সম্পাদকীয়...
বিশ্বাসের বদভ্যাস
চিট ফান্ডের মূলধন হইল বিশ্বাস। অবোধ ক্রেতাগণের অলীক বিশ্বাস। কারণ বিশ্বাসে মিলায় সুদ, তর্কে বহু দূর। তর্ক করিতে মস্তিষ্ক খাটাইতে হয়, এতটুকু লগ্নিতে এতখানি অর্থ প্রাপ্তি বাস্তবসম্মত কি না সেই গণিত হিসাবনিকাশ করিয়া বুঝিতে হয়। সর্বোপরি, নিজ অবস্থা যত দরিদ্র ও অসহায় হউক, কোনও রূপকথা সদৃশ সমাধান তাহার অন্ত ঘটাইবে না এই কঠিন সত্য গ্রহণ করিতে হয়। তাহার তুলনায় বহু গুণ সহজ হইল বিশ্বাস করা, কারণ তাহা করিতে কেবল বৃহত্‌ হাঁ করিয়া আশা গিলিতে হয়। একটি প্রস্তাব সম্যক ভাবে বুঝিয়া তবে সিদ্ধান্ত লইব, ইহা কাঠ-কাঠ ব্যাপার, শ্রমসাপেক্ষও বটে। তাহার অপেক্ষা জনতা অনেক স্বচ্ছন্দ নির্বুদ্ধিতা ও কান্নাকাটির রাজ্যে। ওই লোক আমার বিশ্বাস ভাঙিল এই আর্তনাদের মধ্যে অন্যের দোষটি ঘোষণা করা আছে, আত্মমায়া তো ষোলো আনা আছে, কিন্তু নিজ দায় সম্পর্কে উচ্চবাচ্য নাই। বিশ্বাস কথাটির পূর্বে যেন ব্র্যাকেটস্থ ‘নিঃশর্ত’ প্যারেড করিতেছে। কিছু ভাবি নাই, বুঝি নাই, নির্ভর করিয়া গা ছাড়িয়া দিয়াছিলাম, সমর্পণের মর্যাদা না রাখিয়া অবলম্বনটি চকিতে সরিয়া গেল?
অথচ এই বিশ্বে বিশ্বাসের উপর অতটা বিশ্বাস রাখিবার কথা নহে। সমুদ্রের উপর বিশ্বাস করিয়া পুরী বেড়াইতে গেলেন, সুনামি আসিয়া হোটেলের বারান্দা হইতে পোষা তোতা মুচড়াইয়া লইয়া গেল! আয়ুকে বিশ্বাস করিয়া পোস্টাপিসে টাকা রাখিলেন, দশ বছর পরে উহা দ্বিগুণ হইবে ও আপনি বিরিয়ানি সাঁটাইবেন, আপনার হৃত্‌পিণ্ড পরের শনিবারেই চাকরি ছাড়িয়া দেশে চলিয়া গেল! জীবন অনিত্য, পৃথিবী টলায়মান, মহাশূন্যে ধাবমান একটি ধূমকেতু ল্যাজের ঝাঁটা দিয়া ছুঁইলেই সোক্রাতেসের ঐতিহ্য ও হলিউডের হইহই সমেত সমগ্র সভ্যতা মুহূর্তে বিলুপ্ত হইয়া যাইবে। হইতেছে না যে, তাহা বরং অবিশ্বাস্য! সংবাদপত্রের প্রতিটি হেডলাইন হইতে কেবলই বিশ্বাস রাখিবার মূর্খতা সম্পর্কে নীতিবাক্য চিত্‌কৃত। নাবালিকা প্রতিবেশীকে বিশ্বাস করিয়া লজেন্স খাইতে গিয়া ধর্ষিত হইতেছে। হাতি রেলগাড়ির শুভবোধকে বিশ্বাস করিয়া লাইন পার হইতে গিয়া কাটা পড়িতেছে। স্বামী-স্ত্রী বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করিয়া সম্পর্ক শুরু করিয়াছিল, বিচ্ছেদ-মামলায় কদর্য অভিযোগ পরস্পরের প্রতি ছুড়িয়া মারিতেছে। তবু মানুষ বিশ্বাস করিব বিশ্বাস করিব বলিয়া চলিয়া আসিতেছে। বারংবার যে প্রেমিক বিশ্বাস ভঙ্গ করিয়াছে, নারী পুনরায় তাহার বক্ষে ঝাঁপাইতেছে। যে মাতা সম্পর্কে আদালতে দাঁড়াইয়া পুত্র বলিতেছে, ইনি ভাড়া করা ভিখারি মাত্র, সেই সন্তানকে জননী ক্রোড়ে টানিতেছেন। আদর্শযাহা বায়বীয় তত্ত্ব, কেবল তাহার প্রতি বিশ্বাস রাখিয়া লক্ষ তরুণ প্রাণ উত্‌সর্গ করিতেছে, তাহাদের উপদেষ্টাগণ আমেরিকা পলাইয়া ইংরাজিতে বিষণ্ণ হইতেছেন। কেন? হয়তো ইহাদের যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস নাই, তাই পর-বিশ্বাস ধরিয়া পার হইবার চেষ্টা। অবিশ্বাসের মধ্যে যে নির্মম আলোকরশ্মি রহিয়াছে, তাহার সম্মুখে আত্মব্যবচ্ছেদের ক্ষমতা নাই। ইহারা বিশ্বাস করিতেছে কারণ বিশ্বাস না করিলে নিজ বোধ ও কীর্তির উপর ভর রাখিয়া নিজেকে খাড়া হইয়া দাঁড়াইতে হইবে। নিজ কর্মের সকল পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও সেই কর্মফলের সকল দায়িত্ব নিজেকে লইতে হইবে। অন্যকে আকুল আলিঙ্গন করিয়া, ‘সকলই তোমারই ইচ্ছা’ বলিয়া কাহারও উপর ওজন ছাড়িয়া দেওয়া চলিবে না। অবিশ্বাস আলস্যকে প্রশ্রয় দেয় না। তাই, বারংবার চুরি যায় দেখিয়াও অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাসেরই ঘরে লগ্নি করেন। যেমন চোরা না শুনে ধর্মের কাহিনি, বিশ্বাসী না শুনে চুরির কাহিনি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.