সাধারণ মানুষই শুধু নয়, ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থাগুলিতে টাকা রেখে সব হারানোর দলে রয়েছেন বেআইনি কারবারিরাও। এরপরেও বসিরহাট ও বনগাঁ মহকুমার অধিকাংশ জায়গায় রমরমিয়ে চলছে ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থাগুলির কারবার।
সারদাকাণ্ডের পরে রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থার দফতরে টাকা ফেরতের দাবিতে বিক্ষোভ চলছে রাজ্য জুড়ে। কিন্তু বনগাঁ ও বসিরহাটে বিক্ষোভের সংখ্যা অনেক কম। এখনও ওই সংস্থাগুলির অফিসে টাকা জমা দিতে রীতিমত লাইন পড়ছে।
বসিরহাটের এসডিপিও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ভুঁইফোঁড় সংস্থা সর্ম্পকে মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে। আমরা এলাকার ভুঁইফোঁড় সংস্থাগুলি নজরে রেখেছি।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত তিন-চার বছরে বনগাঁ ও বসিরহাট এলাকাতে ৪০টিরও বেশি ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থা উঠে গিয়েছে। টাকা পাননি আমানতকারীরা। এরপরেও ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির ‘কালেকশনে’ ভাঁটা পড়েনি এই এলাকাগুলিতে।
ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থাগুলির রমরমার পিছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে।
প্রথমত, সীমান্তবর্তী এই এলাকায় গরুপাচার হল প্রতিদিনের ঘটনা। এই অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা নগদ টাকা পান। সেই টাকা নিরাপত্তার কারণে তারা ব্যাঙ্কে রাখতে চান না। বেছে নেন ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থাগুলিকে। মেছোভেড়ি ও ইটভাঁটার মালিকেরাও টাকা রাখেন এই সংস্থাগুলিতে। কারণ, এই সংস্থাগুলিতে টাকা রাখার সময় টাকার উৎসের জবাব দিতে হয় না তাঁদের। নেই কর-সংক্রান্ত সমস্যাও।
দ্বিতীয়ত, সীমান্তবর্তী এই এলাকায় অনেকেরই ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র নেই। বাংলাদেশ থেকে প্রায়ই অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে আসেন অনেকে। প্রয়োজনীয় নথি না থাকায় ব্যাঙ্ক কিংবা ডাকঘরের বদলে টাকা রাখেন ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থাগুলিতে। সে কথা মেনে নিলেন স্থানীয় ঠাকুরনগরের বাসিন্দা কমল মণ্ডল, রত্না পাত্র-সহ অনেকে। তাঁরা বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য লড়াই করে চলেছি। রেশন কার্ড নেই। তাই ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারিনি। তাই ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থায় টাকা রেখেছি।”
রয়েছে আরও সমস্যা। বসিরহাট ও বনগাঁ-সহ সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকায় ব্যাঙ্ক ও পোস্ট অফিসের সংখ্যা অনেক কম। এরফলে প্রয়োজনীয় নথি থাকা সত্ত্বেও ব্যাঙ্ক কিংবা পোস্ট অফিসে টাকা রাখতে পারেন না অনেকে। এরই সুযোগ নেয় ভুঁইফোঁড় সংস্থাগুলি।
সংস্থার কর্তারা প্রাথমিকভাবে এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে অনুষ্ঠান করে নিজেদের ‘সামাজিক ভাবমূর্তি’ তৈরি করে। তারপর কাজ শুরু করে এজেন্টেরা। অনেকক্ষেত্রেই প্রতিষ্ঠিত বিমা কোম্পানীর এজেন্টদের অতিরিক্ত কমিশনের লোভ দেখিয়ে ব্যবহার করে ভুঁইফোঁড় সংস্থাগুলি। আমানতকারীদের একাংশের দাবি, এজেন্টদের সামাজিক পরিচয় ও প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করে টাকা লগ্নি করেন তাঁরা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে শুধু বসিরহাটেই রয়েছে অন্তত ৩০টি ভুঁইফোঁঁড় অর্থলগ্নি সংস্থা। গত চার বছরে ওই সংস্থাগুলিতে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার উপর টাকা জমা পড়েছে। এজেন্টরা জানালেন, আমানতকারীদের বেশিরভাগই নিম্ন মধ্যবিত্ত। অতিরিক্ত সুদ পাওয়ার আশাতেই নিজেদের সঞ্চয় তাঁরা তুলে দিয়েছেন এ সব ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থার কাছে।
সেই সঞ্চয় কতটা সুরক্ষিত থাকে এখন সেটাই দেখার। |