|
|
|
|
উত্তরের চিঠি
|
ভয়ের জায়গা স্টেশন চত্বর |
চূড়ান্ত মৃত্যুর আগে মানুষ এক বার ভাল করে বেঁচে নেয়। কিন্তু যে শহরের অলিগলি ডার্করুমের কেয়ার অফে, সেখানে অদৃশ্যে নীলিমা ভেঙে যায়! অথচ আমরা জানতাম সাতপা এক সঙ্গে হাঁটলেই বন্ধু হই। কিন্তু এ শহর বন্ধু হতে পারল কই? নির্ভরতা নয়, নিরাপত্তা চেয়েছিল মুখগুলো। তার পরেও রাত বারোটায় সার দিয়ে পুলিশ পিকেট। ৩ নম্বর তিস্তা পারের ব্রাইট আলো বা রাতভর জেগে থাকার পরও জলপাইগুড়ির যেখানে সেখানে আজ আনওয়ান্টেডদের আনাগোনা। জরুরি বৈঠক বা রিমার্কেবল পানিসমেন্ট-এর তোয়াক্কা না করে বাবুঘাট, সমাজপাড়া, স্টেশন চত্বর, কিং সাহেবের ঘাটে চলেছে পাবলিক অফেন্স! প্রশাসনিক ভবনের পিছনে কিশোরী মৃত্যুর পর অফিসের চেয়ারগুলো খানিক নড়লেও ক্রমশ তাতে স্থিতি আসছে। প্রশাসনের আপ্রাণ প্রয়াসের পরও শহরতলির দোকানে আড়াল করে রাখা থাকবে ফেনসিডিল, এনটেন, মহার্ঘ কোরেক্স! নিঃশব্দ ঘাতক। আপনার সন্তান, স্বামী বা ভাই এক বছর সব রকম ট্রিটমেন্টের পর মৃত্যুপথযাত্রী। আপনি আননোউন। এ নেশার টাইপ এমন। ডেডলাইন ক্রস না করা পর্যন্ত জানতে-বুঝতে পারবেন না, রিলেটিভের রিলেশন আর বেশি দিন নেই। পুলিশের সচেতনতার চেয়ে ওষুধ দোকানগুলোর সচেতনতা অবশ্য মাচ নিডেড ছিল, কিন্তু তা হয়নি।
রবীন্দ্রভবনের কাছে শহর সাজতে সাজিয়ে তোলা করলা পারের পার্ক অ্যান্টিসোশালের দখলে। আলো নেই, মানুষ জন আছে, রেলিং-এ শুকোয় ধোপাবাড়ির শাড়ি। আমরা ওভারলুক করে চলে গেছি। অনেকটা দেখার পর বাবা সে বার মুখ চেপে ধরে বলেছিল “চুপ”! অনামিকা আর প্রশ্ন করেনি। শহরে ত্রিফলা আলো এসেছে, সাইন-স্ট্যাটাসের গ্রাফ মাথা তুলছে, কিন্তু তুবও রাত নটায় ক্রাউডি পোস্ট অফিস মোড়ে কে যেন নীরবতা ঢেলে দেয়। মানুষ খুঁজে পাওয়া যায় না। |
|
বালুরঘাট স্টেশন। সন্দীপন নন্দীর তোলা ছবি। |
কীসের ভয়, কাদের ভয়ে শূন্য এ শহর? ভাটিয়া বিল্ডিং চত্বর ভদ্রদের কাছে প্রোহিবিটেড জোন, কেন? সন্ধে ৭টাতে বাবুঘাটের পাশে করলা ব্রিজে ওঠার রাস্তায় জুড়ে থাকে দম ম্যারে দম। সবাই দেখছি। কিন্তু ঘরে গিয়েই গাঁধীর এই কমিশন জেলার নাগরিক কমিটি, কবি, গল্পকার, অধ্যাপক আর শিক্ষকদের শহর আজ দিকশূন্যহীন। লিটলম্যাগের প্রতিবাদে শহর হারিয়ে গেছে। কোথাও কখনও লেখা হয়নি এই পেইনফুল পোয়েম। শুধু জল, পাখি, নদীর ফিরে আসায় নিখোঁজ হল অন্ধকারের বৃত্তগুলো। প্রাক্তনরা বেঁচে থাকলে কষ্ট পেতেন। তবু প্রত্যেকদিন ঘটে চলা শহুরে হেডলাইনে দাদাঠাকুর আঁতকে ওঠেন।
একেই বুঝি বলে ডিফারেন্স। টাইম মেশিনে ধুলো হয়ে গেল শহরের প্রগতি। তবে কেন সর্বত্র দেখায়, বলে, ছাপে জলপাইগুড়ি টাউনটার হৃদয় আছে। সত্যি তো, তবে সেটা হার্টলকার। চাবি নিয়ে একে একে নিরুদ্দেশ ভূমিপুত্রের দল। রূপশ্রী হল ভেঙে হাইরাইস, ১০০ বছরের পুরনো মস-ফার্গের চারুভিলায় বুলডোজার শহরের বিবেকের ঘরে কে যেনও হঠাৎ তালা মেরে গেছে। ফাঁকা জায়গা পেলেই সাদা-কালো দলিল আত্মসমর্পণ করছে প্রোমোটার কাছে। দালান সংস্কৃতির দখলে চলে গেল এ শহর। কর্পোরেট হবার লেসন প্ল্যান শিখছে ৬৮-র তিস্তাডোবা শহর। গাছ নেই, পাখি ভ্যানিশ, পুকুর তো কবে মিসিংসৌজন্যে ফ্ল্যাট কালচার। সবুজের মুখে রড-বালি ধীরে ধীরে গুঁজে দিচ্ছে ব্ল্যাক কার্টেন। এ শহরে শৈশব এখন আর আকাশ দেখে না, পূর্ণিমার ফুলমুনটাও গ্রীলের নকশায় অন্য রকম। সবাই প্লিজড, প্রগতির বিজ্ঞাপনে। যেন শহরে সমস্যা নেই। কিন্তু প্রাত্যহিক সূর্যোদয়ের অনুমতি চায় প্রকৃতি। সবই জানে, বোঝে, তবু চুপ করে দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে যায় এপিএল মানুষরা। জেলুসিল-জিনটাক, প্রিমিয়াম, ছোট মেয়ে ঘরে ফিরলেই আনন্দে সবার ডাহুক ডাকে। তাই শহর তলিয়ে যাক, আমরা দেখব কেন? |
সন্দীপন নন্দী। বালুরঘাট
|
দক্ষিণ দিনাজপুরে সক্রিয় পাচারকারী |
দক্ষিণ দিনাজপুরে নারী পাচারচক্র প্রবল ভাবে সক্রিয় হয়ে উঠছে। কখনও বিয়ের প্রলোভন, কখনও বা চাকরির টোপ দেখিয়ে কিশোরীদের ভিন্ন রাজ্যে পাচার করা হচ্ছে। জেলা গোয়েন্দা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে প্রতি বছর এই জেলার ৮টি থানা এলাকার শহর ও গ্রামগুলি থেকে গড়ে ১০০ মহিলা নিখোঁজ হচ্ছেন। এর মধ্যে অধিকাংশই কিশোরী যাদের বয়স ১৩ থেকে ২০-র মধ্যে। তাদের ভিন রাজ্যে পাচার করে দেওয়া হচ্ছে। কিছু দিন আগে হিলির বাসিন্দা পাঞ্জেরি বানু নামে সতেরো বছরের কিশোরীকে পাচারের আগে সুদূর বেঙ্গালুরু থেকে উদ্ধার করে হিলি থানার অফিসারেরা এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
সরকারের নির্দেশ, সচেতনতা শিবির ও বিভিন্ন আইন প্রচার সত্ত্বেও পাচারকারীরা সক্রিয় এই জেলায়। প্রত্যেক বছরই শিশু, কিশোরী ও মানুষ পাচারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। মানুষের অভিযোগ, নিখোঁজদের খোঁজ বা ওই বিষয়ক অভিযোগ জানাতে গেলে জেলার থানাগুলি হয়রান করে বা অভিযোগ নিতে চায় না। এ অবস্থায় জেলা পুলিশ এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা যৌথ কর্মসূচি নিয়ে নারী পাচার প্রতিরোধে অভিযানে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিন দিক সীমান্ত দিয়ে ঘেরা দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে। কর্মসংস্থানের তেমন সুযোগ না থাকায় এ জেলায় দারিদ্রতা চরম আকার নিয়েছে। অর্থের প্রলোভন ও বিয়ের টোপে জেলার যুবক যুবতী, কিশোর কিশোরীর বাইরে নিয়ে যাওয়া খুবই সহজ। এই সুযোগকেই কাজে লাগাচ্ছে পাচারকারীরা। জেলার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দেওয়া ছোট্ট একটি পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে মানুষ এবং নারী পাচারের ঘটনা কতটা উদ্বেগজনক এ জেলায়। ২০১০ সালে ৬ হাজার ৮০০ জন ভিন রাজ্যে কাজে গেলেও তার মধ্যে ৮৫ জনের খোঁজ নেই। ২০১১ সালে প্রায় ১০ হাজার জন কাজে গেলেও তার মধ্যে ৯০ জনের খোঁজ পাওয়া যায়নি। ২০১২ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত পাঁচ হাজার মানুষ কাজের খোঁজে ভিন রাজ্যে গেলেও তার মধ্যে ২০ জন নিখোঁজ। যারা নিখোঁজ হচ্ছে তাদের বেশির ভাগেরই খোঁজ পাওয়া যায় না। কম বয়সি মেয়েদের পরিণতি ভয়ঙ্কর হয়। পতিতালয়ে বিক্রি হয়ে যাওয়া, কারও বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করা কিংবা যৌন শোষণের মুখে পড়ে শেষ পর্যন্ত সর্বস্বান্ত হয়ে যায় এই সমস্ত মেয়েরা।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশ অফিসাররা জানিয়েছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আড়কাঠি ও দালালদের মাধ্যমে নারী পাচার চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা কলকাতার সোনাগাছিতে নিয়ে গিয়ে মেয়েদের বিক্রি করে দিচ্ছে। বিগত ৩৪ বছর ক্ষমতায় থেকেও দক্ষিণ দিনাজপুরের প্রাক্তন সমাজকল্যাণমন্ত্রী বিশ্বনাথ চৌধুরী, বালুরঘাটের সাংসদ প্রশান্ত মজুমদার, বালুরঘাট পৌরসভার চেয়ারম্যান সুচেতা বিশ্বাস এবং জেলা পরিষদের সহকারি সভাধিপতি অমিত সরকার এই জেলায় নারী ও কিশোরী পাচার এবং নারী নির্যাতন বন্ধ করতে পারেননি। এমনকী তাঁদের পক্ষ থেকে কোনও সরকারি উদ্যোগ ও প্রশাসনিক বৈঠকের সিদ্ধান্ত এর কোনও কিছুই গ্রহণ করতে লক্ষ করা যায়নি।
জোলার এ অবস্থায় তাই অবিলম্বে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা থেকে নারী ও কিশোরী পাচার বন্ধ করতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং এ রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছি। |
জয়দীপ গুহ। বালুরঘাট
|
নিজভূমে পরবাসী |
মেখলিগঞ্জে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার ও পারে লক্ষ লক্ষ বাংলা ভাষী ভারতীয় নাগরিক নিজভূমে পরবাসী হয়ে রয়েছেন। ওপারে বসবাসকারী মানুষেরা স্বাধীন দেশের নাগরিক না পরাধীন দেশেরসে প্রশ্ন জনসমক্ষে উঠে আসছে। দেশের ভূখণ্ড থেকে কাঁটা তারের বেড়া অতিক্রম করে নিজেদের বাড়ি বা জমিতে যেতে দশ বার ধাক্কা খেতে হয়। বাড়তি পাওনা সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর প্রহরীগণ কর্তৃক প্রদত্ত লাঞ্ছনা, গঞ্জনা ও গালিগালাজ। বেড়ার ওপারে নিজেদের জমির ফসল কাটতে গেলে এবং সেই কাটা ফসল ও পারে বহন করে আনতে হলেও ওই বাহিনীর অনুমতি নিতে হচ্ছে। ফলে এ সকল মানুষেরা প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে ভুগছেন চরম দুর্ভোগ।
দুর্ভোগ যন্ত্রণা লাঘবে বাসিন্দারা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে প্রয়োজনে নিজেদের যাতায়াতের সুবিধার্থে কাঁটা তারের বেড়ার মাঝে অবস্থিত গেটগুলি ২৪ ঘণ্টা খোলার দাবিতে সোচ্চার।
কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আরও দাবি জানিয়েছেন তাঁরা, জিরো পয়েন্ট ধরে কাঁটাতারের বেড়া দিতে হবে। তাদের বক্তব্য, উভয় দিকে দেড়শো মিটার করে জমি বাদ দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার ফলে এ রাজ্যের ১০টি জেলার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটা তারের বেড়ার ওপারে লক্ষ লক্ষ বিঘা কৃষিজমি, বসবাসের বাড়িঘর, চা বাগান হাতছাড়া হয়ে গেছে। বেড়ার ও পারে বসবাসকারী ভারতীয়দের কার্যত সাংবিধানিক অধিকার নেই। তাই আজ তারা নিজভূমে পরবাসী। কাঁটা তারের বেড়ার ও পার থেকে সন্ধ্যার আগেই ওই গেট বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে আর ওপারে অসহনীয় এক বুক যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে বর্তে আছেন এক দল ভারতীয়। |
হৈমন্তী ভট্টাচার্য। জলপাইগুড়ি |
|
|
|
|
|