উন্নয়নশীল দেশগুলিকে ডায়েরিয়া ও নিউমোনিয়া মুক্ত করতে একটি সুসংহত সর্বজনীন পরিকল্পনা (গ্লোবাল অ্যাকশন প্ল্যান) নিয়েছে ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তাঁদের তৈরি করা রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, সারা বিশ্বে ১ কোটি ৬ লক্ষ শিশু ডায়েরিয়া ও নিউমোনিয়ায় মারা যায়। তাদের মধ্যে ২৯ শতাংশেরই পাঁচ বছর বয়সের আগে মৃত্যু হয়। ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশেও ডায়েরিয়ায় শিশু মৃত্যুর হার নেহাত কম নয়। ২০২৫ সালের মধ্যেই এই পরিকল্পনা সফল করতে চায় তারা।
ইউনিসেফের রিপোর্ট বলছে, পশ্চিমবঙ্গের নয় শতাংশ শিশুই জন্মানোর দু’সপ্তাহের মধ্যে ডায়েরিয়ায় ভোগে। গ্রামীণ এলাকায় তার ত্রিশ শতাংশেরই কোনও রকম চিকিৎসা হয় না। শহরাঞ্চলে এই সংখ্যাটা তুলনামূলক কম, ১৫ শতাংশ। সর্বজনীন পরিকল্পনাতে বলা হয়েছে, ডায়েরিয়া ও নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করতে মায়ের দুধের কোনও জুড়ি নেই। মায়ের দুধ থেকে বঞ্চিত শিশুদেরই সব চেয়ে বেশি ডায়েরিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অথচ এ রাজ্যে মাত্র ২৮ শতাংশ শিশু ন’মাস বয়স পর্যন্ত শুধুমাত্র মায়ের দুধ খায়। পাঁচ মাস বয়স পর্যন্ত শুধুমাত্র মায়ের দুধ খায় মোটে পঞ্চাশ শতাংশ শিশু। তাই নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, যাতে জন্মের পর থেকেই শিশুদের মায়ের দুধ খাওয়ানো হয়, তার প্রচার করা হবে।
অন্য দিকে, রাজ্যের পঁয়ত্রিশ শতাংশ শিশুরই জন্মের পর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় টীকাকরণ করানো হয় না। অথচ কেরলে প্রায় আশি শতাংশ শিশুরই জন্মের পরে টীকাকরণ করানো হয়। ইউনিসেফের এক আধিকারিক জানান, শিশুদের মধ্যে ডায়েরিয়ায় মৃত্যু ঠেকাতে জন্মের পরেই প্রতিষেধক নেওয়া ও শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়া সব চেয়ে জরুরি। এছাড়াও প্রয়োজন ভিটামিন এ, লোহা, আয়োডিনের মতো নানা উপাদানের, যা সামান্য পরিমাণে হলেও পুষ্টির জন্য খুবই প্রয়োজন।
শিশু চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ বলেন, “জন্মের পরে প্রথম কয়েকটা মাস শুধুমাত্র মায়ের দুধ খেলে তা শিশুর শরীরে বর্মের কাজ করে। ডায়েরিয়া ঠেকাতে বিভিন্ন ধরনের প্রচারে এই বিষয়টিও সামনে আনা দরকার।”
কলকাতার ইউনিসেফ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যে শিশুদের মধ্যে ডায়েরিয়ার প্রকোপ মূলত ভাইরাসঘটিত হলেও, জীবাণুঘটিত ডায়েরিয়ার প্রকোপও কম নয়। স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাবই এর মূল কারণ। সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, রাজ্যে প্রায় ৩৪ শতাংশ পরিবারই শিশুর প্রতিষেধক নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন না। একশো জনে ২০ জন মা জানেনই না প্রতিষেধক সম্পর্কে। অনেক ক্ষেত্রে আবার দেখা যায়, যে সময়ে সরকারি তরফে শিশুকে প্রতিষেধক দেওয়ার কর্মসূচি নেওয়া হয়, অনেক পরিবারের পক্ষেই সেই নির্দিষ্ট সময়ে শিশুকে নিয়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা শিবিরে যাওয়া সম্ভব নয়।
রয়েছে সাধারণ পরিচ্ছন্নতার অভাবও। ইউনিসেফের এক আধিকারিক বলেন, “খাওয়ার আগে বা শৌচাগার ব্যবহারের পরে হাত না ধোওয়া থেকে সংক্রমণ হতে পারে। অপুষ্টির কারণে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়াও ডায়েরিয়ার আর একটি কারণ। ডায়েরিয়ার প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে নুন চিনির জল খাওয়ানোর জন্যও প্রচার করা হচ্ছে।
প্রচারের বিষয়টিতে জোর দিচ্ছে স্বাস্থ্য দফতরও। স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, “আগের তুলনায় পরিস্থিতি অনেকটাই উন্নত হয়েছে। কিন্তু আরও প্রচার দরকার। হাতের কাছে যা রয়েছে, সে সব দিয়েই প্রাথমিক লড়াইটা করা সম্ভব।”
ডায়েরিয়ার পাশাপাশি নিউমোনিয়ার প্রকোপেও মৃত্যু খুব কম নয়। সারা বিশ্বে নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুদের মোটে ৩১ শতাংশ অ্যান্টিবায়োটিক পায়। অপুষ্টি তো বটেই, ঘরের দূষিত বাতাস, উনুনের ধোঁয়া ইত্যাদিও শিশুর নিউমোনিয়ার কারণ হতে পারে বলে ইউনিসেফ সূত্রে জানা গিয়েছে। ইউনিসেফের ওই আধিকারিক জানান, গ্রামাঞ্চলে শিশুর নিউমোনিয়া হয়েছে, এটাই বুঝতে পারেন না অধিকাংশ মা। সমীক্ষাতেও দেখা যাচ্ছে, দশে ছ’টা ক্ষেত্রেই থেকে সাব সেন্টারগুলি গ্রাম থেকে দূরে। অসুস্থ শিশুকে নিয়ে দ্রুত সেখানে পৌঁছনো অনেক সময়েই সম্ভব হচ্ছে না গ্রামের মানুষের পক্ষে।
|
চিকিৎসায় গাফিলতিতে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠল কোচবিহার এমজেএন হাসপাতালে। শনিবার বিকালে ঘটনাটি ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামলায়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম অবর আলি (৬০)। তাঁর বাড়ি দিনহাটার গীতালদহে। হৃদরোগে আক্রান্ত ওই ব্যক্তিকে সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ পরিবারের লোকজন হাসপাতালে ভর্তি করেন। বিকালে তিনি মারা যান। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, চিকিৎসার গাফিলতিতে ঘটনাটি ঘটেছে। দুপুরে রোগীর অবস্থা সঙ্কটজনক হলে নার্সদের জানানো হলেও তাঁরা গুরুত্ব দেননি। এমন কী, কোনও চিকিৎসক আসেননি। অবর আলির মৃত্যুর পর হাসপাতালে উত্তেজনা ছড়ায়। হাসপাতাল সুপার জয়দেব বর্মন বলেন, “চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ ঠিক নয়। রোগীর অবস্থা ভর্তির সময়ই সঙ্কটজনক ছিল।” |