গা ঢাকা দেওয়ার তিন দিন আগে মিডল্যান্ড পার্কের দফতরে ডেকে সুদীপ্ত সেন সংস্থার জমি, রিসর্ট-সহ সম্পত্তি বিক্রি করে আমানতকারীদের টাকা ফেরৎ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন, এই দাবি করলেন সারদা শিলিগুড়ির দফতরের জেনারেল ম্যানেজার গৌতম চৌধুরী, রিজিওন্যাল ম্যানেজার অভিজিৎ চক্রবর্তী-সহ অনেকেই। বৃহস্পতিবার শিলিগুড়িতে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে গৌতমবাবু এই দাবি করেন তাঁরা। ওই সাংবাদিক সম্মেলনের পরেই আমানতকারীদের একাংশের প্রশ্নের মুখে পড়েছেন সারদা গোষ্ঠীর ওই আধিকারিকরা। ক্ষুব্ধ আমানতকারীদের অনেকেরই প্রশ্ন, আগাম জেনেও কেন ম্যানেজাররা তাঁদের সতর্ক করেননি?
গৌতমবাবু, অভিজিৎবাবুদের দাবি, “গত ৭ এপ্রিল রাতে কলকাতায় রাতে বৈঠক করে সুদীপ্ত সেন বলেছেন, জমি বাড়ি বিক্রি করে আমানতকারীদের টাকা ফেরৎ দেব। তবে পুরোটাই মৌখিকভাবে বলেন। কোনও লিখিত নির্দেশ দেননি। |
সাধারণ আমানতকারীদের একাংশের অভিযোগ, গত ডিসেম্বর মাস থেকে সংস্থায় আর্থিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। জমা টাকার থেকে খরচের পরিমাণ বাড়তে থাকে। সংস্থার কর্মী, উচ্চ পদস্থ আধিকারিকেরা তা টেরে পেয়েই কোনও সময় প্রকাশ্যে আনেননি। বিশেষ করে গত ৩১ মার্চ আর্থিক বছরের হিসাবও সঠিকভাবে না হওয়ার পরেও তা সবাইকে জানানো হয়নি। কর্মীরা যতদিন বেতন পেয়েছেন, ততদিন সংস্থার অবস্থা সম্পর্কে মানুষকে না জানিয়েছে চুপচাপ বসেছিলেন। আমানতকারীদের পথে বসার দায়ভার সুদীপ্ত সেনের সিংহভাগ হলেও সংস্থার পদস্থ আধিকারিকেরা অস্বীকার করতে পারেন না। ম্যানেজারদের বিরুদ্ধেও পুলিশি তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে আমানতকারীদের একাংশ দাবি তুলেছেন। যদিও আমানতকারীদের অন্য অংশ ম্যানেজারদের সঙ্গে জোট বেঁধে আন্দোলন করে টাকা ফেরৎ পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।
এ দিন বালুরঘাটে সারদা গোষ্ঠীর অফিসের যাবতীয় নথি বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, গত ২২ এপ্রিল বালুরঘাট শহরের যুবশ্রী মোড় এলাকার সারদার জেলা অফিসটি পুলিশ সিল করা হয়। পুলিশ সারদার একটি অ্যাম্বুল্যান্স বাজেয়াপ্ত করেছে। একটি ছবির অ্যালবামও উদ্ধার হয়। পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দোপাধ্যায় জানান, “সারদার ওই অফিস থেকে নগদ ১৭,৫৩২ টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে কম্পিউটার ও নথি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
এ দিন বিকেল ৪টা নাগাদ শহরের সাড়ে তিন নম্বর মোড়ে ‘টাওয়ার গ্রুপের’ জেলা কার্যালয়টিতে তালা মেরে বন্ধ করে দেন সংস্থার এজেন্টরা। এ দিকে, বহু গ্রাহককে প্রতারণার অভিযোগে কোচবিহারের একটি বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থা তোর্সা গ্রুপ অব কোম্পানিজের অফিস ম্যানেজারকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। বুধবার রাতে কোচবিহারের সুভাষপল্লি এলাকার অফিসে হানা দিয়ে পুলিশ ওই ম্যানেজারকে ধরে। পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম দেবাশিস দাস। ওই অফিসও ‘সিল’ করেছে পুলিশ। কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জয়সওয়াল বলেন, “ওই সংস্থার এক কর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অফিসও সিল করে দেওয়া হয়েছে। সব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” |
শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের সামনে অ্যানেক্স সংস্থার এজেন্ট এবং আমানতকারীদের বিক্ষোভ। |
পাশাপাশি, গচ্ছিত টাকা ফেরতের নোটিস দেওয়া হলেও বৃহস্পতিবার শুধুমাত্র আবেদনপত্র জমা নেওয়ায় ময়নাগুড়িতে একটি বেসরকারি অর্থ লগ্নিকারী সংস্থার আমানতকারীদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। এক সপ্তাহ আগে সংস্থার তরফে দেওয়া হাতে লেখা নোটিসে বলা হয় ২ মে থেকে গচ্ছিত মূল টাকা ফেরত দেওয়া হবে। কিন্তু এ দিন সকাল থেকে ভিড় করে অপেক্ষার পরে টাকা ফেরত চেয়ে আবেদনপত্র জমা নেওয়ার বাইরে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে আমানতকারীদের একাংশের অভিযোগ। যদিও ওই সংস্থার অন্যতম কর্তা অরুণাভ রায় বলেন, “একদিনে সমস্ত আমানতকারীর টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব নয়। আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পরে সেটা পরীক্ষা করে দেখার জন্য সময় দিতে হবে। পূর্ব ঘোষণা মতো, আমানতকারীদের আবেদনপত্র জমা নেওয়ার পাশাপাশি টাকা দেওয়াও শুরু হয়েছে।”
চিঠি দিয়েও নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কোচবিহারের অর্ধেক অর্থলগ্নি সংস্থার কাছে তথ্য পেল না প্রশাসন। কোচবিহার সদর মহকুমা শাসকের দফতর থেকে মোট ২১ টি অর্থ লগ্নি সংস্থার দফতরে ২ মের মধ্যে তথ্য জানতে চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়। মাত্র ১০টি সংস্থা তথ্য জমা দিয়েছে। বাকী ১১টির মধ্যে কোচবিহারের ৩ টি সংস্থা কোন উত্তর জমা দেয়নি। ৮টি সংস্থা ওই উত্তর দেওয়ার সময়সীমা ১০মে পর্যন্ত বাড়ানোর আর্জি জানিয়েছে।
|