ল্যান্ডব্যাঙ্কের ভাঁড়ার ভরতে জমি খাস করার প্রক্রিয়ায় গতি আনতে চায় রাজ্য সরকার। বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থার অব্যবহৃত জমি খাস করা হবে। সিলিং-বহির্ভূত জমিও ফেরত নেওয়া হবে। অব্যবহৃত জমি দ্রুত ল্যান্ডব্যাঙ্কে ফেরত নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সব জেলা প্রশাসনকে।
তবে ভূমি দফতরের আধিকারিকদের বক্তব্য, বড় বড় কারখানার জমির একটা হিসাব দফতরে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সংস্থা তার বাইরে কত জমি নিয়ে রেখেছে, তার জন্য ১৪ ওয়াই ধারায় তারা অনুমতি পেয়েছে কি না, এগুলো বোঝা কঠিন নয়। তাদের শো-কজ করে উপযুক্ত জবাব না পেলেই সেই জমি খাস করা যাবে। কিন্তু ব্যক্তিগত মালিকানার ক্ষেত্রে আলাদা-আলাদা ফাইল নেই। তাই সিলিং বহির্ভূত জমি থাকার অভিযোগ না এলে, বা নির্দিষ্ট তথ্য না পেলে, ভূমি আধিকারিকদের পক্ষে অতিরিক্ত জমি চিহ্নিত করা কঠিন। তার উপরে পঞ্চায়েত নির্বাচন এসে পড়ায়, আগামী ছ’মাসের আগে জমি খাস করার কাজ গতি পাবে বলে মনে করছেন না জেলা স্তরের ভূমি আধিকারিকেরা।
বেসরকারি শিল্পের জন্য রাজ্য কোনও অবস্থাতেই জমি অধিগ্রহণ করবে না এই নীতির জন্য ভারী ও বড় শিল্পে ইতিমধ্যেই ভাটার টান। কারণ, রাজ্যের জমি ব্যাঙ্কে একলপ্তে বড় শিল্পের জন্য দেওয়ার মতো জমি কার্যত নেই। যে জমি রয়েছে, তা বিক্ষিপ্ত এবং আয়তনেও বড় নয়। তা ছাড়া, ভূমি সংস্কারের পরে রাজ্যে ছোট জমির সংখ্যাই বেশি। সিলিং-বহির্ভূত জমি খাস করা হলেও, ভারী বা বড় শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় আকার বা আয়তনের জমি কতটা মিলবে তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ থাকছেই।
তা হলে কেন জমি খাস করার এই বাড়তি তাগিদ?
ঘটনা হল, মুখ্যমন্ত্রীর সাধের ‘নিজ ভূমে নিজ গৃহ’ প্রকল্পে ভূমিহীনদের বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার কাজ হোঁচট খাচ্ছে জমির অভাবে। পাট্টা দেওয়ার মতো জমি খুঁজে বার করতেও জেলায় জেলায় হিমশিম খাচ্ছেন প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। তার উপরে বিভিন্ন জেলায় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন আরও প্রকল্প। ব্লকে-ব্লকে কিষাণ মান্ডি, খাদ্য-সরবরাহ দফতরের গুদাম, স্কুল, কলেজ, আইটিআই, বিশ্ববিদ্যালয় বা হাসপাতাল প্রতিটি গড়তেই খাসজমি চাই।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত অর্থবর্ষে রাজ্যে ১২ হাজার একর জমি খাস করার লক্ষ্যমাত্রা নির্দিষ্ট করেছিল ‘ডিরেক্টর অব ল্যান্ড রেকর্ডস অ্যান্ড সার্ভে’। গত বছর মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মাত্র দেড় হাজার একর জমি খাস করা গিয়েছে। বাকি জমি অবিলম্বে খাস করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলাগুলিকে। কোন জেলাকে কত পরিমাণ জমি খাস করতে হবে, তারও তালিকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, বাঁকুড়ায় ৭৯২ একর, বর্ধমানের ১১৮৮, বীরভূমে ৬৮৪, পশ্চিম মেদিনীপুরে ১০৪৪, পুরুলিয়ায় ৭২০, পূর্ব মেদিনীপুরে ৯০০এ ভাবেই প্রতিটি জেলার জন্য জমি খাস করার লক্ষ্যমাত্রা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা জানান, খাসজমি চিহ্নিত করে তা দখলমুক্ত করার প্রক্রিয়া নিয়মিত ব্যাপার। তবে, এ বছর জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারিতে রাজ্য স্তরের কর্তারা জেলা ও মহকুমা স্তরের ভূমি আধিকারিকদের সঙ্গে দু’টি বৈঠক করেন কলকাতায়। তাতে সেই কাজে গতি বাড়িয়ে জেলায় জেলায় ল্যান্ডব্যাঙ্কে যাতে ফাঁকা জমির পরিমাণ বাড়ে, তা নিশ্চিত করতে বিশেষ ভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এই অবস্থায় জমি খাস করার কাজ জোর কদমে শুরু করেছে সব জেলা প্রশাসনই। জলপাইগুড়ি ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, গত এক মাসে সমানে সন্ধান চালিয়ে প্রায় ১,০০০ একর খাসজমি চিহ্নিত করা হয়েছে। তা দখলমুক্ত করার চেষ্টা চলছে। বাঁকুড়ায় সম্প্রতি ব্লক ও মহকুমা স্তরের ভূমি সংস্কার আধিকারিকদের সঙ্গে সার্কিট হাউসে বৈঠক করেন জেলাশাসক। সেখানে দ্রুত অব্যবহৃত জমি ল্যান্ডব্যাঙ্কে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরুর কথা বলেন তিনি। কোন ব্লকে কত জমি পড়ে আছে, দ্রুত তার রিপোর্ট জমা করতেও বলা হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে বিএলআরও-দের সিলিং বহির্ভূত জমির তালিকা তৈরি করতে বলেছেন জেলা স্তরের আধিকারিকরা। তালিকা তৈরি হলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, কোন ক্ষেত্রে কোন স্পেশ্যাল রেভিনিউ অফিসারকে জমি খাস করার দায়িত্ব দেওয়া হবে। |