অভিযোগ পেয়েও গত দেড় বছরেও এক ফেরার ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার কর্তাদের বিরুদ্ধে কোনও এফআইআর রুজু করেনি পুলিশ। এমনকী খোদ মুখ্যমন্ত্রীর দফতরও প্রতারিত আমানতকারী ও এজেন্টদের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরেও নেহাত প্রাপ্তিস্বীকার করে দায় সেরেছে। ফলে মুর্শিদাবাদ থেকেই বোস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড নামে ওই সংস্থার ২৫ কোটি টাকারও বেশি অর্থ নিয়ে ফেরার হয়েছে। সংস্থার প্রায় ১৬ হাজার এজেন্টের অনেকের এখনও গ্রামছাড়া। যারা গ্রামে রয়েছেন তাঁদের বাড়িতে টাকা চেয়ে নিত্যদিন চড়াও হচ্ছেন আমানতকারীরা। শুধু মুর্শিদাবাদেই প্রায় ২০ লক্ষ আমানতকারী প্রতারিত হয়েছেন ওই সংস্থার কাছে।
সারদা কাণ্ডের পর অবশ্য টনক নড়েছে পুলিশের। লালগোলা থানায় প্রতারক সংস্থার তিন মালিক দিব্যেন্দু বসু, তাঁর স্ত্রী এলিনা বসু ও মামা সঞ্জিত হালদারের বিরুদ্ধে ৪২০, ৪০৬, ১২০বি ও ৩৪ ধারায় মামলা রুজু করেছে গত সপ্তাহে।
পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “অভিযোগ পাওয়ার পরপরই তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ওই ফেরার সংস্থার তিন মালিকের বাড়ি হাওড়ার শিবপুরে। অভিযোগ পেয়েও পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর রুজু করেনি বলে যা শোনা যাচ্ছে তা-ও তদন্ত করে দেখা হবে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের চেষ্টা করা হবে।” |
বোস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড নামে ওই সংস্থার প্রধান কার্যালয় কলকাতার লেনিন সরণীতে। মূলত ২০০৭ সাল থেকে তাঁরা মুর্শিদাবাদ, বীরভূম ও মালদহে ব্যবসা শুরু করেন। প্রায় ২০টি শহরে অফিস খোলা হয়। মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ, বহরমপুর, লালগোলা, ধুলিয়ান, সাগরদিঘি, কান্দি ও ডোমকলে। ২০১১ সাল পর্যন্ত জেলায় প্রায় ১৬ হাজার এজেন্টের ২০ লক্ষ আমানতকারীর কাছ থেকে ২৫ কোটি টাকারও বেশি অর্থ তোলেন তাঁরা। ২০১১ সালের মে মাসে যখন আমানতকারীদের বিরাট অঙ্কের ম্যাচিউরিটির অর্থ ফেরতের সময় আসে তখনই জেলায় সমস্ত অফিস রাতারাতি গুটিয়ে ফেলে পালিয়ে যায় ওই সংস্থাটি। সংস্থার বহরমপুরের এজেন্ট সোমনাথ দাস বলেন, “চার বছর কয়েক লক্ষ টাকা তুলে দিই আমানতকারীদের কাছ থেকে। কিন্তু টাকা ফেরতের সময় অফিস গুটিয়ে পালিয়ে যায় তারা। আমানতকারীরা রোজ বাড়িতে চড়াও হচ্ছে। ভয়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। পকেট থেকে ৬২ হাজার টাকা মিটিয়েছি। বাকি টাকা কী করে দেব জানি না।” লালবাগের এক এজেন্ট সুদীপ্ত দত্ত আমানতকারীদের কাছ থেকে ১৩ লক্ষ সংগ্রহ করে জমা দেন। তিনি বলেন, “সংস্থা পাততাড়ি গুটিয়েছে। লোকজন টাকা চেয়ে বাড়িতে রোজ হানা দিচ্ছে। মানসম্মান নষ্ট হচ্ছে। জিয়াগঞ্জ থানায় ২০১১ সালের ১০ ডিসেম্বর লিখিত অভিযোগ জমা দিই। অভিযোগ গ্রহণ করলেও এফআইআর রুজু করতে রাজি হয়নি। পরে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে লিখিত অভিযোগ জানান আমানতকারী ও এজেন্টরা। মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে ২০১২-এর ১৭ জানুয়ারি অভিযোগের প্রাপ্তি স্বীকার (রসিদ নং ১২১৪) করলেও এ পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”
লালগোলার সারমান শেখ এই সংস্থার এজেন্ট। তিনি বলেন, “আমানতকারীরা রোজ বাড়িতে হানা দিচ্ছে। সংস্থার মালিকের শিবপুরের বাড়িতেও গিয়েছি। কাজ হয়নি। বাড়িতে কেউ নেই। তালাবন্ধ। লালগোলা থানায় নালিশ করেছি।” লালগোলার বাসিন্দা আমানতকারী ১ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা রেখেছিলেন। তিনি এখন দিশেহারা। তাঁর বক্তব্য, “পরিচিত এজেন্টকে বিশ্বাস করে টাকা জমা করি। এখন সংস্থার ঝাঁপ বন্ধ। এজেন্টের কাছ থেকে আশ্বাস ছাড়া কিছুই মিলছে না।” |