সুদীপ্তর নতুন নেশা নিশাকে
নিয়ে চটেন দেবযানী
দুই নারী, হাতে তরবারি।
উপন্যাস কিংবা সিনেমার চেয়ে কম রোমাঞ্চকর নয় সারদা কর্তাকে নিয়ে দুই নারীর টানাপোড়েন।
পুলিশের কাছে দেবযানী মুখোপাধ্যায়ই জানান ইদানীং সুদীপ্ত সেনের জীবনে দ্বিতীয় নারীর কথা। পুলিশের ধারণা ছিল, এই রহস্যময়ী সারদায় কর্মরত মহিলা ব্রিগেডের কোনও সদস্যই হবেন। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে নিউটাউন থানায় জেরার সময় পুলিশ জেনেছে, তিনি সারদা গোষ্ঠীর কেউ নন। পঞ্জাবি ওই মহিলার নাম নিশা ছাবরা। দেবযানীকে জেরার পরে সেই রূপসীর খোঁজেই এখন তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। তাদের দাবি, সম্প্রতি নিশার কাছেও সংস্থার বড় অঙ্কের টাকা রেখেছিলেন সুদীপ্ত। দেবযানী তা মেনে নিতে পারেননি। সারদা নিয়ে তোলপাড়ের শুরু ইস্তক সুদীপ্তর ছায়াসঙ্গিনী হিসেবে দেবযানীর নামই উঠে এসেছিল। কিন্তু জেরায় জানা গিয়েছে, নিশাকে ঘিরে ইদানীং দূরত্ব বেড়েছিল সুদীপ্ত-দেবযানীর।
সারদা কর্তা নিজেও নিশা আর দেবযানী, দু’জনের সঙ্গেই তাঁর ঘনিষ্ঠতার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। বেশ কিছু দিন ধরে নিশা নানা অছিলায় অনেক টাকা হাতিয়েছেন বলেও তদন্তকারীদের জানিয়েছেন সুদীপ্ত। পুলিশ জেনেছে, সুদীপ্তর সঙ্গে নিশার আলাপ হয় আসানসোলে। সেখানে রিয়েল এস্টেটের বিরাট ব্যবসা ছিল সারদার। সেই ব্যবসার কাজে গিয়েই নিশার সঙ্গে পরিচয় সুদীপ্তর। ক্রমে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। একটা সময়ে নিশাকে নিয়ে দুর্গাপুরের একটি হোটেলে প্রায়ই উঠতেন সুদীপ্ত। পরে ওই মহিলাকে সল্টলেকে একটি ফ্ল্যাট কিনে দেন তিনি। গত মাস কয়েক ধরে অবশ্য নিউটাউনের একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে থাকতে শুরু করেছিলেন নিশা। সেই ফ্ল্যাটটিও কেনা হয় সারদারই টাকায়। পুলিশ যদিও ওই দু’টি ফ্ল্যাটে গিয়ে নিশার খোঁজ পায়নি। তল্লাশি শুরু করেছে বিধাননগর কমিশনারেট।
দেবযানী, সুদীপ্ত এবং সারদার অন্য কর্মীদের জেরা করে পুলিশ যা তথ্য পেয়েছে তা থেকে মনে করা হচ্ছে সুদীপ্ত আর নিশার সাম্প্রতিক সম্পর্কের ছায়া পড়তে শুরু করেছিল সংস্থার কাজকর্মেও। সুদীপ্তর হয়ে সংস্থার টাকাকড়ি সামলানোর কাজটা দেবযানীই করতেন। নিশা সংস্থার কেউ না হওয়া সত্ত্বেও সুদীপ্ত তাঁর কাছে টাকা রাখায় ক্ষুব্ধ হন দেবযানী। সারদার কাজকর্মের ব্যাপারে তাঁর যে একান্ত অধিকারের জায়গাটুকু ছিল, তাতে হাত পড়ছে বলে ইদানীং মনে হতে থাকে তাঁর।
সেই অধিকার এতটাই ছিল যে, সারদা প্রধানের ব্যক্তিগত ই-মেলের পাসওয়ার্ড পর্যন্ত জানতেন দেবযানী। সারদার কর্মীদের যাবতীয় ই-মেল সুদীপ্তর হয়ে তিনিই পাঠাতেন। গত ১৪ এপ্রিলও সুদীপ্তর নিজস্ব আইডি থেকে সারদার কর্মীদের কাছে একটি মেল আসে। তাতে বলা হয়, “মার্চ পর্যন্ত সারদার বিভিন্ন সংস্থার কর্মীদের বকেয়া বেতন ১৫ এপ্রিল দেওয়ার কথা ছিল। তা স্থগিত করে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে দেওয়া হবে।” সারদার মহিলা কর্মীদের কথায়, মেলগুলি দেবযানীরই করা। কারণ সুদীপ্ত নিজে মেল করতে সড়গড় ছিলেন না। দেবযানীর কথা থেকে পুলিশের সন্দেহ, দেবযানীর এই সাম্রাজ্যেই নিশা ইদানীং হাত বাড়াতে এগিয়েছিলেন। ক্ষমতা দখলের জন্য দুই নারীর মধ্যে কার্যত ঠান্ডা লড়াই শুরু হয়ে গিয়েছিল।
জেরায় দেবযানী দাবি করেছেন, ১০ এপ্রিল সুদীপ্ত যখন কলকাতা ছেড়ে পালিয়ে যান, তখন সঙ্গে ছিলেন নিশাই। ১৩ এপ্রিল রাঁচি থেকে গাড়িচালক বাপির সঙ্গে নিশাকে কলকাতায় ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ অবশ্য এই দাবির সত্যতা নিয়ে নিশ্চিত নয়। সুদীপ্তর মহিলা ব্রিগেডের কয়েক জন পদস্থ কর্মীকেও তাই জেরা করা হচ্ছে। তাঁদেরই এক জন শুক্রবার যা বলেছেন, তাতেও সুদীপ্ত আর দেবযানীর মধ্যে ইদানীং ব্যবধান তৈরি হওয়ারই ইঙ্গিত মিলেছে। ওই কর্মী বলেছেন, “গত কয়েক বছর ধরে রাজ্য ও রাজ্যের বাইরে সমস্ত ব্যবসার কাজে সুদীপ্ত স্যারের সঙ্গে থাকতেন দেবযানী। কিন্তু ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে পরপর বেশ কয়েক বার সুদীপ্তর সঙ্গে দেবযানী বাইরে যাননি।” ওই কর্মীর দাবি, শেষ পাঁচ মাসে সংস্থার কাজে সুদীপ্ত যত বার পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম, লাটাগুড়ি এবং বিশেষত আসানসোল-দুর্গাপুরে গিয়েছেন, তত বার তিনিও ‘স্যারে’র সঙ্গে গিয়েছেন। কিন্তু কোনও বারই দেবযানীকে দেখেননি। নিশার সঙ্গে সম্পর্ক ঘিরে দূরত্ব বাড়াই এ সবের কারণ বলে মনে করছে পুলিশ।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.