বিজয়মঞ্চেই বিদায়ঘণ্টা
কালিসকে আগে নামানো নিয়ে ড্রেসিংরুমে কোচ-ক্যাপ্টেন ঝামেলা
চুলগুলো উসকোখুসকো, গালে তিন দিনের না কাটা দাড়ি। চিপকের ঘাসে দৃষ্টি আবদ্ধ, শরীরটাও আজ চলতে চাইছে না। মাইক হাসি এলেন, জাডেজা এলেন, দু’জোড়া হাতও এগিয়ে এল। তাঁর মুখ উঠল কি?
নাহ্।
দেখলে কে বলবে, এক বছর আগে এটা তাঁরই বিজয়মঞ্চ ছিল। এগারো গর্বিত যোদ্ধাকে নিয়ে ভিকট্রি ল্যাপ দিয়েছিলেন, এই মাঠেই, এই চিপকে। সে দিন স্বপ্নের রাতে ঘুমকে ‘গুডবাই’ বলতে পেরেছিলেন তিনি, কিং খান নাচাতে চেয়েছিলেন তাঁকে। আজ কিং খান নেই। শ্যাম্পেনের ‘কর্ক’ এক টোকায় ছিটকে দেওয়া নেই। ভোররাত পর্যন্ত পার্টিও নেই।
শুধু একটা প্রসঙ্গ বোধহয় একই থাকবে। আজ রাতেও গৌতম গম্ভীরের ঘুম আসবে তো? চিপকের এক রবিবার তাঁকে উপহার দিয়েছিল স্বপ্নপূরণের রাত। চিপকের আর এক রবিবার তাঁকে দিয়ে গেল স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা! মনবিন্দর সিংহ বিসলার অতিমানবীয় ইনিংস সত্ত্বেও।
সোজা কথায়, চেন্নাই-উত্তর আইপিএলে নাইটদের প্লে-অফে ওঠা, আর ক্রিস গেইলকে বিজয় মার্চেন্টদের ব্যাটিং-ঘরানার সঙ্গে মানিয়ে নিতে বলা, একই ব্যাপার। অর্থাত্‌, কার্যত অসম্ভব। হাতে পড়ে আর সাতটা ম্যাচ, জয় চাই ছ’টাতে, ওঁত পেতে আছে মুম্বই-দিল্লি-বেঙ্গালুরু এই পরিস্থিতিতে কোনও অন্ধ নাইট সমর্থকও সম্ভবত দিবাস্বপ্ন দেখতে রাজি হবেন না।
এবং কেকেআরকে যদি ইদানীং ফের ‘কে কে হার’ বলে ডাকা শুরু হয়ে থাকে, তা হলে টিমে আরও একটা ব্যাপার ব্যতিক্রম নয়, রীতিমতো নিয়ম হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ‘ওয়ান টিম, ওয়ান প্লেজ’ ট্যাগলাইনের আপাতত ঠিকানা আঁস্তাকুড়ে। টিম গম্ভীরের বরং ‘অলঙ্কার’ এখন ‘বিতর্ক’ শব্দটা। কোনও দিন বালাজি বনাম গম্ভীর। কোনও দিন কোচ বনাম ক্যাপ্টেন।
রবিবার দ্বিতীয়টা ঘটে গেল। সন্ধে সাড়ে সাতটা পর্যন্ত তিনটে ব্যাপার নিয়ে চেন্নাই প্রেসবক্সে গম্ভীরকে কাঠগড়ায় তোলা চলছিল।
এক) তিনি কোন যুক্তিতে টস জিতে ফিল্ডিং নিলেন? চিপকের উইকেট ব্যাটিং-বন্ধু জেনেও?
দুই) কিংস ইলেভেন ম্যাচে বালাজির কী দশা হয়েছে গম্ভীর দেখেছেন। তবু শেষ ওভারে ফের বালাজি কেন?
তিন) মর্গ্যান যেখানে ডাগআউটে বসে, টু ডাউনে সেখানে কালিস কী করছেন? দুশো তুলতে হবে যখন?
রাতের দিকে জানা গেল, পুরো দোষ গম্ভীরের নয়। টস জিতে ফিল্ডিং করার ইচ্ছে তাঁর বিশেষ ছিল না। এবং দু’শো তাড়া করতে গিয়ে কালিসকে চারে পাঠানোর মতো ‘মূর্খামি’ও কেকেআর ক্যাপ্টেন করতে চাননি। কালিস যা ব্যাট করছেন, বা এ দিন করলেন, সেটা টেস্ট ক্রিকেটের পক্ষে খুব ভাল বিজ্ঞাপণ। কিন্তু টি-টোয়েন্টির বাজারে, ঘাড়ের উপর দশ-এগারো আস্কিং রেট নিয়ে ২০ বলে ১৯, ক্ষমাহীন অপরাধ। ভুলটা আসলে বেলিসের। ক্যাপ্টেন চেয়েছিলেন, মর্গ্যানকে পাঠাতে। কিন্তু নাইট কোচ তা পত্রপাঠ খারিজ করে দেন। যা নিয়ে ম্যাচের মধ্যে ডাগআউটেই দু’পক্ষে খুচখাচ চলছিল। ম্যাচের পর লাগল পুরোদমে। ড্রেসিংরুমে।

নাইটদের সব ভুল
টস জিতে ফিল্ডিং নেওয়া
• চিপকের ব্যাটিং উইকেটে ধোনিদের ব্যাট করতে পাঠানো মানেই বড় রানের চাপকে আমন্ত্রণ করে নিয়ে আসা।
বালাজিকে শেষ ওভারে বল করতে পাঠানো
• আগের ম্যাচেও বালাজি শেষ ওভারে ১৮ রান দেয়। যা নিয়ে গম্ভীরের সঙ্গে ঝামেলাও হয়। সেই একই ভুল আবার চেন্নাই ম্যাচে। বালাজির শেষ বলে ছয় খাওয়াটাও ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াল।
কালিসকে আগে ব্যাট করতে পাঠানো
• দু’শো রান তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই দশের উপর রানরেট রাখতে হবে। এই অবস্থায় ফর্মে থাকা মর্গ্যানকে না নামিয়ে কম স্ট্রাইক রেট থাকা কালিসকে আগে নামানো মানে, নিজেদের উপর চাপ আরও বাড়িয়ে নেওয়া।
দল বাছা ঠিক হয়নি
• বাড়তি স্পিনার হিসাবে ইকবাল আবদুল্লাকে দলে রাখা যেত। সচিত্রর জায়গায় বিদেশি কোটায় ব্রেট লি-কে না খেলানোটাও বড় ভুল।
স্বাভাবিক। খুঁটিয়ে দেখলে, যার মধ্যে অন্তত দু’টো সিদ্ধান্তকে অনায়াসে ‘ব্ল্যাকলিস্টেড’ করে ফেলা যায়। টসের পর পরই জনৈক সমর্থক টুইট করে বসলেন, “জীবনের চরম ঝুঁকিটা নিল গম্ভীর। ডিসিশন অব লাইফ!” কেকেআর নিল এবং ডাহা ফেল মারল। চিপকের এই উইকেটে চেন্নাইকে আগে ব্যাট করতে পাঠানোর একটাই অর্থ হয় মহেন্দ্র ধোনিদের ক্রুদ্ধ ‘সিংহগর্জন’ শোনো। এবং দিনের শেষে অভিসম্পাত করো। শুরু থেকে ‘মিস্টার ক্রিকেট’ আর বাঙালি ঋদ্ধিমান মিলে এমন ‘হিংস্র’ ব্যাটিং শুরু করে দিলেন যে, ‘পাওয়ার প্লে’-র মধ্যে পাঁচ বোলারকে এনে ফেলতে বাধ্য হলেন ক্যাপ্টেন গম্ভীর! আশ্চর্যের কিছু নেই। বোলারদের দুর্দশা দেখলে গম্ভীর কেন, যে কোনও অধিনায়কের শিরদাঁড়া দিয়ে হিমেল স্রোত বইবে। উদাহরণ চাই?
সুনীল নারিন নাইটদের এক নম্বর মারণাস্ত্র। আইপিএলের সেরা। ৪ ওভারে ৩৫।
জাক কালিস বিশ্বকাঁপানো অলরাউন্ডার। হেনস্থার হিসেব? ৪ ওভারে মাত্র ৫০!
লক্ষ্মীপতি বালাজি ক্যাপ্টেনের কাছে কিংস ম্যাচে তীব্র ভাবে ভর্ত্‌সিত। কামব্যাকের নমুনা? ৪ ওভারে ৪৫!
তিন জনেরই প্রাপ্তির খাতায় ‘আ বিগ ফ্যাট জিরো।’ চেন্নাই দুশোও তুলল, ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার কর্তাদের মাইক হাসি নিয়ে প্রবল হতাশায় ডুবিয়ে দিয়ে। ‘মিস্টার ক্রিকেট’ ব্যাগি গ্রিন আর পরেন না। অবসর নিয়েছেন। আসন্ন অ্যাসেজেও নেই। তবে রবিবাসরীয় চিপকে তিনি দু’টো কাজ করে গেলেন। গেইলের হিংস্রতা না তাঁর কার্যকারিতা আইপিএলে কোনটা বেশি আকর্ষণীয়, তা নিয়ে বিতর্কসভা বসিয়ে দিলেন। আর ক্রিকেট-জীবনের সায়াহ্নে পৌঁছেও ম্যাচটা একা বার করে নিলেন কেকেআরের ডাগআউট থেকে। ৫৯ বলে দুর্ধর্ষ ৯৫-এ নয়, মোক্ষম সময়ে অবিশ্বাস্য একটা থ্রোয়ে। কেকেআর জখম এবং খতম!
নইলে যুদ্ধ শেষে আর ও রকম বিষণ্ণ কেন বিসলা? আইপিএল ফাইভ ফাইনালে ৮৯, এ দিন ৯২। তবু তো বলতে হল, “এত খারাপ লাগছে যে কী বলব! জয়ের এত কাছে এসে ও ভাবে রান আউট হয়ে গেলাম...ভাবতে পারছি না।”
ভাবলে অবাক লাগবে যে, এই ছেলের ঘরোয়া ক্রিকেটে কোনও টিম নেই! নিজ-রাজ্য হরিয়ানাতেও ব্রাত্য! বছরে ‘কম্পিটিটিভ ক্রিকেট’ খেলেন মোটে দু’মাস, আইপিএলের সময়ে! আইপিএল ফাইভ ফাইনালে অতিমানবিক, আজও স্মরণীয় ইনিংসের মালিক। একমাত্র তাঁর জন্যই চেন্নাইয়ের নির্মম অত্যাচারের পর মাঝে মাঝে মনে পড়েছে আইপিএল ফাইভ ফাইনালকে, চেন্নাইয়ের জঙ্গি সমর্থককুলকে খোঁজ করতে হয়েছে হার্টের ডাক্তারের। একমাত্র তাঁর জন্যই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে জন্ম হয়েছে অবিশ্বাস্য মেসেজের বিসলা : সিএসকে ইকোয়ালস টু ভিভিএস : অস্ট্রেলিয়া!
আইসিসিইউ-তে ঢুকে পড়া কেকেআরের আবার জীবনে প্রত্যাবর্তন ঘটবে কিনা, জানা নেই। তবু যদি গম্ভীরদের জীবনদায়ী ওষুধের খোঁজ করতে হয়, করতে হবে জাঠ যুবকের কালজয়ী ইনিংস থেকে। তা যতই নিলাম-বাজারে তাঁর দর ‘চুনোপুঁটি’ হোক!

নাইটদের বাঁচার অঙ্ক
• নাইটদের হাতে আর সাতটা ম্যাচ। সাতটায় সাতটা জিতলে, ২০ পয়েন্ট নিয়ে প্লে অফে যাওয়া প্রায় নিশ্চিত।

• ছ’টাতে জিতলে গম্ভীরদের হবে ১৮ পয়েন্ট। সেক্ষেত্রে প্লে অফে যাওয়ার ব্যাপারে অন্য টিমগুলোর দিকেও তাকিয়ে থাকতে হতে পারে।

• নাইটদের চ্যালেঞ্জটা প্রচণ্ড কঠিন। কারণ সাতটার মধ্যে ইডেনে ম্যাচ শুধু রাজস্থান। বাকি দুটো হোম ম্যাচ রাঁচিতে। গম্ভীরদের এখনও মুম্বইয়ে মুম্বইকে খেলতে হবে, রায়পুরে দিল্লিকে এবং রাঁচিতে গেইলের বেঙ্গালুরুকে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.