এসএসকেএম
ঢক্কানিনাদই সার, দেড় বছর পরেও ‘নিধিরাম’ আইটিইউ
দ্বোধনের আগে দাবি করা হয়েছিল, সরকারি পরিকাঠামোয় এটিই হবে এশিয়ার সব চেয়ে বড় আইটিইউ। উদ্বোধনের সময়ে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বলেছিলেন, “আমি ১০ বছর আমেরিকায় ছিলাম। কিন্তু এসএসকেএমের এই আইটিইউ আমেরিকার আইটিইউ-এর থেকেও এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছে।”
উদ্বোধনের দেড় বছর পরে এসএসকেএমের সেই আইটিইউ নিয়েই অভিযোগের পাহাড়। কী ধরনের অভিযোগ? আইটিইউ-এ ভর্তি থাকা রোগীর পরিজনদের বক্তব্য, ‘আইটিইউ প্রোটোকল’ মেনে চলেন না অধিকাংশ চিকিৎসকই। প্রয়োজনীয় সংখ্যায় ডাক্তার, নার্স নেই। বলা হয়েছিল, ধাপে ধাপে ৬০টি শয্যা চালু হবে। কিন্তু হয়েছে মাত্র ২০টি। ওয়ার্ড নিয়মিত সাফসুতরো হয় না। ২৪ ঘণ্টার ল্যাবরেটরি নেই। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ভরসা বাইরের বেসরকারি ল্যাবরেটরি। ফলে সময় অনেক বেশি লাগে। সোনোগ্রাফি মেশিন নেই। এক্স-রে যন্ত্র অকেজো। ডায়ালিসিসের সময়ে ডাক্তার থাকেন না। আইটিইউ থেকে রোগীকে অন্য কোনও বিভাগে পরীক্ষার জন্য নিয়ে যেতে হলে বাড়ির লোককে বলা হয়, “আপনারা ব্যবস্থা করুন।”
কী ব্যবস্থা?
শয্যা থেকে পাঁজাকোলা করে রোগীকে উঠিয়ে ট্রলিতে শোয়ানো বা ট্রলি ঠেলাই শুধু নয়, সংশ্লিষ্ট বিভাগের ভিড়ে ঠাসা বহির্বিভাগে পৌঁছনোর পরে রোগীর বাড়ির লোককে নির্বিকার ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়, “দেখুন, কোনও মতে আগে দেখানোর ব্যবস্থা করতে পারেন কি না।” সঙ্কটজনক অবস্থার রোগীকে দ্রুত দেখানোর জন্য কেন বাড়ির লোককে উদ্যোগী হতে হবে, হাসপাতালের নিজস্ব ব্যবস্থা কেন থাকবে না? এই প্রশ্ন করলে কর্মীদের তরফে কোনও উত্তর মিলবে না।
কর্তৃপক্ষও এই অভিযোগগুলি উড়িয়ে দিতে পারেননি। এসএসকেএম তথা ‘ইনস্টিটিউট অফ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’-এর অধিকর্তা প্রদীপ মিত্রের বক্তব্য, “এগুলো মেনে নেওয়া সত্যিই কঠিন। ডাক্তার-নার্স আগের তুলনায় বেড়েছে। যন্ত্রের ব্যবস্থাও ধাপে ধাপে হচ্ছে। কিন্তু প্রয়োজন সম্মিলিত সদিচ্ছা। সেটারই অভাব।”
দিন কয়েক আগে এক সরকারি চিকিৎসকের মা এই আইটিইউ-এ ভর্তি হয়েছিলেন। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। ওই চিকিৎসকের কথায়, “এটা কার্যত একটা নেই-রাজ্য। গুরুতর অসুস্থ রোগীর যে বিশেষ পরিচর্যা প্রয়োজন, এখানে তার ছিটেফোঁটাও মেলে না। সিনিয়র ডাক্তাররাও নিয়মিত দেখতে আসেন না। প্রেসক্রিপশনে জেনেরিক নাম থাকে না। আইটিইউ-এর ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসকের সঙ্গে অন্য বিভাগের চিকিৎসকেরা সমন্বয় রেখে চলেন না। ফলে রোগীর ভোগান্তি বাড়ে।”
বিভাগের এক চিকিৎসক আক্ষেপ করে বলেন, “আমরা হলাম আক্ষরিক অর্থেই ঢাল-তলোয়ারহীন নিধিরাম সর্দার। কোনও পরিকাঠামো নেই। কিন্তু বিভাগ খুলে বসে রয়েছি।”
আইটিইউ-এ টানা বেশি দিন ভর্তি থাকলে মানসিক সমস্যা দেখা দেয় অনেক রোগীর। চিকিৎসার পরিভাষায় একে বলে ‘আইটিইউ সাইকোসিস’। বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে এই কারণেই মনোবিদেরা আইটিইউ-এ এসে রোগীদের দেখে যান। কেন ‘এশিয়ার সব চেয়ে বড় আইটিইউ’-এ এই ব্যবস্থা থাকবে না?
প্রদীপবাবু বলেন, “এটা দুর্ভাগ্যজনক। হাসপাতালের ঠিক পিছনেই ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রি। আইটিইউ-এর ডাক্তারেরা এক বার রেফার করলেই সেখানে মনোবিদ এসে দেখে যেতে পারেন। কিন্তু সে ব্যাপারেও কেউ উদ্যোগী হন না।”
রাজ্যের অধিকাংশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আইটিইউ-এর অস্তিত্বই নেই। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে আট শয্যার আইটিইউ রয়েছে। এনআরএসে কিছুই নেই। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৮ শয্যার ‘ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিট’ (সিসিইউ) রয়েছে। আরজিকর মেডিক্যাল কলেজে রয়েছে পাঁচ শয্যার ‘পোস্ট অ্যানাস্থেশিয়া কেয়ার ইউনিট’। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় এগুলি কিছুই নয়। বেসরকারি হাসপাতালের বিপুল খরচ সামলানো অধিকাংশ মানুষের পক্ষেই সম্ভব হয় না। সেই পরিস্থিতিতে ২০১১ সালের ২ অক্টোবর উদ্বোধন হওয়া এই আইটিইউ আশার আলো দেখিয়েছিল। কিন্তু কার্যত এখনও সেখানে গভীর আঁধারই থেকে গিয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.