সারদা কাণ্ড থেকে শিক্ষা নিয়ে বিভিন্ন লগ্নি সংস্থাগুলির অফিস খোলার জন্য নতুন করে ট্রেড লাইসেন্স না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বহরমপুর পুরসভা।
পুরসভার ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ইতিমধ্যেই যারা অফিস খুলে বসেছে, তাদেরও ট্রেড লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ করা হবে না বলেও স্পষ্ট করে দিয়েছে পুর কর্তৃপক্ষ। পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য বলেন, “এখন থেকে কোনও লগ্নি সংস্থাকে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হবে না বলে কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই ভাবে ওই সমস্ত সংস্থাগুলির ট্রেড লাইসেন্স পুনর্নবীকরণও আর করা হচ্ছে না।”
এ ব্যাপারে সাত জনকে নিয়ে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কমিটির মূল উদ্দেশ্য, লগ্নি সংস্থাগুলির কবল থেকে রেহাই দিতে পুরনাগরিকদের সচেতন করা। ওই কমিটির সদস্যরা বিভিন্ন ওয়ার্ডে বিশেষ করে বস্তি এলাকা ঘুরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সচেতন করবেন। পাশাপাশি লগ্নি সংস্থাগুলির কাছ থেকে অর্থ আদায়েও সাধারণ মানুষকে সহায়তা করবে ওই কমিটি। নীলরতমবাবু বলেন, “কাউন্সিলর সুজয় রায়চৌধুরীর নেতৃত্বে ওই কমিটি গঠন করা হয়েছে। এলাকার সাধারণ মানুষ ওই সংস্থাগুলির খপ্পরে পড়ে যাতে প্রতারিত না হন, সে দিকে ওই কমিটি নজর রাখবে। কোনও পুরনাগরিক ওই ধরণের সংস্থায় নিয়মিত টাকা জমা দিয়েছেন, কিন্তু টাকা তুলতে পারছেন নাএই ধরণের যদি কোনও সমস্যা হয়, সে ক্ষেত্রে জানতে পারলে ওই কমিটির তাদের সাহায্য করবে।”
বহরমপুর পুরসভা এলাকায় অফিস খোলার জন্য ১৬টি লগ্নি সংস্থা পুর-কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছে। এর বাইরে আরও ১০-১২টি সংস্থা রয়েছে, যারা ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াই গোপনে অফিস খুলে বাজার থেকে অর্থ তুলছে বলে পুর-কর্তৃপক্ষ জানতে পেরেছে। এ দিকে ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি কতগুলি সংস্থা ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে পুর-এলাকায় ব্যবসা করছে, তার বিস্তারিত তথ্য জানতে মঙ্গলবার জেলা গোয়েন্দা দফতরের কর্তারা পুরসভায় যান। এর আগে জেলা গোয়েন্দা দফতর চিঠি পাঠিয়ে ওই লগ্নি সংস্থাগুলি সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান তাঁরা। পুরকর্মী নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায় বলেন, “কোন কোন সংস্থা ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে পুর-এলাকায় অফিস খুলে ব্যবসা করছে, তার তালিকা আমরা পাঠিয়েছি। পুরসভারও তরফেও বিভিন্ন লগ্নি সংস্থার তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে।”
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই প্রয়াস সংস্থার সঙ্গে জড়িত কাইজার বিশ্বাস, জিয়াউর রহমান ও আজিজুল শেখের নামে লালদিঘি এলাকায় ১ কোটি ৬২ লক্ষ টাকায় ৮ কাঠা জমি কেনা হয়েছে। জমি মিউটেশনের জন্য তারা পুরসভায় আবেদনও করে। আবাসন প্রকল্পের জন্য তারা ওই জমি কিনেছে বলেও শোনা যাচ্ছে। একই ভাবে পিঙ্কন সংস্থার সঙ্গে জড়িত লোকজন স্বর্ণময়ী এলাকায় ১০ কাঠা জমি-সহ বাড়ি কিনেছে। ওই বাড়ি ভেঙে সেখানে আবাসন গড়ে তোলা হবে বলেও জানা গিয়েছে। ওই জমির বর্তমান বাজার দর দেড় কোটি টাকা। পুরপ্রধান বলেন, “ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থা নামে-বেনামে যে সমস্ত সম্পত্তি কেনাবেচা করছে, সমস্ত তথ্য দিয়ে আমরা জেলা গোয়েন্দা দফতরকে সাহায্য করছি। জেলাপ্রশাসনের কাছে বিস্তারিত তথ্য জমা দেওয়া হবে, যাতে প্রয়োজনে প্রশাসন পদক্ষেপ নিতে পারে।” |