বাজারের আশা ছিল বর্ষণের। হয়েছে ঝিরঝিরে বৃষ্টি। ধুলো মরলেও মন ভরেনি।
৫০ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমার আশায় বসে থাকা শিল্প, শেয়ার বাজার এবং ঋণগ্রহীতাদের ভাগ্যে জুটেছে ২৫ বেসিস পয়েন্ট। অর্থ মন্ত্রক আরও খানিকটা সুদ হ্রাস চাইলেও তা উপেক্ষা করে আবারও কড়া মনোভাব দেখিয়েছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের শীর্ষ কর্তা ডুব্বুরি সুব্বারাও। যুক্তিও দিয়েছেন তাঁর সিদ্ধান্তের পক্ষে। পাশাপাশি এ কথাও বলতে ভোলেননি, পরিস্থিতির পরিবর্তন না-হলে আর সুদ কমার সম্ভাবনা এখন নেই।
চলতি বছরে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির হার নিয়েও অর্থ মন্ত্রকের সঙ্গে ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন সুব্বারাও। অর্থ মন্ত্রক যেখানে ৬.১ শতাংশ থেকে ৬.৭ শতাংশ বৃদ্ধির আশা করছে, সেখানে বৃদ্ধির হার মাত্র ৫.৭ শতাংশে পৌঁছতে পারে বলে মনে করছেন সুব্বারাও। ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তাঁর বড় চিন্তা চলতি খাতে বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি বা ক্যাড নিয়ে। হিসেব মতো ২০১২-’১৩ আর্থিক বছরে ক্যাড পৌঁছতে পারে ৫ শতাংশে, যা ২.৫ শতাংশের মধ্যে থাকা বাঞ্ছনীয়। বিশ্ব বাজারে সোনা এবং তেলের দাম কমায় এ ব্যাপারে কিছুটা সুরাহা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। অবস্থার উন্নতির জন্য বেশি মাত্রায় রফতানি এবং বিদেশি লগ্নি বৃদ্ধি অত্যন্ত প্রয়োজন।
২৫ বেসিস পয়েন্ট কমে রেপো রেট (যে-হারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে টাকা ধার দেয়) এখন এসে দাঁড়িয়েছে ৭.২৫ শতাংশে। এতে সুদ হ্রাসের সম্ভাবনা কম বলে ইতিমধ্যেই জানিয়েছে কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক। অর্থাৎ এর সুফল পৌঁছবে না শিল্প এবং অন্য ঋণগ্রহীতাদের ঘরে। অন্য দিকে সুদ না-ও কমতে পারে ব্যাঙ্কের জমা প্রকল্পগুলিতে। অর্থাৎ টাকার বাজারে বড় কোনও পরিবর্তন আসবে না রেপো রেট কমার কারণে। ২০১৪ সালের মার্চ মাসের মধ্যে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার ৫ শতাংশে নেমে আসতে পারে বলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক মনে করছে। শুধু টাকার জোগান নিয়ন্ত্রণ করে নয়, খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি রুখতে উৎপাদন বৃদ্ধিরও প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে।
চাহিদা মতো সুদ না-কমায় শেয়ার বাজার আগের দু’বারের মতো এ বারও বেশ আশাহত। শুক্রবার দুই সূচকের পতন তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। সুদ যে-অন্ততপক্ষে ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমবে, তা বাজার ধরেই নিয়েছিল এবং সেই হিসেবে তো বটেই আরও ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমার আশায় আগের কয়েক দিনে তরতরিয়ে বেড়েছিল সেনসেক্স ও নিফটি। আশার তুলনায় সুদ অর্ধেক হ্রাস পাওয়ায় সূচক হিসেব মতো নিজের অবস্থান ঠিক করে নিয়েছে। সুদ কমার আশায় যে-সব শেয়ার বেশি উঠেছিল যেমন: ব্যাঙ্ক, আবাসন এবং গাড়ি সংস্থার শেয়ার, তারাই এই পতনে প্রথমে ধরাশায়ী হয়েছে। সোমবার বাজার কোন জায়গা থেকে শুরু করে সেটাই এখন দেখার। পরিস্থিতি যা, তাতে এখনই কোনও বড় উত্থান আশা করছেন না কেউ। এই বাজারে এখন যদি আরও খানিকটা সংশোধন হয়, তবে একটু দীর্ঘ মেয়াদের জন্য ইক্যুইটিতে লগ্নি করা যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
না-বুঝে ভুল প্রকল্পে লগ্নি করে হাত পুড়িয়েছেন অসংখ্য মানুষ। শুধু তথাকথিত চিট ফান্ড নয়, শহরের অনেক শিক্ষিত মানুষ ঠকেছেন ভুল বিমা পলিসি এবং মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি করেও। গ্রামে তো বটেই, শহরেও বহু বিমা এবং লগ্নিপত্র বিক্রি করা হয়েছে ভুল বুঝিয়ে। এত সব ঘটনার পরে মানুষকে লগ্নির ব্যাপারে অত্যন্ত সাবধানী হতে হবে। অতি আকর্ষণীয় প্রকল্প দেখলেই সন্দেহ করতে শিখতে হবে। এজেন্ট যতই পরিচিত হোন, যত ভালই তিনি বোঝান না-কেন, প্রকল্পটি নিজে যাচাই করে দেখতে হবে। বেশি লাভের লোভ সংবরণ করতে শিখতে হবে। দেখতে হবে, একটু বেশি সুদ পেতে গিয়ে আসলটা যেন খোওয়া না-যায়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, সংশ্লিষ্ট কোম্পানি সম্পর্কে এজেন্ট নিজেই বিশেষ কিছু জানেন না। যেটা তিনি জানেন, সেটাও হয়তো পুরোপুরি সত্য নয়।
সারদা কাণ্ডের পর গ্রামবাংলার অর্থনীতিতে একটি বড় পরিবর্তন আসতে চলেছে। শতাধিক তথাকথিত চিট ফান্ডে হাজার হাজার কোটি টাকা খুইয়ে গ্রামের গরিবরা আরও গরিব হলেন। ওই সব অর্থলগ্নি সংস্থায় কর্মরত বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়লেন। আয় তো বন্ধ হলই, লগ্নিকারীদের ক্ষোভ সামলানোই এজেন্টদের কাছে এখন বড় সমস্যা।
এত ঘন কালো সমস্যার চার ধারে একটি রুপোলি রেখাও কিন্তু আছে। এই ধাক্কায় ঠেকে শিখবেন বহু মানুষ, এমনকী সরকারও। সারদা কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর জানা গেল, গ্রামবাংলায় কী পরিমাণ লগ্নিযোগ্য টাকা ছিল! ব্যাঙ্ক এবং ডাকঘর তৎপর না-হওয়ায় এবং কিছু অসাধু লোকের পাল্লায় পড়ে প্রতারিত হলেন অসংখ্য ক্ষুদ্র আয়ের মানুষ। এত কাণ্ডের পর এখনও অনেক মানুষ এ ধরনের প্রতারক সংস্থার প্রকল্পে মাসিক কিস্তি জমা করছেন বলে খবর আসছে। রেজিস্ট্রার অফ কোম্পানিজ-এর সার্টিফিকেট দেখিয়ে নিজেদের ‘সরকারি কোম্পানি’ বলে পরিচয় দিচ্ছে কোনও কোনও অর্থলগ্নি সংস্থা।
সরকার এবং প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের উচিত হবে: টেলিভিশন বিতর্ক বন্ধ করে গ্রামে গিয়ে মানুষকে রক্ষা করা, প্রতারক অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে প্রত্যন্ত গ্রামে জোরালো প্রচার শুরু করা। ব্যাঙ্ক এবং ডাকঘরের উচিত, এই সুযোগ হাতছাড়া না-করা। এদেরও কর্তব্য, জোরদার প্রচার অভিযানে নেমে পড়া। |