সরকারি খাতায়-কলমে তাঁরা ১৭ জনই মালদহ মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক। মেডিক্যাল কলেজ থেকে তাঁদের বেতনও হচ্ছে। কিন্তু হাসপাতাল সূত্রে খবর, ওই চিকিৎসকেরা মালদহে কোনও কাজ করছেন না। তাঁদের স্বাস্থ্য দফতরের তরফে কলকাতায়, বাঁকুড়া, ২৪ পরগনা, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, বোলপুর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে পঠনপাঠন ব্যাহত হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ।
মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ উচ্ছ্বল ভদ্র বলেন, “ওই চিকিৎসকেরা না থাকায় মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের অসুবিধা হচ্ছে ঠিকই। আমারও অসুবিধা হচ্ছে। তবে পুরোটাই সরকারি সিদ্ধান্ত। যেখানে যেখানে ওই ১৭ জনকে পাঠানো হয়েছে, সেখানে নিশ্চয়ই মালদহের থেকে বেশি অসুবিধা রয়েছে।”
বিষয়টি শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জেলার সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরী। তিনি বলেন, “এই ভাবে এক জায়গায় নিয়োগ করে অন্যত্র কাজ করানোটা বেআইনি। বাইরে কর্মরত মালদহ মেডিক্যাল কলেজের ১৭ জন শিক্ষক চিকিৎসকে তাড়াতাড়ি ফিরিয়ে আনা না হলে বিষয়টি মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার নজরে আনব।” কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, “অন্য হাসপাতালে যদি চিকিৎসক কম থাকে, তবে সেখানে রাজ্য সরকার চিকিৎসক নিয়োগ করছে না কে? মালদহ মেডিক্যাল কলেজকে বঞ্চিত করে অন্যত্র ওই চিকিৎসকদের কাজ করতে দেওয়া যাবে না। বিষয়টি আমি দেখছি।” কলেজ সূত্রের খবর, মেডিক্যাল কলেজে ১৩৪ জন শিক্ষক চিকিৎসক আছেন। এপ্রিল মাসে প্রথম সপ্তাহে দিল্লি থেকে মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া থেকে দুইজন প্রতিনিধি মেডিক্যাল কলেজ পরিদর্শন করতে এসেছিলেন। তাঁরা আসার আগে রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত ওই ১৭ জন চিকিৎসককে রাতারাতি মালদহ তুলে আনা হয়েছিল। কিন্তু এমসিআইয়ের প্রতিনিধিরা মালদহ ছাড়ার পরই ফের তাঁরা চলে যান বলে অভিযোগ। ওই চিকিৎসকদের মেডিক্যাল কলেজে অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, আরএমও-সহ বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধান হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছিল। তাঁরা অনেকেই বর্হিবিভাগে চিকিৎসাও করতেন।
এই প্রসঙ্গে জেলা রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের পযর্টন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী বলেন, “বিষয়টি আমার জানা ছিল না। রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আমি আলোচনা করব। ওই চিকিৎসকদের দ্রুত মালদহে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব।” কার্যত একই কথা বলেছেন মালদহের জেলাশাসক গোদালা কিরণ কুমার। তাঁর বক্তব্য, “ওই চিকিৎসকদের তালিকা নিয়ে স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গে কথা বলছি।” তৃণমূল কংগ্রেসের চিকিৎসক সংগঠন অবশ্য রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের পক্ষেই দাঁড়িয়েছেন। সংগঠনের জেলা সম্পাদক বিমল কুমার পন্ডিত বলেন, “মালদহে মেডিক্যাল কলেজের ওই সরকারি সিদ্ধান্তে কোনও ক্ষতি হবে না। রাজ্যের অন্য হাসপাতাল এবং অন্য মেডিক্যাল কলেজে নিশ্চয়ই এর চেয়ে বেশি সঙ্কট দেখা দেওয়ায় তাঁদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।”
মেডিক্যাল কলেজের কয়েকজন ছাত্রছাত্রী জানিয়েছেন, ওই শিক্ষকদের অভাবে অনেক ক্লাস মার খাচ্ছে। পঠনপাঠন চললেও তা সঠিক ভাবে হচ্ছে না। তবে ভয়ে কেউ মুখ খুলছে না। আর ওই ১৭ জন চিকিৎসকের কয়েকজন জানান, মালদহ মেডিক্যাল কলেজে পড়ানো, চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিয়ে সবাই এসেছিলেন। ফের রাজ্যের নানাপ্রান্তে কার্যত জোর করেই পাঠানো হয়েছে। |