সমস্যা স্বীকার করে নিলে সমস্যার বিরুদ্ধে যুদ্ধের অর্ধেক জেতা হয়ে যায়। কিন্তু আনটোল্ড মানসিকতায় উত্তরোত্তর ক্ষোভ বেড়েছে সকলের! কী হল? না বিভিন্ন নাটকের দলকে ৩৫,০০০ করে গ্র্যান্ট-এর বন্দোবস্ত করল। মোট ১০০ দল তালিকাভুক্ত হয়ে গেল। নিঃশব্দে। পাতা ঝরলেও যখন শব্দ হয়, তখনই কান থেকে সকল শব্দ হরণ করে পশ্চিমবঙ্গের তথ্য সংস্কৃতি মন্ত্রক এই দায়ভার গ্রহণ করল। দিকে দিকে টিনএজার, চালসে দল গড়তে লাগলেন। চায়ের দোকানে হারিয়ে যাওয়া স্ক্রিপ্ট ঝুল ঝেড়ে পড়তে লাগলেন নাট্যকার। আদি পেশা ছেড়ে শেষবারের মতো আলোর বৃত্তের নীচে দাঁড়াবার প্রয়াস চালালেন অনেকেই। কেউ বা নিজেদের তাস খেলা, ক্যারাম খেলার সংঘগুলোর পাশেই কর্মী, মঞ্চ, দল শব্দবন্ধ জুড়ে, খুলে ফেললেন এক রাতের ড্রামা ক্লাব। স্বাগত ড্রামা! নাটক তোমাদেরই মানায়। বহু মানুষকে রিলেট করে এক তাঁবুর নীচে আনার সুবর্ণ সুযোগ এ ছাড়া আর কী হতে পারে! হয়তো বা কোনও তরুণ তাঁর সদ্যলেখা চিত্রনাট্য কুরিয়ারে পাঠাবেন। কেউ বা মনে মনে চাইবেন, শত ফুল বিকশিত হোক। কিন্তু এতে কি সত্যি সত্যিই নাটকের বিকাশ, মনের বিকাশ সম্ভব? কীসের ভিত্তিতে মনোনয়ন? |
জানতে ইচ্ছে করে। কোনও বিজ্ঞাপন ছাড়া সরকারি সাহায্য প্রদান অবৈধ। পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র চলছে, যে ভাবে সেন্সর-রোখা চলচ্চিত্র আড়ালে চলে। পুঁজি ছাড়া আজকের দিনে নাটক অচল অবাস্তব শেখাচ্ছেন পরিচালকেরা। তাই তো টিকিটের পেছনে সিমেন্টের অ্যাড, নাটকের শুরুতে প্রোজেক্টারে বহুজাতিক সংস্থার ডিটেলিং। ভবিষ্যতে হয়তো নাটকের মাঝে চলবে দশ-বারো বার বিরতি। অডিটোরিয়ামে বিদেশি পারফিউমের বিজ্ঞাপন। এমন প্রশ্রয়ে এক দিন নাটক হারিয়ে যাবে, রঙ্গমঞ্চে চলবে এক মাসের নাট্য সিরিয়াল। আপনারা প্রস্তুত তো! তখন গ্র্যান্ট আরও বাড়বে। লক্ষ লক্ষ টাকায় হবে মেকিং, আলো, সাউন্ড। উৎসাহভাতা হয়তো বা ব্যর্থ বেকারের মানিব্যাগের বেস বাড়াবে। কিন্তু শিল্পটা বেসলেস হয়ে যাবে ক্রমশ। ‘আয় তবে সহচরী’রা ভিড় করবে নাটকের দলে। আশাভঙ্গের লেসন-প্ল্যান আয়ত্ত করে পরের মাসে একটি দল জন্ম দেবে চারটি দলের। যে ভাবে মানুষের শরীরে চলে সেল ডিভিশন। মনে মনে কষ্ট পেলেন বহু দলের বহু পরিচালক। একশোটা নাটক স্টেজ করার পরও, ৩৫ বছর অভিনয়টা জিইয়ে রাখার পর তাঁরা ব্রাত্য। দলের ছাদ দিয়ে জল, তবুও ভরা শ্রাবণে ডায়লগ বলে চলে অভিজিৎ, ঝড়ে বিদ্যুতের তার ছেঁড়ার পর মোম জ্বেলে স্টেজ রিহার্সাল চলেখবর রাখেন ওঁরা! দলগুলো শুধুমাত্র মিছিলে পা মেলায়নি, হয়তো বা ফুড়ুৎ, ফন্দিগ্রাম চলাকালীন প্রশংসা করেনি বা করেছে। তাই তাদের অ্যাকাউন্ট জিরো ব্যালান্স। নাটক করতে করতে পাগল হয়ে দীপতরু হারিয়ে গেল এক দিন। বহু ওয়ার্কশপের পরও ও আর আসেনি পুরোনো বন্ধুদের কাছে। কোনও মিসিং ডায়েরি নেই, দীপতরু আছে সংলাপে, ও আছে আলো মেখে নিতে পারার সহজাত করিশমায়। ‘দুঃস্থ’ মানে কি শুধু ইকনমিক্যালি লো! মানসিক ভাবে পিছিয়ে পড়া অভিনেতাদের দায় কে নেবে? পার্টি মিটিং-এ দাদা বলেছিল, সমাজ! সমাজ নেবে! কিন্তু সমাজটাই যদি এক সময় ভেঙে যায়? রুদ্ধদ্বার বৈঠকের বাইরে সে কথা কেউ জানে না। সুমন আর প্রশ্ন তোলেনি কোনও দিন। থিয়েটার, তুমি কার? তোমাকে মাপার নতুন যন্ত্র এনে দিল এ সরকার। একটা নাটক উতরে নেওয়ার পরেই চ্যানেল পেরোল প্রতিবন্ধী মাসাদুর। ব্যাক গ্রাউন্ডে জল নেই, পুরোটাই মাঠ, মঞ্চ। তবু খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এই সব দল। ব্যালান্স চেক করতে এসে এ টি এমের দরজা খুলে মেরুদণ্ডটা সোজা হয়ে আসে। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে, থিয়েটার শুধু আমার!
একনায়কতন্ত্রের রোল প্লে চলছে দলে দলে! দেখে যানএটা অভিনয় নয়!
সন্দীপন নন্দী। বালুরঘাট
|
উত্তরের ছ’জেলার সর্পপ্রেমীদের কথা |
পশ্চিমবঙ্গ-সহ সমগ্র উত্তরবঙ্গে কিছু উদ্যমী পরিবেশপ্রেমী সংস্থা নিরন্তন বন্যপ্রাণ নিয়ে কাজ করছে। বেশির ভাগ সংস্থাগুলিই স্বকীয় ভাবে পরিচালিত এবং বেশির ভাগ সদস্যই শখের বশে, বন্যপ্রাণের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসার টানে বিনা পারিশ্রমিকে ৩৬৫ দিনই ২৪ ঘণ্টা কাজ করে।
উত্তরবঙ্গে বন্যপ্রাণ নিয়ে কাজ করা প্রত্যেকটি পরিবেশপ্রেমী সংস্থা যে-প্রাণীটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি কাজ করে, তা হল সাপ। সাপ নিয়ে কাজ করা সংস্থায় গিয়ে খোঁজ করলে জানা যাবে, উদ্ধারকারীরা এক বা একাধিক বার সর্পদংশনের শিকার হন। এর সর্বপ্রধান কারণ বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির অভাব। এগুলো উত্তরবঙ্গে পাওয়া যায় না। এগুলোর মূল্যও অনেক। অনেকে প্রতিরূপ তৈরি করে উদ্ধারকার্য করে, যার ফল হয় খুবই ভয়ানক। এই সব ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে বন্যপ্রাণ বিভাগ তথা বন দফতর। এই পরিবেশপ্রেমী সংস্থাগুলির সদস্যদের যদি ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়, সর্বোপরি সঠিক বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সাহায্য করা যায়তা হলে হয়তো অনেক ক্ষেত্রেই এই বিপদগুলি এড়ানো সম্ভব হবে। এটা বলা যেতে পারেই যে, পরিবেশপ্রেমী সংস্থাগুলির সঙ্গে সরকারি সমন্বয়ে সৃষ্টি করা চেতনার মাধ্যমেই সর্পদংশনের হার ও সাপের মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব।
তাপসকুমার রায়। রায়গঞ্জ |