সম্পাদকীয় ১...
নৈতিকতার দায়
কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (সি বি আই) কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন একটি সংস্থা। কিন্তু তাহার অর্থ এই নয় যে, সংস্থা পরিচালিত তদন্ত ওই মন্ত্রক বা তাহার রাজনৈতিক প্রভুরা নিয়ন্ত্রণ করিবেন। সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ না হইলে তদন্তের কোনও মূল্যই নাই। অথচ প্রায়শই গুরুতর অভিযোগ ওঠে যে, সি বি আই নিরপেক্ষ তদন্তের আদর্শ ও লক্ষ্য হইতে ভ্রষ্ট হইতেছে। কয়লার মজুত ভাণ্ডার নিষ্কাশনের অনুমতি সংক্রান্ত অনিয়মের (এক কথায় যাহাকে ‘কোলগেট’ কেলেঙ্কারি বলা হইতেছে) সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশিত তদন্তের রিপোর্ট সি বি আই আইনমন্ত্রক ও প্রধানমন্ত্রীর দফতরের পদস্থ আমলাদের দেখাইয়াছে, কারণ (তাঁহারা) তেমনটাই চাহিয়াছিলেন সুপ্রিম কোর্টের নিকট সংস্থার অধিকর্তার এই হলফনামা গভীর উদ্বেগের কারণ। শীর্ষ আদালতকে সি বি আই অধিকর্তা বলিয়াছেন, ভবিষ্যতে এমন বিচ্যুতি আর ঘটিবে না। কিন্তু এই প্রতিশ্রুতির কার্যত কোনও মূল্যই নাই। কেন এমন একটি নথি সুপ্রিম কোর্টে পেশ করিবার আগে সরকারি কর্তাদের দেখানো হইবে, তাহার কোনও সদুত্তর থাকিতে পারে না।
স্বভাবতই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাজকর্ম প্রভাবিত করার এবং তাহাকে শাসক দলের স্বার্থ চরিতার্থ করার যন্ত্র হিসাবে ব্যবহার করার পুরানো অভিযোগ নূতন করিয়া মাথা চাড়া দিয়াছে। কোলগেট কেলেঙ্কারির সি বি আই তদন্তের নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টেরই। এই কেলেঙ্কারিতে যে বিপুল পরিমাণ টাকার অন্যায় লেনদেনের অভিযোগ উঠিয়াছে, বিশেষ বিশেষ স্বার্থগোষ্ঠীর সুবিধা করিয়া দিতে গিয়া সরকারের যে সমূহ লোকসানের কথা বলা হইয়াছে, তাহার দায় শনাক্ত করিতেই এই তদন্ত। সেই তদন্তের রিপোর্ট শীর্ষ আদালতে জমা পড়ার আগে আইনমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অফিসাররা কেন তাহা দেখিতে চাহিবেন? চাহিলেই বা তাহা দেখানো হইবে কেন? স্বভাবতই সন্দেহ দানা বাঁধিয়াছে যে, সরকারি কর্তারা রিপোর্টে ‘সংশোধন’ করিতে বলিয়াছেন এবং সি বি আই সেই নির্দেশ মান্য করিয়াছে। তেমন কোনও রদবদল করা হইয়াছে কি না, হলফনামায় সে বিষয়ে কিছুই বলা হয় নাই। এই মৌন কীসের লক্ষণ, বলা কঠিন। এমন কথা মনে রাখিবার যথেষ্ট কারণ আছে যে, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে ইউ পি এ সরকার নিরপেক্ষ তদন্তকারী রূপে দেখিতে চায় না। তাহার নানা সঙ্কেত ইহার আগেও মিলিয়াছে। যে দিন ডি এম কে ইউ পি এ সরকার হইতে সমর্থন তুলিয়া লয়, কার্যত তাহার পরমুহূর্তেই ডি এম কে নেতাদের বাড়িতে ও দফতরে তদন্তকারীদের হানাদারি স্মরণীয়। কেন্দ্রীয় সরকার সে দিন সাফাই দিয়াছিল, এই হানাদারির নেপথ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের হাত নাই। কিন্তু এই কৈফিয়ত স্বভাবতই বিশ্বাসযোগ্য হয় নাই। অন্ধ্রপ্রদেশের জগন্মোহন রেড্ডি, উত্তরপ্রদেশের মায়াবতী ও মুলায়ম সিংহ যাদবদের বিরুদ্ধে সি বি আই তদন্তের গতিতে উত্থানপতনের পিছনে কেন্দ্রীয় শাসক দলের রাজনৈতিক স্বার্থ সন্ধান করিলে তাহাকে অযৌক্তিক বলা কঠিন।
সি বি আইকে যদি তাহার পক্ষপাতিত্বের কলঙ্ক ঘুচাইয়া নিরপেক্ষতার মর্যাদা ফিরিয়া পাইতে হয়, তবে তাহার কাজে শাসকদের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ সম্পূর্ণ বন্ধ করিতে হইবে। পাশাপাশি, সি বি আইয়ের কর্তাদেরও শিরদাঁড়া শক্ত রাখিয়া কাজ করিতে হইবে। এই ধরনের সংস্থার আধিকারিকদের নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পর্কে তর্ক উঠিয়াছে। সি বি আইকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন না রাখিয়া বিচারবিভাগের অধীনে আনা উচিত কি না, সে বিষয়েও তর্ক আছে। তর্ক অপ্রাসঙ্গিক নয়। কিন্তু যে ভাবেই তাঁহাদের নিয়োগ করা হউক এবং যে কাঠামোর মধ্যেই তাঁহারা কাজ করুন, নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করিবার নৈতিক দায়িত্ব এই সব প্রতিষ্ঠানের কর্তারাও এড়াইতে পারেন না। উপরমহল হইতে অন্যায় নির্দেশ আসিলে সেই নির্দেশ তাঁহারা মানিবেন কেন? প্রয়োজনে পদত্যাগ করিবেন, অন্তত প্রতিবাদ জানাইবেন, ইহাই কি প্রত্যাশিত নহে? তাঁহাদের উচ্চ পদই কি তাঁহাদের দায়িত্ব অনেক বেশি বাড়াইয়া দেয় না? আইন করিয়া নৈতিকতা প্রতিষ্ঠিত করা যায় না। শেষ বিচারে, নৈতিকতা আচরণের প্রশ্ন, চরিত্রের দৃঢ়তার প্রশ্ন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.