নিয়ম রক্ষার মাল্যদান |
জন্মজয়ন্তীতে অনাদরে সাঁওতালি সাহিত্যিক |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম |
১১৬তম জন্মজয়ন্তীর দিনে কিছুটা অনাদরেই থেকে গেলেন সাঁওতালি সাহিত্যিক সাধু রামচাঁদ মুর্মু। বাম জমানায় জঙ্গলমহলে সরকারি ভাবে সাধু রামচাঁদের জন্মজয়ন্তী সাড়ম্বরে পালন করা হত। কিন্তু গত তিন বছর ধরে সরকারি ভাবে রামচাঁদের জন্মজয়ন্তী পালন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখন কেবলমাত্র ঝাড়গ্রাম মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরে রামচাঁদের ছবিতে মালা দেওয়া হয়। বিনপুরের কামারবাঁন্ধি গ্রামে রামচাঁদের বাস্তুভিটে-সহ বিভিন্ন জায়গায় এ দিন অবশ্য বেসরকারি উদ্যোগে কবির জন্মজয়ন্তী পালন করা হয়।
সাঁওতালি সাহিত্যের উজ্জ্বলমণি ছিলেন সাধু রামচাঁদ। আদিবাসী সমাজ সংস্কারক হিসেবেও প্রাতঃস্মরণীয় তিনি। ১৩০৫ বঙ্গাব্দের ১৬ বৈশাখ বিনপুরের কামারবাঁন্ধি গ্রামে দরিদ্র পরিবারে জন্মেছিলেন রামচাঁদ। আর্থিক অনটনের কারণে স্কুলের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। পড়েছিলেন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। কিন্তু চমৎকার মুখে মুখে কবিতা ও গান বাঁধতে পারতেন। অসাধারণ সুরও দিতেন। প্রথম জীবনে আদিবাসী চারণকবি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন তিনি। |
|
মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরে। —নিজস্ব চিত্র। |
দেশ পরাধীন থাকাকালীন তৎকালীন অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলায় জাতীয়তাবাদী সভায় গান গাওয়ার জন্য ডাক পেতেন রামচাঁদ। পরবর্তী জীবনে সাঁওতালি ভাষায় বাংলা হরফে (তখনও অলচিকি লিপি তৈরি হয়নি) বহু কবিতা, গান, নাটক ও অধ্যাত্মবাদ বিষয়ক প্রবন্ধ লিখেছেন তিনি। সাঁওতাল সমাজের কুপ্রথার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে সমাজকে সচেতন করেছেন বলিষ্ঠ লেখায়। শেষ জীবনে সংসার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গ্রামের একপ্রান্তে অধ্যাত্মবাদ-চর্চা করে গিয়েছেন। ১৯৫৫ সালে মাত্র ৫৭ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়।
১৯২৩ সালে সাঁওতালি ভাষা লেখার জন্য ‘মঁজ দাঁদেরা আঁক’ নামে একটি লিপি তৈরি করেছিলেন রামচাঁদ। কিন্তু উপযুক্ত প্রচারের অভাবে সেই লিপি মান্যতা পায়নি। পরবর্তী কালে ষাটের দশকে অলচিকি লিপি তৈরি করেন ওড়িশার পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু। পরে রঘুনাথ-সৃষ্ট অলচিকি লিপিকে মান্যতা দেয় বামফ্রন্ট সরকার।
সাধু রামচাঁদের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ১৯৯৮ সালে রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর তাঁর রচনা সংকলন ‘সাধু রামচাঁদ অনলমালা’ প্রকাশ করেছিল। বাম জমানায় ওই বছর (১৯৯৮) থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত টানা তেরো বছর জঙ্গলমহলের বিভিন্ন জায়গায় সরকারি উদ্যোগে ঘটা করে রামচাঁদের জন্মজয়ন্তী পালন করা হয়েছে। ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে অবশ্য বিধানসভা নির্বাচনের কারণে রামচাঁদের জন্মজয়ন্তী পালন করেনি তৎকালীন বাম সরকার। ওই বছর থেকে রামচাঁদের জন্মজয়ন্তী উদ্যাপনের সরকারি বরাদ্দ বন্ধ হয়ে যায়। তৃণমূলের সরকার ক্ষমতায় আসার পর সরকারি ভাবে রামচাঁদের জন্মজয়ন্তী পালনের জন্য নতুন করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদার আশ্বাস, “সাধু রামচাঁদ মুর্মুর স্মৃতি রক্ষার্থে সরকারি স্তরে যথাযথ পদক্ষেপ
করা হবে।” |
|