|
|
|
|
‘কারখাট ব্যাঙ্ক’ কাণ্ডে বদলেছে সরকার, কিন্তু জালিয়াত মুক্তই |
রাজীবাক্ষ রক্ষিত • গুয়াহাটি |
বাংলার সারদা গোষ্ঠীর ‘ম্যাডাম’ না হয় ‘সেন স্যারের’ দয়ায় প্রলোভনের কারবারে প্রধান হয়ে উঠেছিলেন, কিন্তু আইজলের সি লালমুয়ানপুইয়া স্রেফ একার বুদ্ধিতে দুই রাজ্যের সহস্রাধিক মানুষকে বোকা বানিয়ে লোপাট করে দিয়েছিলেন ৩০ কোটি টাকা! তাঁর সঞ্চয় প্রকল্পের নামটিও ছিল খাসা। ‘এক সপ্তাহের ব্যাঙ্ক’। ১০০ টাকা জমা দিলে হপ্তা শেষে মিলবে ১১০ টাকা। শেষ অবধি ধরা পড়েছিলেন লালমুয়ানপুইয়া। জেলে যান। জামিনও হয়। কিন্তু আজ অবধি ভুয়ো সংস্থা থেকে টাকা ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে কোনও আইন না থাকায় একজন আমানতকারীও টাকা ফেরত পাননি। ২০০৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে হওয়া এই ঘটনার জেরে রাজ্যে সরকারই বদলে গিয়েছিল। ক্ষমতায় এসে, কংগ্রেস সরকার চিট ফান্ডের বিরুদ্ধে নতুন আইন চালু করে।
মিজোরাম ও কাছাড়ের যে মানুষগুলিকে নিশানা করেছিলেন স্মার্ট-সুন্দরী লালমুয়ানপুইয়া, তাঁদের সিংহভাগই খেটে খাওয়া গরিব মানুষ। প্রত্যন্ত গ্রাম, যেখানে কোনও ব্যাঙ্কের শাখা নেই সেখানে মাসে ৪০ শতাংশ সুদের লোভে এই ‘কার খাট ব্যাঙ্ক’-এ টাকা টানতে ৩৮ বছর বয়সী লালমুয়ানপুইয়ার তেমন সমস্যা হয়নি। গ্রামের মহিলা ও যুবকদের প্রলোভন দেখিয়ে এজেন্ট নিয়োগ করেন। তাঁরাই ঝুমচাষী, শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করত। পুলিশের হিসেবে মাত্র ছয় মাসের ব্যবসায় প্রায় ত্রিশ কোটি টাকা সংগ্রহের পরে আচমকাই চিংগা ভেং এলাকার বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যান মালকিন। পুলিশ তদন্তে নেমে প্রথমে সাত কর্মীকে গ্রেফতার করে। বাজেয়াপ্ত হয় ২ কোটি ৩৯ লক্ষ নগদ টাকা, ৯টি গাড়ি, ৮টি জমির দলিল, বহু পাশবই ও চেক বই। বিশেষ তদন্তকারী দল গড়া হয়। গ্রামে গ্রামে শুরু হয় বিক্ষোভ। জানা যায়, অধিক মুনাফার লোভে সরকারী কর্মী, বড় ব্যবসায়ীরাও লালমুয়ানপুইয়ার ‘ব্যাঙ্ক’-এ টাকা রেখেছিলেন। পড়শি মায়ানমারের অনেক ব্যবসায়ীও মোটা টাকা হারান। একাধিকবার পুলিশের চোখে ধুলো দেওয়ার পরে বরাকের করিমগঞ্জ জেলার পাথারকান্দি থেকে লালমুয়ানপুইয়া ও তাঁর প্রধান সঙ্গী যোশেফ পারিটোস ধরা পড়েন। আরও ৩৬ লক্ষ টাকা মেলে। মোট গ্রেফতার হয় ২৫ জন। মোট জমা পড়া এফআইআরের সংখ্যা ২০০।
কিন্তু লালমুয়ানপুইয়াকে কারাগারে আটকে রাখা যায়নি। পর্যাপ্ত আইন না থাকায় পুলিশের তদন্তেও তেমন জোর ছিল না। মিজোরামের অ্যাডভোকেট জেনারেল বিশ্বজিৎ দেব বলেন, “মানুষ ঠকেছেন, তাঁদের ন্যায্য টাকা মার গিয়েছে জেনেও কোনও রাজ্য সরকারেরই কিছু করার থাকে না। কারণ, আজ অবধি এই ধরণের সংস্থা থেকে টাকা আদায় করে আমানতকারীদের ফেরত দেওয়া সংক্রান্ত কোনও আইন নেই। বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতারণা, মিথ্যা আশ্বাসের অভিযোগে মামলা করা যায়। কিন্তু জামিন তো হবেই।” এই ঘটনার জেরে মিজোরাম রাজনৈতিক আলোড়ন হয় তীব্র। বদলে যায় সরকার। ক্ষমতায় এসেই সরকার আইন করেছে, সেবি বা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের লাইসেন্স ছাড়া রাজ্যে কোনও সঞ্চয় প্রকল্প চালানো যাবে না। |
|
|
|
|
|