লগ্নি সংস্থার বেআইনি কাজকর্ম থেকে আমানতকারীদের সুরক্ষা দিতে যে দিন নতুন বিল পাশ হল বিধানসভায়, সে দিনই এই ধরনের কিছু সংস্থাকে অবিলম্বে ব্যবসা বন্ধ করার নির্দেশ দিল রাজ্য সরকার। বস্তুত, মঙ্গলবার রাতেই দু’টি লগ্নি সংস্থার কলকাতার অফিস পুলিশ বন্ধ করে দিয়েছে বলে সরকারি সূত্রে খবর।
সারদা কাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে লগ্নি সংস্থার বেআইনি কাজকর্মে রাশ টানতে তাঁর সরকার যে তৎপর তার ইঙ্গিত দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার বিধানসভায় বলেন, “আমরা কেন্দ্রের কাছ থেকে ৭৩টি কোম্পানির তালিকা পেয়েছি। তার মধ্যে বেশ কয়েকটির ৪-৫টা এজেন্সি রয়েছে। বড় কোম্পানির আড়ালে তাদের ছোট কোম্পানিগুলো কী ভাবে কাজ করছে, তা সম্পর্কে আমরা জানতে পেরেছি। সেগুলিকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।”
কোন কোন সংস্থাকে কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তা অবশ্য জানাতে চাননি মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর যুক্তি, সংবাদমাধ্যমে নাম প্রকাশিত হয়ে গেলে সংস্থাগুলি সাবধান হয়ে যাবে। কিন্তু নাম প্রকাশ না-করার ফলে সংশ্লিষ্ট মহলে বেশ খানিকটা সংশয়েরও সৃষ্টি হয়েছে। কেন্দ্রের তালিকায় থাকা ৭৩টি সংস্থার মধ্যে কোন কোনটি রাজ্যের নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ছে তা জানতে না-পেরে আমানতকারীরাও উদ্বিগ্ন। তবে বিধানসভার অধিবেশনের পরে ঘনিষ্ঠ মহলে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, এখনও কাজকর্ম পুরোদমে শুরু করেনি এমন দু’টি সংস্থার নাম সরকারের নজরে এসেছে। এরা সদ্য বাজারে এসেছে। বড় আর্থিক বিপর্যয় ঘটানোর আগেই তাদের কাজকর্ম বন্ধ করতে সরকার তৎপর হচ্ছে।
এর মধ্যেই মঙ্গলবার রাতে বেহালা ও এন্টালিতে দু’টি লগ্নি সংস্থার অফিসে হানা দেন পুলিশ আধিকারিকেরা। অফিসগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়। তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় ঘোষণা করার পরেই রাতে পুলিশ অফিস বন্ধ করে দিল। এর থেকেই প্রমাণ হচ্ছে, লগ্নি সংস্থাগুলির বেআইনি কাজকর্ম বন্ধে সরকার কতটা তৎপর। দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “সোমবার কুণাল ঘোষকে জেরা করার পরে এ দিন দুই সংস্থার অফিসে তালা। প্রমাণ হয়ে গেল, আমাদের সরকার যা বলে তা-ই করে।”
যদিও রাজ্য সরকার এ ভাবে লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে কি না, সে ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিরোধীরা। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের কথায়, “রাজ্য সরকার তো এই ভাবে ব্যবস্থা শুরু করতে পারে না। উনি বক্তৃতার তোড়ে বলে থাকতে পারেন। আমাদের তো এই রকম আইন-ই নেই। সেবি, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক করতে পারে। রাজ্যের করার সুযোগ থাকলে তো এই আইন করার দরকারই ছিল না! মুখ্যমন্ত্রী কী বলতে চেয়েছেন, কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলেছেন কি না, এ সব খতিয়ে না-দেখে কিছু বোঝা মুশকিল!”
লগ্নি সংস্থার কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণে বিল পাশের জন্য ডাকা বিধানসভার জরুরি অধিবেশন শেষে ধন্যবাদজ্ঞাপক বক্তৃতায় এ দিন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, আর কোনও প্রতারণা যাতে না হয়, সে দিকে নজর রাখা হবে। তাঁর হুঁশিয়ারি, প্রতারণা যারা করবে, তারা কেউ রেহাই পাবে না।পরে ঘনিষ্ঠ মহলে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ১৯৮৪ সাল থেকে কিছু লগ্নি সংস্থা রাজ্যে বেআইনি কাজ করছে। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে সারা ভারতে এ রকম সংস্থার যে তালিকা সেবি তৈরি করেছে, তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে ৭৩টি। সেই তালিকা হাতে এলেও মোট ক’টি লগ্নি সংস্থা রাজ্যে কাজ করছে, তার তালিকা সরকারের হাতে নেই। রাজ্য সরকার নিজ উদ্যোগে কিছু সংস্থার নাম পেয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রের কাছ থেকে পুরো তালিকা না পেলে রাজ্যের পক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন হবে। সেই কারণে চলতি সপ্তাহেই ওই তালিকা চেয়ে নর্থ ব্লকে চিঠি পাঠাবে অর্থ দফতর।
সদ্য কাজ শুরু করা দু’টি সংস্থার উপরে নিষেধাজ্ঞা চাপানোর পাশাপাশি পুরনো যে সমস্ত লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে বেআইনি কাজের অভিযোগে এসেছে তাদের সম্পর্কে বিচারপতি শ্যামল সেন কমিশন তথ্য, সাক্ষ্য, নথিপত্র জোগাড়ের কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন মমতা। কাজ শুরু করে দিয়েছে বিশেষ তদন্তকারী দলও (সিট)। |