পুরুলিয়ায় দাবি এজেন্টদের
মাসে কোটি টাকা তুলতে চেয়েছিলেন সুদীপ্ত
র্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া পুরুলিয়া জেলাতেই মাসে এক কোটি টাকার ব্যবসা চেয়ে এজেন্টদের চাপ দিয়েছিলেন সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন। গত জানুয়ারি মাসে ছায়া সঙ্গিনী দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে পুরুলিয়া শহরের মুন্সেফডাঙার অফিসে বৈঠক করতে এসেছিলেন তিনি। তাঁরা আকাশচুম্বি চাহিদা নিয়ে তখন ক্ষুদ্ধ হলেও এজেন্টরা তা প্রকাশ করেননি। এখন সুদীপ্ত সেন গ্রেফতারের পরে তাঁরা এ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন।
সারদার কেলেঙ্কারীর পরে গা ঢাকা দিয়েছেন পুরুলিয়ায় সারদার অন্যতম বড় এজেন্ট তমসকুমার বারিক। আদতে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এই বাসিন্দার চেষ্টাতেই ২০১০ সালে পুরুলিয়া জেলায় সারদার অফিস খোলে। মূলত তাঁর হাত ধরেই পুরুলিয়ায় ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থা সারদার ব্যবসা শুরু হয়। কিন্তু অফিসের ঝাঁপ বন্ধ হওয়ার পরেই তিনি পুরুলিয়া শহরের নডিহায় ভাড়াবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আত্মগোপন করেছেন। এজেন্টরা তাঁর খোঁজে এসে ফিরে যাচ্ছেন। কোনও ভাবে তাঁকে মোবাইলে যোগাযোগ করা যায়। গোপন ডেরা থেকে তিনি বলেন, “পুরুলিয়ায় তিন বছর আগে সারদার শাখা অফিস খোলা হয়। এর মধ্যে সুদীপ্ত সেন বার চারেক এসেছিলেন। শেষবার এসেছিলেন গত জানুয়ারি মাসে। পুরুলিয়া জেলায় ব্যবসা বাড়ানোর জন্য তিনি আমাকে চাপ দিচ্ছিলেন। তাঁর প্রত্যাশা মতো আমাদের জেলা থেকে ভাল ব্যবসা না হওয়ায় তিনি অসন্তুষ্ট ছিলেন। তাই মার্চ মাসের পরে মানবাজারে শাখা খোলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আমাকে বলে গিয়েছিলেন, পুরুলিয়া, রঘুনাথপুর, ঝালদা ও বলরামপুর এই চারটি শাখা থেকে মাসে এক কোটি টাকা তুলতে হবে। তা না হলে কোনও জুনিয়রকে আমার জায়গায় বসিয়ে দেবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন।”
পথে এ বার: সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের দাবিতে রবিবার হুড়ায় সিপিএমের মিছিল।—নিজস্ব চিত্র।
কিন্তু মার্চ মাসের শেষের দিকেই তমসবাবুর মতো সিনিয়র এজেন্টরা গণ্ডগোলের আঁচ পান। তাঁর দাবি, পুরুলিয়ার বেশ কিছু লগ্নিকারীদের আমানতের মেয়াদ শেষ হয় গত ৩১ মার্চ। কমবেশি ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা ফেরত পাওয়ার কথা ছিল। পুরুলিয়া ছিল সারদার দুর্গাপুর জোনের অধীনে। টাকা ফেরত নেওয়ার জন্য ৬ এপ্রিল তাঁরা দুর্গাপুর জোনের কর্তা মনোজকুমার নেগেলের সঙ্গে দেখা করতে যান। তিনি সেদিন দুর্গাপুরে না থাকায়, পরের দিন কলকাতায় গিয়ে তাঁরা মনোজকুমারের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন, একটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে ২৬ এপ্রিলের মধ্যে লগ্নিকারীদের ৭০ শতাংশ টাকা মিটিয়ে দেওয়া হবে। কিন্ত ১৩ এপ্রিল থেকে মনোজকুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় তাঁরা বুঝে যান গোলমাল পেকে উঠেছে। তিনিও পুরুলিয়া শহরের বাইরে চলে যান। এজেন্টরা জানান, দুর্গাপুরের অফিসে যাচ্ছেন বলে তমসবাবু জানিয়েছিলেন। কিন্তু ফিরে আসেননি। যোগাযোগও করা যাচ্ছে না। সারদার পুরুলিয়া অফিসের কর্মী সুভাষ ভট্টাচার্যও বলেন, “কাজ তো গেলই, এজেন্টদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আমরা তো আগে এত কিছু জানতাম না।”
ইতিমধ্যেই পুলিশের জালে ধরা পড়েছেন সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন, দেবযানী মুখোপাধ্যায়, মনোজকুমার নেগেল-সহ কয়েকজন। জেলার এজেন্টরা তাঁদের অবশ্য বেশি চিনতেন না। কিন্তু যাঁদের কাছ থেকে চিনতেন, নানা সময়ে সাহায্য পেয়েছেন, তমসবাবুর মতো সেই সিনিয়র এজেন্টরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যাওয়ায় আতান্তরে পড়েছেন ছোট এজেন্টরা। পুরুলিয়া শহরের এক এজেন্টের কথায়, “ঘরে-বাইরে এমন অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, তা বলে বোঝানো যাবে না। আমরা বেকার ছেলেরা কমিশন বাবদ দু’টো রোজগারের আশায় এজেন্টের কাজ করতাম। নিজেদের রোজগার তো গেলই, উল্টে লগ্নিকারীদের গালমন্দ শুনতে হচ্ছে।” বলরামপুরের সারদার এজেন্ট দীপক দাস, ঝালদার বিধান চন্দ্রদেরও একই অভিজ্ঞতা। একই অবস্থায় রয়েছেন বাঁকুড়া জেলার সারদার এজেন্টরাও। টাকা ফেরত ও নিজেদের সুরক্ষার দাবিতে শুক্রবার তাঁরা জেলাশাসকের দফতরে বিক্ষোভ দেখিয়ে স্মারকলিপি দেন। তাঁদের দাবি, “কেলেঙ্কারির পরে অনেকেই বাড়িতে থাকতে পারছি না। লগ্নিকারীরা টাকা চেয়ে মাথা খারাপ করে দিচ্ছেন। এ দিকে বড় এজেন্ট বা অফিসের কর্মকর্তাদেরও দেখা পাচ্ছি না। অনেকে পালিয়ে গিয়ে ফোন বন্ধ করে দিয়েছেন। লগ্নিকারীদের এ সব বোঝানো যাচ্ছে না।” কেঞ্জাকুড়ার এক এজেন্টের কথায়, “লোকে সুদীপ্ত সেনকে চেনেন না। আমাদের চেনেন। আমাদের হাত দিয়ে তাঁরা লক্ষ লক্ষ টাকা সারদাকে দিয়েছেন। এখন তাঁরা আমাদেরই টাকার জন্য ধরছেন।” পুলিশ অবশ্য এখন পুরুলিয়া জেলায় কতগুলি ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থা কাজ করছে তার খোঁজখবর শুরু করেছে। জেলা পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “জেলায় সারদার মতো কতগুলি অফিস রয়েছে আমাদের কাছে সে তথ্য নেই। খোঁজখবর শুরু করা হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.