মাত্র চার দিন পরের ভোটটা কার্যত হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁর সঙ্গে নওয়াজ শরিফের লড়াই। ইমরান খান দিন-রাত এক করে প্রচার চালাচ্ছিলেন। শেষ বেলায় বিপদ বাধল জন্মস্থান লাহৌরে এসে। জনসভার মঞ্চে উঠতে গিয়ে অস্থায়ী লিফ্ট থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হলেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের চেয়ারম্যান। ইমরানের মাথা ফেটেছে, কাঁধেও চোট লেগেছে। তবে দলের নেতারা জানিয়েছেন, ইমরান এখন বিপন্মুক্ত, তাঁর জ্ঞান রয়েছে। ইমরানের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে বার্তা পাঠিয়েছেন নওয়াজও।
আজ সকাল থেকেই পরপর জনসভা করছিলেন ইমরান। লাহৌরের গালিব মার্কেটে তাঁর সভা ছিল সন্ধেয়। প্রায় কুড়ি ফুট উঁচু পেল্লায় মঞ্চ থেকে বক্তৃতা দেওয়ার কথা ছিল প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়কের। মঞ্চে ওঠার লিফ্ট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল একটি ফর্কলিফ্ট যন্ত্রকে। এর সামনে থাকে সমান্তরাল দু’টি ধাতব পাত। তার ওপরে রেখেই ভারী জিনিসপত্র তোলা হয়। |
আহত ইমরানকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হাসপাতালে। ছবি: রয়টার্স। |
ইমরানের সভায় ফর্কলিফ্টের ওই দু’টি পাতের ওপরেই একটা চলনসই পাটাতন তৈরি করা হয়েছিল। টিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছিল, ওই পাটাতনে দাঁড়িয়েই ধীরে ধীরে ওপরে উঠছিলেন গাঢ় নীল শেরওয়ানি আর সবুজ দোপাট্টা-সজ্জিত ইমরান। তাঁর সঙ্গে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে ছাই রঙের সাফারি স্যুট পরা দুই দেহরক্ষী। হঠাৎই দেখা গেল, নীচ থেকে আরও এক জন লিফ্টে ওঠার চেষ্টা করছেন। অপরিসর পাটাতনে ধারের দিকে দাঁড়ানো এক দেহরক্ষী প্রথম থেকে তাঁর সহকর্মীর হাত ধরে ভারসাম্য রাখছিলেন। এ বার তাঁরা টলে গেলেন। পরমুহূর্তে ইমরান এবং ওই দুই দেহরক্ষী কতকটা জড়াজড়ি করে পাটাতন থেকে সটান পড়ে গেলেন। সকলেরই মাথা নীচে, পা ওপরে। পতাকা-ফেস্টুন হাতে মঞ্চের নীচে জড়ো হওয়া ভিড়টায় মুহূর্তে তোলপাড় শুরু হল। অনেকে কাঁদছিলেন।
ফর্কলিফ্টের গ্রিলেই মাথা ঠুকে গিয়েছিল ইমরানের। ৬০ বছরের রক্তাক্ত নেতাকে দ্রুত গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় শওকত খানুম মেমোরিয়াল ক্যানসার হাসপাতালে। ইমরানের মায়ের স্মৃতিবিজড়িত সেই হাসপাতালের বাইরে ভিড় করেন সমর্থকেরা। প্রাথমিক ভাবে জানা যায়, ইমরানের কপালে, মাথার পিছন দিকে এবং ঘাড়ে চোট লেগেছে। পরে ইমরানের দলের নেতা, পাক গায়ক আবরারুল হক জানান, ইমরান বিপন্মুক্ত। তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল। আর এক নেতা আসাদ উমরকে উদ্ধৃত করে পিটিআই জানিয়েছে, ইমরানের জ্ঞান ফিরেছে, তিনি ভাল আছেন। |
মঙ্গলবার সকালে করাচির জনসভায়। তখনও জানা নেই
সন্ধেয় অপেক্ষা করছে বিপদ। ছবি: এএফপি। |
আজকের ঘটনার অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী প্রাক্তন পাক স্পিনার আব্দুল কাদির। তাঁর মতে, মঞ্চে ওঠার পথে আরও এক জন ফর্কলিফ্টে ওঠার চেষ্টা করাতেই সেটির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ওই ব্যক্তি ইমরানেরই আর এক দেহরক্ষী। ফর্কলিফট চালকের বক্তব্য, ইমরান ওঠা মাত্রই যন্ত্রটিকে চালু করার নির্দেশ ছিল তাঁর। তিনি সেই মতোই কাজ করেছিলেন। হঠাৎই দেখেন, ইমরান নীচে আছড়ে পড়লেন। লিফ্টের পাটাতন তখন মাটি থেকে কম করে চোদ্দো-পনেরো ফুট উঁচুতে।
দিন কয়েক আগে পঞ্জাবের এক জনসভায় অজ্ঞান হয়ে যান ইমরান। ডাক্তাররা বলেছিলেন, বিশ্রাম দরকার। কিন্তু বিশ্রাম নেওয়ারই সময় নেই তাঁর। সুস্থ হয়েই ফের গালিব মার্কেটে সভা করবেন ইমরান। |