|
|
|
|
অলচিকি লিপির জনকের জন্মজয়ন্তী জঙ্গলমহল জুড়ে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম |
অলচিকি লিপির জনক পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মুর ১০৯তম জন্মজয়ন্তী সাড়ম্বরে পালিত হল জঙ্গলমহল জুড়ে।
রবিবার দুপুরে ঝাড়গ্রাম শহরের ভরতপুরে স্থানীয় একটি আদিবাসী ক্লাবের উদ্যোগে অলচিকি-স্রষ্টার একটি আবক্ষ শ্বেত মর্মর মূর্তি স্থাপন করা হয়। ক্লাব প্রাঙ্গণে স্থাপিত মূর্তিটির আবরণ উন্মোচন করেন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা। বিশিষ্টদের মধ্যে ছিলেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাঁওতালি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শ্যামচরণ হেমব্রম, বিশিষ্ট সাঁওতালি সাহিত্যিক খেরওয়াল সরেন, সমাজসেবী দাখিন মুর্মু প্রমুখ। অনুষ্ঠানে
সুকুমারবাবু বলেন, “পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলায় মোট ১,১৭১ জন অলচিকি পার্শ্বশিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। এর মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরের ২৯০টি স্কুলে অলচিকি পার্শ্বশিক্ষকের সংখ্যা ৪৪৮জন। জঙ্গলমহলের আরও বেশি সংখ্যক স্কুলে সাঁওতালি ভাষায় অলচিকি লিপিতে পাঠ্যক্রম চালু করার চেষ্টা হচ্ছে।”
ঝাড়গ্রামে একলব্য আদর্শ আবাসিক বিদ্যালয়েও এ দিন সকালে অলচিকি-জনকের স্মরণে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রঘুনাথ মুর্মু প্রসঙ্গে আলোচনা করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তথা বিশিষ্ট লোকশিল্প ও সংস্কৃতি গবেষক সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং শিক্ষাব্রতী রাজু মুর্মু। সাঁওতালি লোক সংস্কৃতির অনুষ্ঠান পরিবেশন করে ছাত্রছাত্রীরা।বিনপুরের দহিজুড়ি মহাত্মা বিদ্যাপীঠে এক অনুষ্ঠানে রঘুনাথ মুর্মুর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে আলোচনা করেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি স্বপন মুর্মু, সাঁওতালদের সর্বোচ্চ সামাজিক সংগঠন মাঝি মাডওয়ার ঝাড়গ্রাম ব্লকের সভাপতি সুন্দর টুডু, আদিবাসী যুব সংগঠন ‘জুয়ান গাঁওতা’র সম্পাদক প্রবীর মুর্মু প্রমুখ। পরিবেশিত হয় ছাত্রছাত্রীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
|
|
রঘুনাথ মুর্মু।—নিজস্ব চিত্র। |
গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকের কেন্দুগাড়ি অঞ্চলের পুটুলিয়া গ্রামে ‘পুটুলিয়া হিহিড়ি পিপিড়ি সঙ্ঘ’-এর উদ্যোগে রঘুনাথ-স্মরণ অনুষ্ঠানে ছিলেন গোপীবল্লভপুরের বিধায়ক চূড়ামণি মাহাতো, নয়াগ্রামের বিধায়ক দুলাল মুর্মু, জেলা তৃণমূল সভাপতি দীনেন রায় প্রমুখ।
১৯০৫ সালের ৫ মে ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার ডাহারডিহি গ্রামে জন্মেছিলেন সাঁওতালি দার্শনিক ও সাহিত্যিক পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু। তিনি সাঁওতাল সমাজে ‘গুরু গমকে’ নামে বেশি পরিচিত। আগে সাঁওতালি ভাষার কোনও লিপি ছিল না। তাই সাঁওতাল সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েদের মাতৃভাষায় পড়াশুনার সুযোগ পেত না। রঘুনাথ নিজে ওড়িয়া মাধ্যম স্কুলে পড়তে গিয়ে অসুবিধায় পড়েন। তখনই স্থির করেন, নিজেদের ভাষার বর্ণমালা তৈরি করবেন। পেশায় শিক্ষক রঘুনাথ ১৯২৫ সালে মাত্র কুড়ি বছর বয়সে অলচিকি লিপি সৃষ্টি করেন। এই লিপির প্রচার ও প্রসারের জন্য রঘুনাথ ও তাঁর ছায়াসঙ্গী সামু মুর্মু সাঁওতাল গ্রামে গিয়ে দেওয়াল চিত্র ও সঙ্গীতের মাধ্যমে গ্রামগঞ্জে অলচিকি লিপির প্রচার করতেন। রঘুনাথ অলচিকি লিপির ব্যাকরণও রচনা করেন। এছাড়া সাঁওতালি ভাষায় অলচিকি লিপিতে কবিতা, নাটক, উপন্যাস, গল্প মিলিয়ে দেড়শোটি গ্রন্থ রচনা করেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা সরকার ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাঁকে সম্মানিত করেছিল। রাঁচি বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সাম্মানিক ডি লিট উপাধি দেয়। ১৯৮২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রঘুনাথ মুর্মুর মৃত্যু হয়। তার আগেই ১৯৭৯ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার অলচিকি লিপিকে মান্যতা দেয়। ২০০৩ সালের ২২ ডিসেম্বর কেন্দ্র সরকারের উদ্যোগে সাঁওতালি ভাষা ও অলচিকি লিপিকে সংবিধানের অষ্টম তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপর সাঁওতাল সংগঠনগুলির লাগাতার আন্দোলনের ফলে ২০১২ সালের ১০ ডিসেম্বর বর্তমান রাজ্য সরকার সাঁওতালি ভাষাকে দ্বিতীয় ভাষার মর্যাদা দেয়। |
|
|
|
|
|