করেন রবীন্দ্রনাথ। তারও কুড়ি বছর পরে চৈতন্য পুস্তকালয় রীতিমতো বিজ্ঞাপন দিয়ে জানাচ্ছে, ‘রবীন্দ্রনাথের বই একত্রে সকলগুলি লইলে অর্ধমূল্যে দিই।’ প্রাক-বিশ্বভারতী রবীন্দ্র প্রকাশনার ইতিহাস নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে রবীন্দ্রভবন। ২৫শে বৈশাখ প্রদর্শনীর সূচনা করবেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত। ১৬ মে পর্যন্ত প্রদর্শনী চলবে।
রবীন্দ্রভবনের অধ্যক্ষ তপতী মুখোপাধ্যায় বলছেন, “ইলাহাবাদের ইন্ডিয়ান প্রেস, মজুমদার লাইব্রেরির সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের চুক্তি, সেই সব বইয়ের প্রথম সংস্করণ, শান্তিনিকেতন প্রেসের পুরনো ব্লক, নিজের বইয়ের প্রকাশ সম্পর্কে নানা জনকে লেখা রবীন্দ্রনাথের চিঠি, বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগের ইতিহাস, প্রকাশনার দিক থেকে বিশিষ্ট বিভিন্ন বই থাকবে।”
১৮৭৮-এ রবীন্দ্রনাথের প্রথম বই ‘কবি-কাহিনী’ প্রকাশ করেছিলেন বন্ধু প্রবোধচন্দ্র ঘোষ। সে বই সম্পর্কে ‘জীবনস্মৃতি’তে কবির মন্তব্য: ‘শুনা যায়, সেই বইয়ের বোঝা সুদীর্ঘকাল দোকানের শেল্ফ ও তাঁহার চিত্তকে ভারাতুর করিয়া বিরাজ করিতেছিল।’ ১৯২২-এ বিশ্বভারতীকেই রবীন্দ্রনাথ তাঁর সব বই প্রকাশের ভার দেন। ইন্ডিয়ান প্রেসের মালিক চিন্তামণি ঘোষকে সে কথা জানিয়ে একটি চিঠিতে লেখেন, ‘আমার সমস্ত বাংলা বইগুলির স্বত্ব লেখাপড়া করিয়া বিশ্বভারতীর হাতে দিয়া আমি সম্পূর্ণ নিষ্কৃতি লইয়াছি।’ নিজের বইয়ের ছাপা, বাঁধাই, প্রচ্ছদ নিয়ে খুঁতখুঁতে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। পুলিনবিহারী সেন, চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, কিশোরীমোহন সাঁতরাকে লেখা চিঠির মধ্যে তার পরিচয় এই প্রদর্শনীতে ধরা থাকবে বলে জানান প্রদর্শনীর অন্যতম নির্মাতা রবীন্দ্রভবনের গবেষক অমৃত সেন। তেমনই এক চিঠিতে চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়কে লিখেছেন, ‘চয়নিকা পেয়েছি। ছাপা ভাল, কাগজ ভাল, বাঁধাই ভাল।...কিন্তু ছবি ভাল হয়নি। নন্দলালের পটে যেরকম দেখেছিলুম বইয়েতে তার অনুরূপ রস পেলুম না বরঞ্চ একটু খারাপই লাগল।’
‘বিশ্বকবির লেখা যত হয় ছাপা
প্রূফশিটে তার দশগুণ পড়ে চাপা’,
লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথই। এ বার সেই চাপাপড়া ইতিহাসই, রবীন্দ্রভবনের প্রদর্শনীতে। |