রবিবাসরীয় প্রবন্ধ ১...
চেনা গল্প
দুপুর থেকেই বাড়িটার সামনে লোক জমা হতে শুরু করেছিল। ভিড় বাড়ল বিকেল চারটে নাগাদ। গৃহস্থের নাম ধরে ডাকাডাকি, খুচখাচ বক্রোক্তি, গলা তুলে হুমকি ইত্যাদি চলছিল। গৃহস্থের সদ্য গোঁফের রেখা ওঠা কিশোর ছেলেটি অনেক বার বাইরে বেরিয়ে আওড়েছিল শিখিয়ে দেওয়া মিথ্যে কথাটি, ‘বাবা বাড়ি নেই’। ভিড়টা তবু নড়েনি। সেই ভিড়ের ভিতরেই ছিল স্থানীয় এক রিকশাওয়ালা। বাড়ির উলটো দিকের ভাঙা পাঁচিলটার ওপর উবু হয়ে বসে একটার পর একটা বিড়ি টেনে যাচ্ছিল সে। লোকটার একবুক ক্ষোভ যেন ধিকিধিকি আগুন হয়ে জ্বলছিল তার বিড়ির আগায়। হঠাৎ পাঁচিল থেকে লাফ দিয়ে নামল লোকটা, রাস্তার ধার থেকে একটা আধলা ইট তুলে নিয়ে, অশ্রাব্য গালাগাল দিতে দিতে, সজোরে ছুড়ে মারল বাড়ির টালির চাল লক্ষ্য করে। বিক্ষুব্ধ জনতা যেন এত ক্ষণ এই ইন্ধনটুকুরই অপেক্ষায় ছিল। মুহূর্তের মধ্যে প্রবল ইটবৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। তার পর তারা হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ল ভিতরে, টেনে-হিঁচড়ে বার করে আনল লুকিয়ে থাকা সেই গৃহস্থকে। শুরু হল চড়-চাপড়।
বাড়ির ভিতরে চৌকির এক কোনায় তখন ভয়ে জড়সড় হয়ে বসে সেই কিশোর, তার ছোট্ট বোনটিকে বুকে আঁকড়ে ধরে। তাদের মা তখন মরিয়া হয়ে বাইরে বেরিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন সেই ভিড়ের মধ্যে, স্বামীকে বাঁচাতে। জানলার পরদা সরিয়ে সেই কিশোর দেখেছিল এক দল উন্মত্ত মানুষের হাতে তার বাবা-মা’র তুমুল লাঞ্ছনা। শুনেছিল, সমস্ত হই-হট্টগোল ছাপিয়ে সেই রিকশাওয়ালার তীক্ষ্ণ চিৎকার: ‘কোম্পানি-টোম্পানি জানি না, তুই-ই আমাদের টাকা মেরেছিস। তোকেই টাকা ফেরত দিতে হবে।’
পাড়ার কিছু গণ্যমান্য লোক এসে থামান তাদের। তাঁদের হস্তক্ষেপে আর সেই গৃহবধূর সজল চোখের মিনতিতে খানিক শান্ত হয় উন্মত্ত জনতা। তার পর ছেঁড়া জামা, এলোমেলো চুল আর বিধ্বস্ত চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সেই গৃহস্থকে এই মর্মে প্রতিশ্রুতি দিতে হয়: যে ভাবে হোক তিন মাসের মধ্যে তিনি সকলের টাকা ফিরিয়ে দেবেন।
সে দিন বারবার বলা সত্ত্বেও উপস্থিত জনতার কেউ বিশ্বাস করতে চায়নি, শুধু তাদের টাকাই নয়, ওই লাঞ্ছিত মানুষটির নিজেরও সঞ্চিত প্রায় কুড়ি হাজার টাকা লোপাট হয়ে গিয়েছিল একই দিনে, একই ভাবে।
ঘটনাটা সেই ১৯৯২ সালের। সে দিনের সেই সদ্য কৈশোরে পা রাখা ছেলেটিই আজকের এই মধ্যবয়সি কলমচি। আর সেই বিপন্ন গৃহস্থ, আমার বাবা, তখন ছিলেন পেশায় এক জন রেল-হকার। দুঃখীর দুঃখী, দরিদ্রের দরিদ্র একটা পরিবারকে প্রতিপালন করতেন তিনি লোকাল ট্রেনের কামরায় কামরায় কখনও লেবু লজেন্স, কখনও কলম ফেরি করে।
নিজে লেখাপড়া শিখতে পারেননি, তাই সাধ করে ছেলেকে ভর্তি করেছিলেন একটা নামী মিশনারি স্কুলে, যার মাসিক বেতন তখনকার দিনেই ছিল একশো টাকা। মেয়েকে দিয়েছিলেন নাচের ক্লাসে। সাধ আর সাধ্যের সেই ঝোড়ো হাওয়া আর পোড়ো বাড়িটাকে মেলাবার চেষ্টায় তিনি যখন দিশেহারা, দু’টো পয়সা অতিরিক্ত রোজগারের ফিকির খুঁজে মরছেন দিনরাত, সেই সময়ই তাঁর আর এক হকার-বন্ধু বাড়িতে এনে হাজির করল এক স্বপ্নের ফেরিওয়ালাকে। জানা গেল, সে একটা স্বল্প-সঞ্চয় সংস্থার এজেন্ট।
আমি আজও স্পষ্ট মনে করতে পারি সেই স্বপ্ন-বিক্রেতা যুবকটির মুখ। ধোপদুরস্ত পোশাক-আশাক পরা আর মুখে কথার তুবড়ি ছোটানো সেই যুবকটি কিন্তু এক সদ্য-কিশোরের কাছেও তার চেহারায় দারিদ্রের ছাপটা লুকোতে পারেনি, লুকোতে পারেনি চোখের চাহনিতে বেকারত্বের তীব্র যন্ত্রণাকে। সে দিন বুঝিনি, আজ বুঝি, ওই রকম শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীরাই সচরাচর ওই জাতীয় স্বল্প-সঞ্চয় সংস্থাগুলোর প্রথম এবং ‘সফ্ট টার্গেট’ হয়ে থাকে। কোম্পানির কর্তাব্যক্তিদের হয়ে স্বপ্নের সওদাগরি করে বেড়ায় ওরাই।
ভারি সুন্দর নাম ছিল সেই চিট-ফান্ডটার: ‘দ্য সেলিব্রেট স্মল সেভিংস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড’। সেই ছেলেটা আমার বাবাকে জোরাজুরি করতে লাগল কোম্পানির এজেন্ট হওয়ার জন্য। বলল, মাত্র দশ জন নতুন এজেন্ট খুঁজে দিতে পারলেই নাকি আমার বাবা প্রোমোশন পেয়ে যাবেন ‘ফিল্ড অফিসার’ পদে। আবার সেই দশ জন এজেন্টের পাঁচ জন যদি নিজগুণে ‘ফিল্ড অফিসার’ হয়ে যেতে পারে, তা হলে আমার বাবা ‘অটোমেটিক্যালি’ হয়ে যাবেন এক জন ‘এগজিকিউটিভ’। আমি দেখেছিলাম, ওই গালভরা উচ্চ-পদগুলোর নাম শুনতে শুনতে আমার শ্রমজীবী বাবার চোখগুলো কী দুর্মর এক স্বপ্নাকাঙ্ক্ষায় চকচক করে উঠছিল।
আর রোজগার? সে হিসেবটাও কম চমকপ্রদ ছিল না। যুবকটি কোম্পানির ছাপানো পুস্তিকা খুলে দেখিয়েছিল, যাঁরা আমানতকারী হবেন, তাঁরা জমানো টাকার ওপর বার্ষিক ৫০%-৬০% হারে সুদসহ নির্দিষ্ট সময় পরে টাকা ফেরত পাবেন। আমানতের কিস্তির পরিমাণগুলোও আপাত দৃষ্টিতে ছিল খুবই অল্প। দৈনিক মাত্র পাঁচ, দশ বা পঞ্চাশ টাকা। টাকাটা সাপ্তাহিক বা মাসিক, যেমন সুবিধে দেওয়া যাবে। ‘স্কিম’গুলো ছিল এক, পাঁচ এবং দশ বছরের। আমানত যত দীর্ঘমেয়াদি, সুদের হারের টোপ ছিল তত বেশি। সেই পুস্তিকায় এই ঘোষণাও ছিল: প্রত্যেক গ্রাহকের লগ্নির থেকে এজেন্ট পাবেন ৫% হারে কমিশন। আর প্রত্যেক ‘ফিল্ড অফিসার’ তাঁর নিযুক্ত এজেন্টদের মোট লগ্নির থেকে পাবেন ৩%।
অতএব ‘দ্য সেলিব্রেট স্মল সেভিংস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি’-র এজেন্ট হলেন আমার বাবা, সেই সন্ধ্যায়। শুরু হল তাঁর নতুন জীবন। এজেন্ট হয়ে তিনি পেলেন এক গাদা ছাপানো কাগজ, পুস্তিকা, ফর্ম ইত্যাদি, আর পেলেন সুদৃশ্য লাল প্লাস্টিকের জ্যাকেটে মোড়া কিছু ছোট ছোট ‘পাসবুক’। অবিকল ব্যাঙ্কের পাসবই-এর মত দেখতে ওই বইগুলোতেই আমানতকারীদের জমা টাকার খতিয়ান থাকত। সপ্তাহান্তে এক বার যাদবপুরে যেতেন বাবা, একটা গলির-গলি-তস্য-গলির ভিতর একটা বাড়ির দোতলায় ছিল কোম্পানির হেড অফিস। সাপ্তাহিক লগ্নির টাকা সেখানে জমা করে পাসবুকগুলোতে রাবার-স্ট্যাম্প মারিয়ে আনতেন। পরে অবশ্য বিভিন্ন জায়গায় একাধিক শাখা-অফিস তৈরি হয়েছিল সেই সংস্থার, যার একটা ছিল আমাদের মফস্সল শহরেও। সারা দিন টো-টো করে ঘুরে বেড়াতেন বাবা নতুন নতুন লগ্নিকারীর সন্ধানে। পুরনো পেশাটাকে অবশ্য একেবারে ছেড়ে দেননি, কিন্তু তার জন্য বরাদ্দ সময় কমিয়ে, সেই সময়টায় ব্যাগ-বোঝাই কাগজপত্র নিয়ে পরিচিত-অপরিচিত লোকের বাড়ি-বাড়ি হানা দিতেন। রাতে হা-ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে সেই পাসবুকগুলো নিয়ে বসতেন জমা টাকার হিসেব মেলাতে। লাল মলাটের ওপর সাদা কালিতে ছাপানো কোম্পানির ‘লোগো’-সহ সেই পাসবইগুলোর একটা-দু’টো আজও— এই এত বছর পরেও— মাঝে মাঝে হঠাৎ বেরিয়ে পড়ে আমাদের বাড়ির আনাচ-কানাচ থেকে। সেগুলোর দিকে তাকিয়ে হাড় হিম হয়ে আসে।
পেশায় ফেরিওয়ালা ছিলেন আমার বাবা, তাই কথার জালে মানুষকে জড়িয়ে ফেলার কায়দা-কানুন ভালই রপ্ত ছিল তাঁর। তা ছাড়া ওই রকম লোভনীয় সুদের হার সামনে রেখে গ্রাহক জোটাতে তাঁকে বিশেষ বেগ পেতে হত না। প্রথম দিকের কিছু কিছু লগ্নিকারী বৎসরান্তে প্রতিশ্রুত অঙ্কের টাকা ফেরতও পায়, যা দেখে নতুন আগ্রহীরা ভিড় জমায়। ফলে অচিরেই আমার রেল-হকার বাবা ‘এজেন্ট’ থেকে ‘ফিল্ড অফিসার’ এবং তা থেকে এক লাফে ‘এগজিকিউটিভ’ র্যাঙ্কে পৌঁছে যান। সংসারের খানিকটা সুরাহা হয়। ঘর-দোরের শ্রী ফেরে, সন্তান-সন্ততির স্বাস্থ্যও। তার পর আচমকাই এক দিন দুম করে সেই আধলা ইটটা এসে আছড়ে পড়ে আমাদের বাড়ির টালির চালে। জানা যায়, বিনা নোটিসে বন্ধ হয়ে গেছে কোম্পানি। তালা পড়ে গেছে শহর এবং শহরতলি জুড়ে ছড়িয়ে থাকা সেই কোম্পানির খান দশেক অফিসের সবগুলোতেই। লগ্নিকারীরা তালা ভেঙে তছনছ করল অফিসগুলো, কিন্তু কিছু কাগজপত্র বোঝাই আলমারি আর দু’একটা চেয়ার-টেবিল ছাড়া কিছুই পেল না।
তখন জানা গেল— কী আশ্চর্য— বিগত পাঁচ-ছ’বছর ধরে চলা ওই কোম্পানির কর্তাব্যক্তিদের কেউই স্বচক্ষে দেখেনি কোনও দিন। যেন জালটা বুনে তুলেছিল কোনও এক অদৃশ্য মাকড়সা এবং যথাসময়ে সেই জালে পড়া মানুষগুলোকে ছিবড়ে করে দিয়ে উধাও হয়ে গেছে সে। অতএব ওই ‘এজেন্ট’, ‘এগজিকিউটিভ’ ইত্যাকার গালভরা পদে ছিল যে মানুষগুলো, তারাই লগ্নিকারীদের আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়াল।
এর পর বেশ কয়েক মাসের জন্য আমার বাবা আত্মগোপন করতে বাধ্য হন। দিনের পর দিন কোথায় থাকতেন, কী করতেন, তার কোনও ঠিক-ঠিকানা ছিল না। মাঝে মাঝে মাঝরাতে চুপিচুপি এসে মায়ের হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিয়ে আবার অন্ধকার থাকতে বেরিয়ে যেতেন। পরে শুনেছি বাবার মুখে, সেই সময় দূরপাল্লার ট্রেনে হকারি করা শুরু করেছিলেন তিনি, আর বেশির ভাগ রাত কাটিয়েছিলেন প্ল্যাটফর্মে চাদর পেতে শুয়ে।
আর এ দিকে সেই আমানতকারীদের যাবতীয় আক্রমণের নিশানা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন আমার অসহায় মা। রাস্তাঘাটে তাঁকে প্রচুর কটূক্তি আর বক্রোক্তি হজম করতে হত। ছাড় পেতাম না আমরা দুই ভাই-বোনও। মাঝে মাঝেই পথেঘাটে পাকড়াও করা হত আমাদের, জানতে চাওয়া হত— বাবা কোথায় লুকিয়ে আছেন? রাত্রে বাড়ি ফেরেন? আমরাও অনেক কিছু জানা সত্ত্বেও নিবির্কার ভাবে একটাই জবাব দিতাম, ‘জানি না তো’। আমাদের সেই হঠাৎ-বড়-হয়ে-যাওয়া ভাই-বোনের অভিনয়ে বিভ্রান্ত হয়ে তারা ছেড়ে দিত আমাদের।
তার পর হঠাৎই এক দিন সন্ধ্যায় প্রাইভেট টিউশন থেকে বাড়ি ফিরে জানতে পারলাম, হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আমার মা। বিকেলবেলা খেলা সেরে বাড়ি ফিরে অনেক ডাকাডাকি করেও সাড়া না পেয়ে প্রতিবেশীদের ডেকে এনেছিল বোন, তারা দরজা ভেঙে ঘরের মেঝেতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকা আমার মা’কে হাসপাতালে নিয়ে যান। সে দিন হাসপাতালে আমার মায়ের পেট থেকে পাম্প করে বার করা হয়েছিল— না, সেই লগ্নিকারীদের জমানো টাকা নয়— খান চল্লিশেক ঘুমের ট্যাবলেট। লাগাতার সামাজিক অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন মা। আর খুবই আশ্চর্য ভাবে, সেই আত্মহত্যার ব্যর্থ চেষ্টার পরই বিক্ষুব্ধ আমানতকারীরা কেমন যেন একটু দমে গেল। খবর পেয়ে বাবা ফিরে এলেও তাঁকে আর বিশেষ উত্ত্যক্ত করল না কেউই। আমরা বেঁচে গেলাম সে যাত্রায়।
দু’এক জন নাছোড়বান্দা আমানতকারী অবশ্য শেষ দেখেই ছেড়েছিল। তাদের লাগাতার হুমকির চাপে বাবাকে একে একে ঘড়ি, সাইকেল, আংটি— সবই বিক্রি করে দিতে হয়েছিল। টাকা ধার করতে হয়েছিল স্থানীয় মারোয়াড়ি ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে, চড়া সুদে। মাসের পর মাস তাদের আমি দেখেছি আমাদের বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে রক্তচক্ষু দেখিয়ে টাকা আদায় করে নিয়ে যেতে। মাসের পর মাস বাবা কিস্তিতে কিস্তিতে সেই দেনা মিটিয়েছেন, যে দেনার দায় আদৌ তাঁর ছিল না।
তবু, আজ গভীর অনুভবে জেনেছি, বিশেষ দোষ ছিল না সেই মানুষগুলোরও, যাদের জন্য আমার মা’কে সে দিন মৃত্যুর দরজা থেকে কোনও মতে ফিরে আসতে হয়েছিল। তারা সকলেই ছিল দিন-আনা-দিন-খাওয়া, বোকা, বুভুক্ষু মানুষ। যেমন ছিলেন আমার বাবা নিজেও। আজও সেই অসহায় মানুষগুলো রয়েছে আমাদের চারপাশে। তারা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বোঝে না, কোম্পানি অ্যাক্ট জানে না, পিরামিড বা পন্জি স্কিম-এর ছলচাতুরি তাদের অজানা। এমনকী সুদের শতকরা হারটা হিসেব কষে বার করতেও তাদের অধিকাংশই অক্ষম।
তারা কেবল তাদের দারিদ্র-মোচনের জন্য কোনও এক অলৌকিক স্বপ্ন-বিক্রেতার সন্ধানে হন্যে হয়ে ঘুরে মরে দিনরাত। যে বিশ্বাস থেকে অধিকাংশ তীর্থযাত্রী দলে দলে যায় দেবতার মাথায় জল ঢালতে, মাজারে যায় চাদর চড়াতে, স্বপ্নলব্ধ মাদুলি কবচ ধারণ করে বাহুতে-কোমরে, লটারির টিকিট কাটে গোছা গোছা, অবিকল সেই অলৌকিক স্বপ্ন-পূরণ-প্রত্যাশাতেই তারা টাকা রাখে ওই জাতীয় স্বল্প-সঞ্চয় সংস্থাগুলোতে। কিছু অপ্রত্যাশিত আয়, কিছু অতিরিক্ত স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য তারা এতটাই মরিয়া হয়ে থাকে সব সময়, আগুপিছু ভাববার অবকাশ বা বুদ্ধি কোনওটাই তাদের থাকে না, বা থাকলেও তাকে কাজে লাগাতে চায় না। একটা অলৌকিক সুযোগ ছাড়া আর কিছুই তাদের দিনকাল রাতারাতি বদলাতে পারবে না বলে, আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের রূপকথাকে তারা একেবারে বুকে আঁকড়ে ধরতে চায়, গুপ্তধনের গল্পটাকে পাশবালিশের মতো আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ঘুমোতে চায়।
মাস ছয়েক পর এক আত্মীয়ের বদান্যতায় বাবার একটা ছোটখাটো চাকরি জুটে যায়। আজও সেই চাকরি করছেন তিনি মন দিয়ে। অবসর নেবেন আর বছরখানেক বাদেই। সে দিন সকালে দেখলাম, খবরের কাগজটা হাতে ধরে চুপ করে বসে আছেন, দু’চোখ বেয়ে জলের ধারা নেমে এসে গালদু’টো ভিজিয়ে দিয়েছে। কাগজের প্রথম পাতায় সে দিন সারদা গোষ্ঠীর জালে পড়ে প্রতারিত সর্বস্বান্ত মানুষগুলোর হাহাকার ভরা মুখের ছবি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.