এত অবিশ্বাস্য ম্যাচ আইপিএলে কখনও দেখেছি কি না মনে করতে পারছি না। একটা টিমের একজন ফিল্ডার একাই চারটে ক্যাচ ফেলছে, যার মধ্যে আবার পরপর তিন বলে তিনটে, আবার তারাই কিনা শেষ পর্যন্ত বিপক্ষকে ধ্বংস করে ম্যাচ জিতে যাচ্ছে! ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা সবাই জানে, কিন্তু তা বলে এ রকম কাণ্ডকারখানা চোখের সামনে ঘটতে দেখলে নিজে ক্রিকেটার হয়েও আশ্চর্য লাগে।
রবিবারের মুম্বই ইন্ডিয়ান্স বনাম চেন্নাই সুপার কিংস ম্যাচের কথা বলছি। কায়রন পোলার্ডের অদ্ভুত সব ক্যাচ ফেলার কথা বলছি। মুম্বইয়ের দুর্ধর্ষ জয়ের কথা বলছি।
এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা তিন ফিল্ডারের নাম করতে হলে পোলার্ড অবশ্যই তাদের মধ্যে একজন। কিন্তু এটা কী করল ও?
জনসনের পরপর তিন বলে একই রকম ভাবে কাট মারতে গেল মাইক হাসি, আর পোলার্ড কি না পয়েন্টে দাঁড়িয়ে একই ভাবে তিনটে ক্যাচ ফেলে দিল! শেষেরটা আবার ওর নাকেও লাগল! চূড়ান্ত অবিশ্বাস্য একটা কাণ্ড ঘটিয়ে দেখলাম পোলার্ড হাসছে। মনে হয়, ও নিজেও বিশ্বাস করতে পারেনি ব্যাপারটা। ক্রিকেটও এই জিনিস কখনও দেখেছে কি? মনে করতে পারছি না। |
আপ্লুত
সচিনদের জয়ের পর মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের মালিক ও মালকিন। |
চেন্নাই তবু ম্যাচটা হারল অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসে ভুগে। দেখুন, মাত্র ১৪০ তাড়া করতে নেমে চেন্নাইয়ের মতো টিমের ৭৯ রানে শেষ হয়ে যাওয়ার পিছনে একটা কারণই থাকে আত্মতুষ্টি। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি বোধহয় ধরেই নিয়েছিল কেউ ওদের হারাতে পারবে না। আর ধোনির নিজেরও এত পরে নামার কারণ বুঝলাম না।
উল্টো দিকে মুম্বই একদম ঠিক সময়ে ‘পিক’-এর দিকে ছুটছে। অনেকগুলো ফ্যাক্টর ওদের ক্ষেত্রে খেটে যাচ্ছে যা দুশ্চিন্তায় ফেলবে কেকেআরকে। গম্ভীররা যদি স্ট্র্যাটেজি না পাল্টায়, যদি চেনা ফর্মুলা ধরেই এগোতে যায়, মুম্বই ম্যাচ বার করা মুশকিল আছে।
কেন বলছি? সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, ওয়াংখেড়ের উইকেট আর ইডেনের উইকেট এক জিনিস নয়। আইপিএলে এখনও পর্যন্ত মোটামুটি সমস্ত ফ্র্যাঞ্চাইজি ঘরের মাঠে মস্তানি দেখাচ্ছে। মুম্বইও। পরিষ্কার বলি, ওয়াংখেড়েতে কোনও স্পিনিং ট্র্যাক থাকবে না কেকেআরের জন্য। থাকবে বাউন্সি উইকেট, যেখানে বল ভাল ব্যাটে আসেব, পেসাররা সুবিধা পাবে। রবিবার চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে মিচেল জনসন, লাসিথ মালিঙ্গার বোলিং দেখলেন? ওরা কিন্তু ফর্মে ফিরেছে। মালিঙ্গার ইয়র্কারগুলো জায়গায় পড়ছে। এ দিন আবার দেখলাম, আর একটা বল করছে। স্লো ইয়র্কার। ব্যাটসম্যান গতির হেরফেরে বোকা বনে যাচ্ছে। যেমন মরিস হল। বাঁ হাতি জনসন বল ভিতরে আনতে শুরু করেছে। কালিস-বিসলাদের পক্ষে ওদের সামলানো সহজ হবে না। |
ক্যাচ ফেলার হ্যাটট্রিক |
|
|
|
চতুর্থ বল |
পঞ্চম বল |
ষষ্ঠ বল |
তিন মুহূর্ত। ক্যাচ ফস্কানোর পর পোলার্ড। |
|
আরও একটা ব্যাপার বুঝতে হবে কেকেআরকে। সব উইকেটেই সুনীল নারিন-সেনানায়কে দিয়ে ম্যাচ বার করা সম্ভব নয়। আমি তো বলব, গম্ভীর ওয়াংখেড়েতে তুমি সেনানায়কেকে খেলিও না। ওর বদলে ব্রেট লি-কে খেলাও। নারিনও ওয়াংখেড়েতে কতদূর কী করতে পারবে সন্দেহ আছে। বালাজিকে কোনও অবস্থাতেই খেলানোর কথা ভাবা ঠিক হবে না। ওর বলে গতি নেই। দরকারে সামি আহমেদকে খেলানো হোক। লক্ষ্মীরতন শুক্ল আইপিএল থেকে বাইরে চোটের জন্য। ও থাকলে মুম্বই ম্যাচে সুবিধা হত। ওর বোলিংটা ওয়াংখেড়ে উইকেটের সঙ্গে একদম মাননসই। গম্ভীরকে আরও একটা জিনিস করতে হবে। ও যদি প্রথম পাঁচ-ছ’ওভার টিকে যায়, যেন চেষ্টা করে পুরো কুড়িটা ওভার খেলতে। কেকেআরে গম্ভীর ছাড়া আর নির্ভর করার মতো ব্যাটসম্যান কোথায়? কালিস ‘রান আ বল’ খেলছে। পাঠান আজ রান করল, কাল আবার হয়তো ফেল। মনে রাখা ভাল, চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে জেতার পর কেকেআরের বিরুদ্ধে চার্জর্ড হয়ে নামবে মুম্বই। রোহিত শর্মাকেও দেখছি অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়ে টিমকে টানতে শুরু করে দিয়েছে। যা মনে হচ্ছে, আইপিএল সিক্সের সবচেয়ে কঠিন ম্যাচে মঙ্গলবার নামতে যাচ্ছে কেকেআর।
|
ক্রিকেট জীবনে এমন অবিশ্বাস্য ঘটনা আমি আর কখনও দেখিনি।
ডেল স্টেইন |
পরপর তিনটে ক্যাচ মিস করার জন্য খেলার শেষে পোলার্ড আমার কাছে এসে ক্ষমা চেয়েছে। বলেছে, এর জন্য আজ রাতে ড্রিঙ্কসের খরচ ওর।
মিচেল জনসন |
|