|
|
|
|
সেই চেন্নাইয়ে আজ এক অন্য কেকেআর
রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায় • চেন্নাই |
ওই তো দেখা যাচ্ছে মাদ্রাজ ক্রিকেট ক্লাবের অনিন্দ্যসুন্দর বারান্দাটা। ঠিক ওখানে, ওর সামনেই এক বছর আগে কিং খান ‘সমারসল্ট’ দিয়েছিলেন না?
আজ শাহরুখ আসবেন কি না নিশ্চিত নয়। কেকেআরের কারও কারও কাছে খবর, আসলেও আসতে পারেন। কিন্তু এলেও লাভ হবে তো? সেই রাম নেই, অযোধ্যাও তো নেই। সেই কেকেআরও বা কোথায়?
প্রেসবক্সের নাক বরাবর পোডিয়ামটা ছিল না? গৌতম গম্ভীররা তো ওখানেই কাপটা তুলেছিলেন। শনিবার ঠিক সেখানে নেট পড়েছে। এক ক্রুদ্ধ ক্যারিবিয়ান প্রবল আক্রোশে প্রায় প্রতিটা বল গ্যালারিতে ফেলে চলেছেন। ইনি, ডোয়েন ব্র্যাভো। সে দিনের শেষ ওভারের খলনায়ক। আর নায়ক? নাহ্, নেই। আসেননি। মনোজ তিওয়ারির চোট। তিনি কলকাতায়।
দু’টো দিন, ২৭ মে এবং ২৭ এপ্রিল। একই মাঠ, চিপক। মাঝে শুধু একটা বছর। কিন্তু অদৃষ্টের পরিহাস এমনই যে, এক বছর আগে যে চিপক থেকে ট্রফিজয়ের সুখস্মৃতি নিয়ে ফিরেছিল কেকেআর, এক বছর পর সেই চিপকেই পেপসি আইপিএলের চরমতম পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে।
একে তো যুদ্ধটা লিগ টেবলের বিচারে এক বনাম সাত। শুধু তাই নয়, চিপকের পরীক্ষায় ফেল মানে এ বারের মতো আইপিএল অভিযান মোটামুটি শেষ। রবিবার হারলে প্লে অফের অঙ্কটা অতীব সহজ। সাত ম্যাচে দরকার মাত্র সাতটা জয়, একশো স্ট্রাইক রেট সমেত! তুলবে কে? টানবে কে?
রাতের দিকে যে কেকেআর বোর্ড প্রেসিডেন্টের শহরে ঢুকে পড়ল, তাদের দেখে বোঝার উপায় নেই যে আইপিএল চ্যাম্পিয়ন টিম ঢুকছে। একে তো ফ্লাইট ঝাড়া দু’ঘণ্টা লেট। হোটেলে ঢুকে কেউ ঘরে, কেউ কোনও রকমে কফিশপে। বোঝা যায়, টিমটা ক্লান্ত। কিন্তু মনন? সেটাও বা কতটা ঝরঝরে?
ড্রেসিংরুমে অশান্তি। চেন্নাইয়ের ঘরের ছেলে বালাজির সঙ্গে ক্যাপ্টেনের লেগেছে।
টিমের তিন-তিন জন গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটারকে কলকাতায় রেখে আসতে হয়েছে। মনোজ তিওয়ারি। লক্ষ্মীরতন শুক্ল। এবং সচিত্র সেনানায়কে।
ক্যাপ্টেন গম্ভীর সম্ভবত বহির্জগতকে সন্দেহমুক্ত রাখার চেষ্টা করছেন। শনিবার ঘুম থেকে উঠে টুইটও করেছেন, ‘নাইট সমর্থকদের অশেষ ধন্যবাদ পাশে থাকার জন্য। এখন গরম দুধ খেতে খেতে কালকের ম্যাচের রিপিট টেলিকাস্ট দেখছি।’ অর্থাৎ, কিংস ইলেভেন ম্যাচ। কিন্তু তাতে আর কতটুকু কী হবে? ওই জয়ে অক্সিজেন মাস্ক খুলে ফেলা গেল ভাবলে চরম ভুল হবে। বরং জিতেও উত্তপ্ত ড্রেসিংরুম। শেষ ওভারে ১৮ দেওয়া নিয়ে মাঠেই বালাজিকে একপ্রস্ত কথা শুনিয়েছিলেন গম্ভীর। ড্রেসিংরুমে ফিরে আবার বাধে। তর্কাতর্কিও হয়। কেকেআরের পক্ষ থেকে সরকারি ভাবে এ দিন বলা হল, দু’জনে ঝামেলা নেই। গম্ভীর শুধু টিমের প্ল্যান বালাজিকে মনে করিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে, বালাজিকে চটিয়েই চেন্নাইয়ের ঘরের ছেলের শহরে পা দিলেন গম্ভীর।
মনোজ-লক্ষ্মীকে আবার নকআউট পাঞ্চে রিংয়ের বাইরে ছিটকে দিল চোট। মনোজের হাতে স্টিচ, নেই সাত দিন। লক্ষ্মী বাকি আইপিএলেই নেই। তাঁর হাঁটুর অবস্থা এতটাই মারাত্মক যে তিন মাস ক্রিকেটের বাইরে। আর সেনানায়কে? তিনি ক ও বো ‘আম্মা’! মানে, জয়ললিতা। যাঁর ফতোয়ায় চেন্নাইয়ে শ্রীলঙ্কানদের ঢোকা বন্ধ, অতএব সেনানায়কে কলকাতায়। যা পরিস্থিতি, কিংস ম্যাচ জিতেও সুপার কিংসের বিরুদ্ধে উইনিং কম্বিনেশন ভাঙতে বাধ্য হচ্ছেন গম্ভীর। লি বা দুশখাতে ঢুকতে পারেন।
সব দেখেশুনেই কি না কে জানে, চেন্নাই চার্জর্ড। শহর যেমন, টিমও তেমন। ‘প্রতিশোধের’ ম্যাচ, রবিবাসরীয় আবহ, সব মিলিয়ে ম্যাচের টিকিট সাত দিন আগেই ‘সোল্ড আউট’। সঙ্গে ফুটনোট টিমটাকে দেখে আবার মনে হচ্ছে এদের ডিকশনারিতে ‘হার’ বলে শব্দ নেই। ‘পারব না’ বলে কোনও ‘টার্ম’ নেই। আজ জাডেজা ৫ ওভারে ৫০ তুলে দিচ্ছেন, তো পরের দিন ধোনি ৩৭ বলে ৬৭! শনিবার যে ভাবে সিএসকে-র সহকারী কোচ অ্যান্ডি বিকেল দু’প্লেসিদের মতো যোগ্য বিদেশিদের বসিয়ে রাখা নিয়ে চিবিয়ে-চিবিয়ে ‘গুড প্রবলেম টু হ্যাভ’ শুনিয়ে গেলেন, এমএসডি-কে যে ভাবে নেটে মর্কেল-সংহারে মত্ত দেখাল, তাতে আজ রবিবার ‘বজ্রবিদুৎ সহ বৃষ্টির’ পূর্বাভাস থাকছে। আর দুই টিমের পারফরম্যান্স শিট, মানসিক স্থিতি দেখলে আচমকা মনে পড়ে যাবে চিপকে ঢোকার মুখে কাটআউটটা।
এক সঙ্গে দাঁড়িয়ে তিন। ধোনি, রায়না, রবিচন্দ্রন অশ্বিন। পাশে লেখা: ‘উইনার্স ডিফাইন দেয়ার লিমিটস। চ্যাম্পিয়নস রিডিফাইন দেম।’
আশ্চর্য সমাপতন মনে হতে পারে। কিন্তু আজকের প্রেক্ষিতে কথাটা বোধহয় সত্যি। জয়ী আর চ্যাম্পিয়ন এক নয়। দুইয়ে তফাত আছে। সব সময় তুলনা চলে না! |
|
|
|
|
|