কালনা মহকুমা হাসপাতালের পরিষেবা দেখে অসন্তোষ কর্তার
রিদর্শনে এসে কালনা হাসপাতালের নানা অব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী। সাম্প্রতিক কালে গাফিলতিতে রোগীমৃত্যু, প্রয়োজনের সময়ে ডাক্তারের দেখা না মেলা-সহ নানা অভিযোগ উঠেছে এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে। শনিবার সেখানে রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা ছিল স্বাস্থ্য অধিকর্তার। কিন্তু তার প্রায় দু’ঘণ্টা আগেই হাসপাতালে পৌঁছে দেখলেন পরিষেবার হাল। নানা ওয়ার্ড ঘুরে দেখার সময়ে অসন্তোষও প্রকাশ করলেন।
শনিবার দুপুর ১২টা নাগাদ কালনা মহকুমা হাসপাতালে পৌঁছন স্বাস্থ্য অধিকর্তা। তার মিনিট পনেরো পরে আসেন জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণব রায়। সাড়ে ১২টা থেকে হাসপাতালের নানা ওয়ার্ডে পরিদর্শন শুরু হয়। ছিলেন সুপার অভিরূপ মণ্ডল, এসিএমওএইচ সুভাষচন্দ্র মণ্ডলও। পরিদর্শনের সময়ে একটি ওয়ার্ডে আবর্জনা পড়ে থাকতে দেখে বিশ্বরঞ্জনবাবু বলেন, “আপনাদের প্রশিক্ষণের সময়ে পরিচ্ছন্নতার উপরে জোর দেওয়া হয়। এখন মনে হচ্ছে, আবার প্রশিক্ষণ দিতে হবে।” বেশ কিছু নথিপত্র উল্টে দেখেন তিনি। ছোট ছোট কারণে রোগীদের অন্যত্র স্থানান্তর করা হচ্ছে কেন, সে নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের হার দেখেও বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি। হাসপাতালের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে প্রচুর পোস্টার সাঁটানো রয়েছে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে তা খুলে ফেলার নির্দেশ দেন। পোস্টার সাঁটানোর জন্য বাইরে আলাদা একটি বোর্ড রাখার পরামর্শও দেন। রোগী কল্যাণ তহবিলের সাহায্যে আগাছা নির্মূল ও নিকাশি ভাল করার পরামর্শও দেন।
হাসপাতাল ঘুরে দেখছেন স্বাস্থ্য অধিকর্তারা।—নিজস্ব চিত্র।
পরিদর্শন চলাকালীনই স্বাস্থ্য অধিকর্তা হাসপাতালের সুপারের কাছে হাসপাতালের আবাসন ছেড়ে তিনি অন্যত্র কেন থাকেন, তা জানতে চান। সুপার জানান, আবাসন সারানো হচ্ছে, তাই অন্যত্র ভাড়া থাকছেন। বিশ্বরঞ্জনবাবু অবশ্য তাঁকে আবাসনেই থাকতে বলেন। অধিকর্তার একের পর এক প্রশ্নের মুখে পড়ে দৃশ্যতই বিব্রত সুপার এক সময়ে বলেন, “স্যার, আমি যদি পারছি না বলে মনে হয়, তবে আমাকে সরিয়ে দিন।”
এর পরে হাসপাতালের কর্মী ও স্থানীয় মানুষজনের সঙ্গে কথা বলেন বিশ্বরঞ্জনবাবু। এলাকার মানুষজন হাসপাতালের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন। ডাক্তার না থাকা, সুপারকে সময় মতো না পাওয়া, দালালদের দৌরাত্ম্য-সহ নানা অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিকর্তার হাতে একটি স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। বিশ্বরঞ্জনবাবু বলেন, “পরিকাঠামো যা রয়েছে তাতে সাধারণ মানুষের ভাল পরিষেবা পাওয়া উচিত। তাই এই সব অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।”
পরে সুপারের অফিসে রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে হাজির ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু, মহকুমা প্রশাসনের প্রতিনিধি আশিস চৌধুরী, কালনার ওসি অমিত মিত্র, হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীরা। হাসপাতালের একটি সূত্রে জানা যায়, বিশ্বরঞ্জনবাবু বৈঠকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নানা বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করেন। হাসপাতালের মেডিক্যাল বিভাগের পরিষেবার হাল দীর্ঘ দিন ধরেই খারাপ, এমন অভিযোগ ওঠে। বৈঠকে উঠে আসে, ২০১১ সালে হাসপাতাল যেখানে চারশো রোগীকে অন্যত্র স্থানান্তর করেছিল, ২০১২ সালে তা দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে চার হাজারে। অথচ, ২০১১-তে হাসপাতালে চিকিৎসকের সংখ্যা ছিল ১৮। ২০১২-তে রয়েছেন ৩২ জন। আরও অভিযোগ ওঠে, প্যাথলজি বিভাগের চিকিৎসক মাসে সাত-আট দিনের বেশি আসেন না।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ সব অভিযোগ শোনার পরেই স্বাস্থ্য অধিকর্তা পরিষেবার হাল ফেরাতে নানা দাওয়াইয়ের কথা জানান। তিনি জানান, এ বার থেকে কাজের মূল্যায়ণ হবে। যাঁরা ভাল কাজ করবেন না, তাঁদের এই হাসপাতাল থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিকিৎসকদের নিয়ে মাঝে-মধ্যে বৈঠক করার পরামর্শ দেন তিনি। চিকিৎসকেরা কেমন পরিষেবা দিচ্ছেন, তা দেখার দায়িত্ব দেন এসিএমওএইচ-কে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও স্বাস্থ্য অধিকর্তার কাছে বেশ কিছু দাবি পেশ করেন। তার মধ্যে ছিল কয়েক জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ, চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর শূন্যপদে নিয়োগ ইত্যাদি।
কালনার বিধায়ক বিশ্বজিৎবাবু বলেন, “স্বাস্থ্য অধিকর্তা আশ্বাস দিয়েছেন, দু’তিন মাসের মধ্যে কিছু দাবিপূরণ করা হবে।” এসিএমওএইচ সুভাষবাবু বলেন, “স্বাস্থ্য অধিকর্তা জানিয়েছেন, বেশ কয়েক জন চিকিৎসককে এই হাসপাতালে স্থায়ী ভাবে নিয়োগ করা হবে। তা কার্যকর হলে পরিকাঠামোর সমস্যা অনেকটাই মিটবে।” সুপার অভিরূপবাবু বলেন, “এক সময়ে মনে হচ্ছিল, সব কিছুর জন্য আমিই দায়ী। তাই সরিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিলাম। তবে স্বাস্থ্য অধিকর্তা অনেক ভাল পরামর্শ দিয়েছেন। তা মেনে চলার চেষ্টা হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.