বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তবে, অনেক সময়ে হা-হুতাশও!
যেমন অমলকৃষ্ণ দাস।
সারদা গোষ্ঠী তাঁকে বলেছিল, লালবাগে নাকুড়তলায় তাঁর ২১ বিঘা জমি ১ কোটি ১৯ লক্ষ টাকায় কিনে সেখানে হাসপাতাল তৈরি করবে। সেই কথা শুনে জমি বিক্রি করতে রাজিও হয়েছিলেন তিনি। অমলবাবুর দাবি, তারপরে ২০১১ সালের মে মাসে সাকুল্যে ৭৫ লক্ষ টাকা ঠেকিয়ে সারদা গোষ্ঠী কিন্তু হাত গুটিয়ে নিয়েছে। দিচ্ছি-দেব করে বকেয়া ৪৪ লক্ষ টাকা আর দেয়নি তারা। জমি হস্তান্তরের সময়ে অমলবাবু জানতে পেরেছেন, হাসপাতালও হচ্ছে না। সারদা-র আগ্রহ আবাসন, হোটেল, বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স, কমিউনিটি হলে। অমলবাবুর দাবি, বকেয়া মেটাতে তিনি তাগাদা দেওয়ায় সারদা আশ্বাস দিয়েছিল, পরিবারের অন্তত ১০ জনকে ওই প্রকল্পে চাকরি দেওয়া হবে। তা-ও বিশ বাঁও জলে।
|
অমলবাবু জানান, পাওনা টাকার জন্য তারপরে তিনি বারবারই তাগাদা দিয়েছেন। তাঁর এক জামাই অশোককুমার সিংহ কলকাতায় গিয়ে সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে দেখাও করেছিলেন। অশোকবাবু বলেন, “মনোজবাবু আমাকে তাঁদের ডায়মন্ড হারবারের দফতরে নিয়ে যান। সেখানে রাত ১১টা নাগাদ সুদীপ্তবাবু আমার সঙ্গে দেখা করেন। তখন তিনি বকেয়া দিয়ে দেওয়ার আশ্বাসও দেন।” কিন্তু অমলবাবুর দাবি, “বকেয়া বাদই দিন, জমি রেজিস্ট্রির খরচও মেলেনি।” তাঁর অভিযোগ, “সারদা গোষ্ঠী আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের দিকে এখন আমরা তাকিয়ে রয়েছি।” মুর্শিদাবাদাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর জানান, পুলিশ এই ব্যাপারে তদন্ত শুরু করেছে। অমলবাবু ও অশোকবাবুর সঙ্গে কথাও বলা হয়েছে। পুলিশ সুপার বলেন, “সারদার কোন শাখার টাকা ওই জমি কিনতে বিনিয়োগ করা হয়েছে, তা জানার জন্য সুদীপ্ত সেন ও মনোজ নেগেলকে মুর্শিদাবাদে নিয়ে আসার আবেদন করা হবে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে।”
তবে ওই জমিতে এখনও কোনও প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি। অমলবাবুই ওখানে চাষ করছেন। মুর্শিদাবাদ-জিয়াগঞ্জ ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সারদা গোষ্ঠীর নামে লালবাগ এলাকায় বেশ কয়েক একর জমি কেনা হয়েছে। সম্প্রতি জেলা গোয়েন্দা দফতরের অফিসাররা ব্লক ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরে গিয়ে ওই জমির সন্ধান পান। তার মধ্যে নাকুড়তলা এলাকার ওই জমিটিও রয়েছে। লালবাগের অতিরিক্ত সাব-রেজিস্ট্রার সুমন্ত ধর বলেন, “কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা এক সঙ্গে ২১ বিঘে জমি কেনাবেচা করতেই পারেন। সে ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধে নেই।”
সারদা গোষ্ঠীকে ওই জমি বিক্রির ব্যাপারে মধ্যস্থতাকারীর কাজ করেছিলেন ওই লগ্নি সংস্থার দুই এজেন্ট। পুলিশ তাঁদের খুঁজছে। |