|
|
|
|
মহাকরণের ‘ধমকে’ উঠল বিক্ষোভ |
তৃণমূলের বিক্ষোভে থমকে আইআইটি-র পরীক্ষা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
শিক্ষায়তনে রাজনীতির দাপাদাপি কোনও ভাবেই ‘বরদাস্ত’ করা হবে না। রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, ছাত্র সংসদের নির্বাচন কিংবা ছাত্র-ভর্তি নিয়ে শাসক দলের ‘তাণ্ডবের’ জেরে এমনই বার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
দলীয় কর্মীরা সেই ‘হুঁশিয়ারি’কে কতটা মান্যতা দিচ্ছেন, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার পরে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। সেই তালিকায় এ বার খড়্গপুর আইআইটি-ও। দেশের প্রথম সারির ওই কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মঙ্গলবার সকাল থেকে ঘণ্টা দুয়েক গেট আটকে পরীক্ষার নির্ধারিত সময়সূচি বদলাতে বাধ্য করলেন আইআইটি-র তৃণমূল সমর্থিত কর্মী সংগঠনের সদস্যরা। যার নেতৃত্ব দিলেন পশ্চিম মেদিনীপুর তৃণমূল জেলা কমিটির সদস্য তথা স্থানীয় পুরসভার প্রাক্তন প্রধান জহরলাল পাল।
পরীক্ষার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে অথচ প্রতিষ্ঠানের কোথাও চলছে না বাতানুকূল যন্ত্র। মিলছে না জল। খোলা যাচ্ছে না পরীক্ষাগার। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে শেষ পর্যন্ত আইআইটি-র ডিরেক্টর শঙ্কর সোম ফোন করেন মহাকরণে। নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় ছোটেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপেই ওঠে বিক্ষোভ। নির্দিষ্ট সময়ের অনেক পরে শুরু হয় পরীক্ষা। |
 |
খড়্গপুর আইআইটি-র গেট আটকে বিক্ষোভ তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের।—নিজস্ব চিত্র। |
দলীয় সূত্রের খবর, স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছে বিষয়টি জানতে পেরে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা নেতৃত্বকে বিক্ষোভ তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেন মমতা। এর পরেই শর্তহীন ভাবে গুটিয়ে ফেলা হয় বিক্ষোভ। দলীয় পতাকা-ফেস্টুন গুটিয়ে ফিরে যান বিক্ষোভকারীরা।
তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোত ঘোষও বিকেলে জানান, আইআইটি-র গেটে আন্দোলনের ওই পদ্ধতি সমর্থন করেছে না দল। তিনি বলেন, “দাবি থাকতে পারে। তবে আন্দোলনের এই পদ্ধতি সমর্থন করি না।”
তবে তাঁদের বিক্ষোভ আন্দোলনে কোনও ভুল দেখছেন না জহরবাবু। কোনও রাখঢাক না রেখেই তিনি বলছেন, “অন্যায় আন্দোলন তো করিনি। কয়েকজন কর্মীর স্থায়ীকরণের দাবি আইআইটি কর্তৃপক্ষ না মানায় বিক্ষোভ দেখানো হয়েছিল। এতে আপত্তির কী আছে!”
শঙ্করবাবু অবশ্য বলেন, “আমরা তো কোনও ঠিকাদার সংস্থার কর্মীকে স্থায়ী করতে পারি না। বাড়তি কোনও সুবিধাও দিতে পারি না। তা জানানো সত্ত্বেও দীর্ঘক্ষণ আমাদের কর্মীদের ঢুকতে দিলেন না আন্দোলনকারীরা। বাধ্য হয়ে মহাকরণে ফোন করে বিষয়টা জানিয়ে ছিলাম।”
এ দিন সকাল থেকে আইআইটি-র প্রধান দু’টি ফটকের মুখে ঠিকাদার সংস্থার দুই কর্মী সংগঠন ‘প্রজেক্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’ ও ‘কন্ট্রাক্টর ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’-এর শ-চারেক কর্মী বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। আইআইটি-র গেটে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় তৃণমূল সমর্থিত ওই দুই কর্মী সংগঠনের ব্যানার। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মী-আন্দোলন নতুন নয়। কিন্তু কখনওই দলীয় পতাকা ব্যবহার করা হয়নি। আইআইটি এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (স্থায়ী কর্মীদের রেজিস্ট্রিকৃত ইউনিয়ন) সাধারণ সম্পাদক প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত বলেন, “আমরা কর্মবিরতি করেছি। কিন্তু এ দিন দেখলাম ছাত্র ও শিক্ষকদের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হলেও কর্মচারীদের জোর করে গেটে আটকে দেওয়া হল। এটা কাম্য নয়।”
কিন্তু কেন আন্দোলন? জহরবাবু বলেন, “কর্মীদের স্থায়ীকরণ, চিকিৎসা পরিষেবা, প্রভিডেন্ট ফান্ড ও আবাসন দেওয়ার দাবি আগেও জানিয়েছিলাম। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তা মানেননি। তাই আন্দোলনের পথে যেতে হয়েছে।”
কিন্তু দল তো আন্দোলনের এই ‘পদ্ধতি’কে স্বীকৃতি দিচ্ছে না। দলীয় ভাবে আন্দোলনকারীদের ‘কড়া বার্তাও’ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
মুচকি হেসে বিক্ষোভকারীদের এক জন অবশ্য পাল্টা জানাচ্ছেন, ‘সে বার্তা মানলে তো!’ |
|
|
 |
|
|