মুদ্রা, ডাকটিকিটের ঝুলি নিয়ে স্কুলে হাজির প্রবীণ
কেমন ছিল মুঘল আমলের মুদ্রা বা পরাধীন ভারতের ডাকটিকিট। এ নিয়ে কৌতুহল থাকলেও তার দেখা মেলা যথেষ্টই কঠিন। বিশেষত স্কুলে ইতিহাস বইয়ের পাতায় বিভিন্ন মুদ্রার ছবি দেখে যে কৌতুহল, বিস্ময় তৈরি হয়, তা মেটাতে হল জাদুঘরে দৌড়নো ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না পড়ুয়াদের। তবে শিল্পাঞ্চলের পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ইদানিং অন্যরকম। তাদের জন্য জাদুঘরকেই হাতের সামনে এনে দিয়েছেন এক প্রবীণ। ব্যক্তিগত সংগ্রহের প্রায় আড়াই হাজার প্রাচীন মুদ্রা ও বিভিন্ন দেশের ২৫ হাজার ডাকটিকিট নিয়ে স্কুলে স্কুলে ঘুরছেন তিনি।
মূলত দিল্লির বাসিন্দা এই ব্যক্তির নাম জওহর ইসরানি। আসানসোলে একটি বেসরকারি সংস্থার কার্যালয়ে উচ্চপদে কাজ করেন তিনি। পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশেও একসময় থাকতেন। জওহর ইসরানি নিজেই জানালেন, স্কুলে পড়ার সময় থেকেই এক শিক্ষকের অনুপ্রেরণায় ডাকটিকিট সংগ্রহ শুরু করেন। সেই শুরু। তারপর অভ্যেস কবে নেশায় বদলে গিয়েছে নিজেও জানেন না। বলেন, “কলেজে পড়ার সময় প্রাচীন মুদ্রাও সংগ্রহ করতে শুরু করি। তারপর প্রায় প্রত্যেক দিনই কোথাও না কোথাও মুদ্রা বা ডাকটিকিটের খোঁজে ঘুরে বেরিয়েছি।” বর্তমানে তাঁর কাছে বিভিন্ন দেশের কয়োক’শো বছরের প্রাচীন মুদ্রা রয়েছে। রয়েছে মুঘল ও কচ আমলের মুদ্রাও। পৃথিবী জুড়ে ১২০টি দেশের দুর্লভ ডাকটিকিটও তাঁর সংগ্রহে রয়েছে। কিন্তু কোথা থেকে পেলেন এত সব? তিনি জানান, বিদেশী বন্ধু, পরিচিত ও বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদৃতদের দফতর থেকে জোগাড় করেছেন।
প্রদর্শনী চলছে স্কুলে।—নিজস্ব চিত্র।
বহু বছর ধরে মূল্যবান জিনিসগুলি ঘরেই যত্নে সাজিয়ে রেখেছিলেন। অনেক নামীদামি মানুষ তা দেখার জন্য এসেছেনও সেখানে। কিন্তু একদিন হঠাৎই মনে হল জমানো জিনিসগুলি ঘরে ফেলে না রেখে ব্যবহার করা উচিত। জওহরবাবু বলেন, “আমার মনে হল স্কুল পড়ুয়াদের এসব দেখানো উচিত। পুরনো আমলের মুদ্রা, ডাকটিকিট দেখে তারা সেই সময়কে বুঝতেই পারবে। আনন্দও পাবে।” এই ভাবনা থেকেই শিল্পাঞ্চলের স্কুলগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেন তিনি। তারপরে তাদের সম্মতিতে সময়মতো মুদ্রা ও আর ডাকটিকিটের সংগ্রহ নিয়ে হাজির হয়ে যাচ্ছেন স্কুলে। তাৎক্ষণিক প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করে তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন সকলকে।
সম্প্রতি আসানসোল রামকৃষ্ণ মিশনেও এরকম একটি প্রদর্শনী হয়ে গেল। ইতিহাস বইয়ের পাতায় দেখা ছবি বাস্তবে, হাতের কাছে দেখে রোমাঞ্চিত হল পড়ুয়ারা। নানা দেশের ডাকটিকিট দেখেও আনন্দিত হয়েছে তারা। নবম শ্রেণির ছাত্র দিব্যেন্দু সাহা বলে, “খুব ভালো লেগেছে এগুলি দেখতে।” নবম শ্রেণিরই আরেক ছাত্র রোশন বাজপেয়ী বলে, “আমিও ডাকটিকিট জমাই। এই ডাকটিকিটগুলো দেখে অবাক হয়ে গিয়েছি।” রামকৃষ্ণ মিশন স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুখানন্দ মহারাজ প্রবীন নাগরিকের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি জানান, এ সব দেখে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে একটি সুস্থ, সাংস্কৃতিক অভ্যাস গড়ে উঠবে। আসানসোলের এক স্কুলের ইতিহাস শিক্ষিকা সুনীতা চট্টরাজ বলেন, “মনে হয়, এই কয়েনগুলি মুঘল আমলের। উনি খুব ভাল কাজ করছেন।” আসানসোল শিল্পাঞ্চলের একাধিক মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে এখন নিয়মিত এসবের প্রদর্শনী করছেন ইসরানী। তিনি জানান, ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহ দেখে নতুন করে উৎসাহ পাচ্ছেন তিনিও।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.